বুধবার, ১লা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বিজয়নগরে ডিপ্লোমা কৃষি কর্মকর্তাদের বৈষম্য অবসানের দাবি

কাজী আল আমিন, বিজয়নগর(ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিজয়নগর উপজেলার কৃষি অফিসের কর্মচারীরা গণমাধ্যমের মাধ্যমে বর্তমান সরকারের কাছে যৌক্তিক দাবি আদায়ে, সকলের পক্ষে উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার নুর আলম এর প্রেরণকৃত আবেদন।

বাংলাদেশের প্রায় ১৪ হাজার ৫০০ ডিপ্লোমা কৃষিবিদ উপসহকারী কৃষি অফিসার/সমমানধারীগণ কৃষকের পাশে থেকে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নের মুখপাত্র হিসেবে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। তাদের জীবন ও জীবিকার অন্যতম মাধ্যম হলো কৃষি। কৃষি অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কৃষি জমি কমে যাওয়া, জনসংখ্যার বৃদ্ধি ইত্যাদি চ্যালেঞ্জের কারণে সীমিত জমি থেকে সর্বোচ্চ ফলন পেতে প্রয়োজন প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন, স্থানীয় সমস্যা চিহ্নিত করে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আধুনিক টেকসই প্রযুক্তি কৃষকদের নিকট হস্তান্তর করা আর এ সকল কার্যক্রম কৃষকের সাথে থেকে বাস্তবায়ন করে আসছেন উপসহকারী কৃষি অফিসার/সমমানধারীগণ।

দেশ স্বাধীনতার প্রাক্কালে দেশের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে ০৭ (সাত) কোটি। এখন সেই জনসংখ্যা ১৭ কোটির বেশি হলেও দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। নগরায়ন, শিল্পায়ন ও নতুন নতুন ভৌত অবকাঠামো রাস্তাঘাট বিনির্মানের ফলে প্রতি বছর দেশ থেকে ১% হারে কৃষি জমি বিলীন হচ্ছে সাথে রয়েছে বৈষ্ণিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং জলবায়ুর ক্রমপরিবর্তন।

এসব প্রতিকুলতাকে পাশ কাটিয়ে সবচেয়ে বেশি উন্নতি সাধিত হচ্ছে কৃষি সেক্টরে। কৃষি বিজ্ঞানীদের গবেষণালব্দ উদ্ভাবিত ফসলের জাত, অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি বস্তুত কৃষি সম্প্রসারণের সাথে জড়িত উপসহকারী কৃষি অফিসার/সমমানধারীদের হাত ধরে বিস্তৃত হচ্ছে সকল শ্রেণীর কৃষকদের মাঝে। তৃণণমূল পর্যায়ে কৃষকদের সাথে প্রত্যক্ষভাবে কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণে কাজ করে যাচ্ছেন উপসহকারী কৃষি অফিসার/সমমানধারীগণ।

অন্যান্য কাজের মত কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণের কাজটি একেবারে সহজসাধ্য নয়, কারণ দেশে এখনও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কৃষকের শিক্ষার হার কম অথবা স্বল্প শিক্ষিত। এমতাবস্থায় এরকম শিক্ষার হার কম এবং স্বল্প শিক্ষা সম্পন্ন কৃষকের মাঝে তাদের নিজস্ব চিন্তা চেতনাকে বাদ দিয়ে নতুন নতুন কৃষি প্রযুক্তির অনুপ্রবেশ করানোটা বেশ কষ্ট সাধ্য। তাছাড়াও এমন কিছু জটিল প্রকৃতির কৃষক আছেন তারা কিভাবে সরকারী অথবা বেসরকারী চাকারজীবিদের হেনস্থা করা যায়। সেই চেষ্টায় মত্ত থাকেন আছে রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্নতা ও গ্রাম্য কোন্দল।

এসব সত্ত্বেও সকল নেতিবাছক ধ্যান ধারণাকে পিছনে ফেলে কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণসহ কৃষির উদ্ধৃত সমস্যা সমাধানে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন মাঠ পর্যায়ে কর্মরত উপসহকারী কৃষি অফিসার/সমমানধারীগণ। অথচ ভাগ্যের নির্মর পরিহাস তারা যে পদে যোগদান করেন ঠিক একই পদ থেকে অবসর গ্রহণ করতে হয়। তাদের নেই কোনো পদোন্নতির ব্যবস্থা। অথচ একই বোর্ড থেকে সমমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীগণ ৫০% পদোন্নতিসহ ২য় শ্রেনীর কর্মকর্তার সকল সুযোগ/সুবিধা ভোগ করছেন।

আরো আশ্চাজনক বিষয় হচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা-২০১৯ এ ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের ৫০% পদোন্নতির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে কিন্তু ডিপ্লোমা কৃষিবিদ উপসহকারী কৃষি অফিসার/সমমানধারীদের পদোন্নতির কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। সরকার আসে সরকার যায় কিন্তু উপসহকারী কৃষি অফিসার/সমমানধারীগণের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়না।

একই বিভাগের তথা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে একজন কর্মকর্তা ৯ম গ্রেডে যোগদান করে পদোন্নতির মাধ্যমে তারা ১ম গ্রেড পর্যন্ত চলে যায় আবার একজন চতুর্থ গ্রেডে যোগদান করে তিনি পদোন্নতির মাধ্যমে ১০ম গ্রেড পর্যন্ত চলে যান। কিন্তু ১০ম গ্রেডের উপসহকারী কৃষি অফিসার/সমমানধারীগণ ১০ গ্রেড থেকে চাকুরী শেস করে বিদায় নিতে হয়। এ রকম বৈষম্য আর কোনো বিভাগে আছে কিনা জানা নেই। তাছাড়াও আমরা ডিপ্লোমা কৃষিবিদ উপসহকারী কৃষি অফিসার/সমমানধারীগণ আরো বিভিন্ন বৈষম্যের শিকার যা তাদের ন্যায্য দাবী তা নিম্নে তুলে ধরা হলো।

১। ডিপ্লোমা কৃষিবিদ উপসহকারি কৃষি অফিসার/সমমানদের বেতন স্কেল ১০ম গ্রেডে উন্নিতকরণ ও ২য় শ্রেণী পদমর্যাদার জিও টি গেজেট আকারে প্রকাশ করা। (অর্থ মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং ০৭.১৫৪.০১৫.১২.০১.০০৬.২১২- ৪৭৪ তারিখ ১৮-১১-১৮ইং মোতাবেক সুস্পস্ট নির্দেশনা রয়েছে)

২। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা/কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা ২০১৯ সংশোধন করে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের ন্যায় ডিপ্লোমা কৃষিবিদ উপসহকারি কৃষি অফিসার/সমমানদেরকে ৫০% পদোন্নতির মাধ্যমে কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার হিসাবে পদায়ন করা।

৩। সকল ডিপ্লোমা কৃষিবিদ উপসহকারি কৃষি অফিসার/সমমানদেরকে নিয়োগকালীন ডিপ্লোমা নার্সদের ন্যায় একটি অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট প্রদান করা।

৪। নির্ধারিত ভ্রমন ভাতা ১০০০ টাকার পরির্বতে ৫০০০ টাকা নির্ধারণ করা।

৫। সকল উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা/ সমমানদেরকে মটর সাইকেল প্রদান করা।

৬। প্রতি ইউনিয়নে অফিস কাম আবাসনের ব্যবস্থা করা।

৭। চার্জ ব্লকের অতিরিক্ত দায়িত্বভার ভাতা প্রদান নিশ্চিত করা।

৮। উপজেলা পর্যায়ের সকল কৃষক প্রশিক্ষণে ডিপ্লোমা কৃষিবিদ উপসহকারি কৃষি অফিসার/সমমানদেরকে প্রশিক্ষক হিসেবে রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা।

৯। ২০১৫ সালের গঠিত রিভিজিট পূণঃসংশোধন করে পূর্বের ন্যায় অঞ্চল, জেলা ও উপজেলা কার্যালয়ে এলআর পদ সৃষ্টি করা।

১০। সকল পৌরসভায় পূর্বের ন্যায় ৩টি ব্লক রেখে ডিপ্লোমা কৃষিবিদ উপসহকারি কৃষি অফিসারদের পদায়নের ব্যবস্থা করা।

১১। সকল কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এ বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ করা।

১২। ডিপ্লোমা কৃষিবিদ উপসহকারি কৃষি অফিসার/সমমানদেরকে নিজ জেলার বাহিরে পদায়ন না করা।

১৩। আলাদা বিশ্ব বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে কৃষি ডিপ্লোমা গ্রহণ শেষে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করা।

উপরোক্ত বৈষম্যগুলো নিরসন করার জন্য ডিপ্লোমা কৃষিবিদ উপসহকারি কৃষি অফিসার/সমমানধারীগণ সংশ্লিস্ট নিতিনির্ধারনী মহলের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, , বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ