রবিবার, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

ইসরায়েলি হামলায় মৃত্যুর আগে যা বলে গেলেন গাজার আলোকচিত্রী ফাতিমা

যায়যায়কাল ডেস্ক: নাম তার ফাতিমা হাসুউনা। ২৫ বছর বয়সের ফাতিমা পেশায় আলোকচিত্রী। বাড়ি ফিলিস্তিনের গাজায়। ইসরায়েলি নৃশংসতায় মৃত্যু যেন সব সময় ফাতিমার বাড়ির দোরগোড়ায় অপেক্ষা করে। জীবনের মায়া তুচ্ছ করে গাজাবাসীর ওপর চালানো ইসরায়েলি নৃশংসতা ক্যামেরায় ধরে রেখেছিলেন তিনি। তা–ও এক দিন, দুই দিন নয়; প্রায় ১৮ মাস ধরে।

এর মধ্যে ইসরায়েলি হামলায় নিজের বাড়ি গুঁড়িয়ে যেতে দেখেছেন ফাতিমা। বাস্তুচ্যুত হতে দেখেছেন গাজার অগুনতি মানুষকে। স্বজন হারানোর বেদনা বয়ে বেড়াতে দেখেছেন অনেককেই। এমনকি ফাতিমা নিজেও ইসরায়েলি নৃশংসতায় নিজের পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছেন। এবার ইসরায়েলি হামলায় নিজেও প্রাণ হারালেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাতিমা লিখেছিলেন, ‘যদি আমি মারা যাই, তাহলে নিজের আলোড়িত মৃত্যুই চাই।’ আরও যোগ করেন, ‘আমি শুধু একটা ব্রেকিং নিউজ হতে চাই না। কোনো দলের সদস্য হয়ে মারা যেতে চাই না। আমি এমন একটি মৃত্যু চাই, যাতে পুরো বিশ্ব তা জানতে পারে। কালজয়ী হয়ে থাকে। কোনো সময় বা স্থান দিয়ে সেটা চাপা দেওয়া যাবে না।’

মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে চাওয়া ফাতিমার ভাগ্যে সেটাই হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ছিল তার বিয়ের দিন। এর আগের দিন অর্থাৎ, গত বুধবার গাজার উত্তরাঞ্চলে তার বাড়িতে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান থেকে বোমা ফেলা হয়। বোমার আঘাতে নিহত হন ফাতিমা। নিহত হন তাঁর পরিবারের ১০ জন সদস্য। তাদের মধ্যে ফাতিমার অন্তঃসত্ত্বা বোনও রয়েছেন।

যদিও ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করেছে, হামাসের সদস্যদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে সেই হামলা চালানো হয়েছিল। হামাসের ওই সদস্যরা ইসরায়েলের সেনা ও বেসামরিক মানুষদের ওপর হামলায় জড়িত ছিলেন।

ফাতিমা নিহত হওয়ার মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে ঘোষণা করা হয়েছিল, গাজায় তার জীবন ও কাজের ওপর আলোকপাত করে বানানো একটি তথ্যচিত্র কানের সমান্তরালে ফরাসি একটি স্বাধীন চলচ্চিত্র উৎসবে মুক্তি দেওয়া হবে।

ইরানি পরিচালক সেপিদেহ ফারসি ওই তথ্যচিত্র বানিয়েছেন। এর নাম ‘পুট ইয়োর সোল অন ইয়োর হ্যান্ড অ্যান্ড ওয়াক’। এতে ফাতিমা ও সেপিদেহ–এর মধ্য ভিডিও কথোপকথন আছে। মৃত্যু পরোয়ানা মাথায় নিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের প্রাত্যহিক জীবনের চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এ বিষয়ে সেপিদেহ বলেন, ‘এই তথ্যচিত্রে ফাতিমার হাসি, কান্না, আশা ও হতাশার প্রকাশ তুলে ধরেছি।’

গাজার সাংবাদিক মিকদাদ জামেল সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তার (ফাতিমা) তোলা ছবি দেখুন। লেখাগুলো পড়ুন। ফাতিমা গাজাবাসীর নিত্যদিনের জীবনযাপনের ও এখানকার শিশুদের যুদ্ধের সময়কার সংগ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী। নিজের তোলা ছবিতে ক্যামেরার লেন্স দিয়ে তিনি সেসব টুকে রেখেছেন।’

ফাতিমার মৃত্যুর আগে গাজার অধিবাসী ফিলিস্তিনি কবি হায়দার আল–ঘাজালি ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্ট দিয়েছেন। তাতে এই কবি লিখেন, মারা যাওয়ার পর তাকে নিয়ে একটি কবিতা লেখার অনুরোধ করে গেছেন ফাতিমা।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ