যায়যায়কাল প্রতিবেদক: কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে আজ মঙ্গলবার লন্ডন যাচ্ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। জটিল রোগীদের দীর্ঘ দূরত্বে স্থানান্তরের জন্য অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামে সজ্জিত এয়ারবাস এ৩১৯ মডেলের উড়োজাহাজটি ইতোমধ্যেই ঢাকা পৌঁছেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একজন কর্মকর্তা সোমবার সন্ধ্যায় বাসসকে বলেন, বিমানটির সুনির্দিষ্ট বিবরণ নিরাপত্তার কারণে প্রকাশ করা হচ্ছে না। এটি এয়ারবাস এ৩১৯ মডেলের উড়োজাহাজ।
কাতারের রাজপরিবারের মালিকানাধীন এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি আজ মঙ্গলবার রাত ১০টায় খালেদা জিয়াকে নিয়ে লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবে। জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের দূরপাল্লার যাত্রার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা এই উড়োজাহাজে যুক্ত করা হয়েছে।
উড়োজাহাজের উন্নত মেডিক্যাল প্রযুক্তি: এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম এ৩১৯ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের উন্নত চিকিৎসা সক্ষমতার বিস্তারিত জানান। তিনি এটাকে ফ্লাইং ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) হিসেবে বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, ‘এই উড়োজাহাজটি জরুরি অবস্থায় সর্বাধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তিতে সজ্জিত, যা ট্রানজিটের সময় রোগীর নিরবচ্ছিন্ন যত্ন নিশ্চিত করে।’
নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারবাসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ৩১৯ মডেলের এই উড়োজাহাজে ভেন্টিলেটর, ডিফিব্রিলেটর, ইনফিউশন পাম্প ও উন্নত কার্ডিয়াক মনিটর রয়েছে।
পাশাপাশি যেকোনো ধরনের জরুরি পরিস্থিতির জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা উপকরণ সংরক্ষণের জন্যেও এতে আলাদা জায়গা রয়েছে।
এই উড়োজাহাজে চিকিৎসা কর্মীদের নির্বিঘ্ন চলাচলের সুবিধা ছাড়াও জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসাসেবা দেওয়া যাবে।
রোগীদের জন্য বিশেষায়িত ডিজাইন: প্রথাগত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের তুলনায়, এ৩১৯ এর প্রশস্ত কেবিনে চিকিৎসা কর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে।
কাস্টমাইজড স্ট্রেচার, রোগীর ব্যক্তিগত জোন ও পরিবারের সদস্য বা বিশেষজ্ঞদের জন্য আলাদা আসনের ব্যবস্থা রয়েছে এখানে।
এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি পরিচালনা করেন কাতারের রয়্যাল মেডিক্যাল ইউনিটের একটি চিকিৎসক দল, যেখানে চারজন চিকিৎসক ও প্যারামেডিক অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। তারা যাত্রার সময় কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট থেকে শুরু করে ট্রমা পর্যন্ত জরুরি অবস্থাগুলি দক্ষতার সঙ্গে সামাল দিতে সক্ষম।
আরাম ও সুরক্ষার বিশেষ ব্যবস্থা: নির্মাতা এয়ারবাসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ৩১৯ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স উন্নত ক্লাইমেট কনট্রোল ব্যবস্থা ও শব্দনিরোধক প্রযুক্তি ব্যবহার করে যাত্রার সময় রোগীর আরাম নিশ্চিত করা হয়।
এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স থেকে চিকিৎসকরা বিশ্বের অন্য যেকোনো জায়গায় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ততক্ষণাৎ যোগাযোগ করতে পারেন।
এ ছাড়াও, চাপযুক্ত কেবিন অক্সিজেনের মাত্রা অনুকূল রাখে, যা শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স মেডিকেল এভিয়েশনে নতুন যুগের সূচনা করেছে। এতে আর্থিকভাবে সামর্থবান গুরুতর অসুস্থ রোগীরা উন্নত চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।
এয়ারবাসের দাবি, উন্নত এভিয়েশন প্রযুক্তির সঙ্গে চিকিৎসা অভিজ্ঞতার সন্নিবেশ ঘটিয়ে এই উড়োজাহাজটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সেবার নতুন মানদণ্ড তৈরি করেছে। এটি নিশ্চিত করেছে, জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসার জন্য কোনো দূরত্বই সক্ষমতার বাইরে নয়।
দীর্ঘ দূরত্বে ওড়ার সক্ষমতা: বেশি পরিমাণে জ্বালানি নিতে সক্ষম এ৩১৯ দীর্ঘ দূরত্বের ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারে, যা এক মহাদেশ থেকে আরেক মহাদেশে রোগী পরিবহনের জন্য আদর্শ। ছোট রানওয়েতে এবং অপেক্ষাকৃত দুর্গম এলাকাতেও অবতরণ করতে সক্ষম এই উড়োজাহাজ।
খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা: এক ব্রিফিংয়ে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বেগম জিয়া আজ মঙ্গলবার রাত ১০টায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রওনা হবেন।
তিনি জানান, ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে দোহা হয়ে লন্ডনের হিথরো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবে।
কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কথা জানার পর এই বিশেষ উড়োজাহাজটি পাঠিয়েছেন।
ডা. হোসেন আরও জানান, এই ফ্লাইটে খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের ছয় সদস্যও তার সঙ্গে থাকবেন।
৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, কিডনির সমস্যাসহ নানা স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছেন।