যায়যায়কাল ডেস্ক: ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, রাজধানী তেহরান, খুজিস্তান ও ইলাম প্রদেশের বিভিন্ন স্থাপনায় ইসরায়েল যে হামলা চালিয়েছে তা মারাত্মকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হামলা ব্যর্থ করে দিতে সক্ষম হয়েছে। তবে তারপরও কিছু ক্ষেত্রে সামান্য ক্ষতি হয়েছে।
ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তেহরান ও আশপাশের অধিবাসীরা বিস্ফোরণের যেসব শব্দ শুনতে পেয়েছেন সেগুলো ছিল আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সক্রিয় হয়ে ওঠার শব্দ এবং তেহরানের কোনো লক্ষ্যবস্তুতে বড় ধরনের কোনো আঘাত হানার খবর সঠিক নয়।
ইরানের ওয়াকিবাহল সূত্র বার্তা সংস্থা তাসনিমকে বলেছে, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, ইরান ইসরায়েলি আগ্রাসনের জবাব দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। ইরান নিজের ওপর যেকোনো ধরনের আগ্রাসনের জবাব দেয়ার অধিকার সংরক্ষণ করে। নিঃসন্দেহে ইসরায়েল যেকোনো হামলার যথোপযুক্ত জবাব পাবে।
ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা ইরানের রাজধানী তেহরান ও নিকটবর্তী কারাজ শহরে ইরানের কয়েকটি সামরিক স্থাপনায় ‘প্রতিশোধমূলক হামলা’ চালিয়েছে।
হামলায় ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান, জ্বালানি সরবরাহকারী বিমান ও গোয়েন্দা বিমান অংশ নিয়েছে বলে দাবি করেছে তেল আবিব। তবে তেহরান বলেছে, ইরানের আকাশসীমার বাইরে থেকে বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে।
রাজধানী তেহরানের অধিবাসীরা স্থানীয় সময় শনিবার ভোর রাত ২টার দিকে এই নগরীর আশপাশে বিকট শব্দ শুনতে পেয়েছেন। ইরানের একটি নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, এসব শব্দ ছিল ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সক্রিয় হওয়ার শব্দ এবং এই ব্যবস্থা সফলতার সঙ্গে কাজ করেছে।
ইসরাইলের সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেছেন, গত কয়েক মাস ধরে ইরান যেসব হামলা চালিয়েছে তার জবাবে ইরানের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁত হামলা চালানো হয়েছে। তিনি দাবি করেন, কয়েক দফায় এ হামলা চালানো হয়েছে এবং হামলা শেষে তার ভাষায় ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো তাদের ঘাঁটিতে ফিরে গেছে।
এদিকে ইরানের রাজধানী তেহরানসহ সারাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তেহরানের অধিবাসীরা সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে যার যার কর্মস্থলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সকল স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস নির্ধারিত সময়ে শুরু হচ্ছে। শুধুমাত্র ইরানের সকল বিমানবন্দরের সকল ফ্লাইট সাময়িক সময়ের জন্য বাতিল করা হয়েছে।
ইরানের বার্তা সংস্থা ফার্স জানিয়েছে, রাজধানী তেহরানের পশ্চিম ও দক্ষিণে অবস্থিত কয়েকটি সামরিক ঘাঁটিতে হামলা হয়েছে। মার্কিন নিউজ চ্যানেল সিবিসি দেশটির নিরাপত্তা সূত্রগুলোর বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ইরানের সামরিক স্থাপনায় হামলা হয়েছে। কোনো পারমাণবিক বা তেল স্থাপনায় হামলা হয়নি। এ ছাড়া, হামলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অংশ নেয়নি।
ইহুদিবাদী ইসরায়েলের হাতে ইরানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন, তেল আবিবের হামলায় হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া, হিজবুল্লাহ নেতা সাইয়্যেদ হাসান হাসান নাসরুল্লাহ, আইআরজিসি কমান্ডার সাইয়্যেদ আব্বাস নিলফোরুশনের শাহাদাত এবং লেবানন ও ফিলিস্তিনের নিরপরাধ নারী, পুরুষ ও শিশুদের রক্তপাতের বদলা নিতে ইরান গত ১ অক্টোবর ইসরায়েলের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে অন্তত ২০০ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে।
এসব হামলায় ইসরায়েলি ঘাঁটিগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও তার সঠিক চিত্র প্রকাশ করেনি তেল আবিব। ইহুদিবাদী ইসরায়েল ইরানের ওই হামলার জবাব দেয়া হবে বলে হুমিক দিয়েছিল এবং শনিবার সকালে দৃশ্যত সে হুমকি বাস্তবায়ন করল।