কুবি প্রতিনিধি : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ইংরেজি বিভাগের এক শিক্ষককে সহকারী অধ্যাপক পদে স্থায়ী না করে বাইরের প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগটি করেছেন স্থায়ী পদ থেকে বঞ্চিত ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক (আপগ্রেডেড) মোহাম্মদ আকবর হোসেন।
গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর দেয়া ‘ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা এবং ‘অন্যায়’ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা প্রসঙ্গে দেয়া ইমেইলে দেয়া এক চিঠিতে তিনি এই অভিযোগ আনেন।
আকবর হোসেন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইয়নিভার্সিটিতে পিএইচডি প্রোগ্রামে অধ্যয়নরত আছেন। রেজিস্ট্রার বরাবর দেয়া তার আবেদনপত্র থেকে জানা যায়, মোহাম্মদ আকবর হোসেন বর্তমানে শিক্ষা ছুটি নিয়ে পিএইচডি প্রোগ্রামে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইয়নিভার্সিটিতে আছেন। এর আগে তিনি ২০১৩ সালের ১ জুলাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন এবং ২০১৬ সালে সহকারী পদে আপগ্রেডেড হন। ২০২২ সালের ২ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ‘সহকারী অধ্যাপক’ স্থায়ী পদের জন্য দরখাস্ত আহ্বান করা হলে সহকারী অধ্যাপকের স্থায়ী পদের জন্য ২১ নভেম্বর আবেদন করেন।
আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ১৮ এপ্রিল বোর্ড ডাকা হয়। সেই নিয়োগ বোর্ডেও পেশাদারিত্ব দেখা যায়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশনের। প্রায় দুই ঘন্টা দেরিতে বোর্ডটি শুরু হয়। এই বোর্ডের সিদ্ধান্ত প্রায় দেড় বছরেও আকবর হোসেনকে জানাননি প্রশাসন।
দেশের বাইরের ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসায় পাপ করেছেন কিনা এই নিয়ে দ্বিধা প্রকাশ করে আবেদনপত্রে তিনি লিখেছেন, নানা সূত্রমতে আমি জানতে পেরেছি, বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে আমাকে বাদ দিয়ে বাইরে থেকে সম্পূর্ন নতুন একজনকে নিযোগ দেয়া হয়েছে। সিলেকশন বোর্ড এবং সিন্ডিকেটের এমন সিদ্ধান্ত আমাকে হতবাকই শুধু করেনি, করেছে সংক্ষুব্ধ। বারবার মনে হয়েছে, আমেরিকার মতো উন্নত দেশের একটি নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করতে এসে আমি কি কোন “পাপ” করেছি, যার জন্য আমাকে শাস্তি পেতে হচ্ছে। সিলেকশন বোর্ডের এমন সিদ্ধান্ত সম্পূর্ন বিধিবহির্ভূত এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইন ও নর্মসের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
তাকে স্থায়ী না করার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত প্র্যাকটিস ভাঙা হয়েছে বলে তিনি চিঠিতে উল্লেখ করে লিখেন, কুবির (এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের) প্রচলিত প্র্যাকটিস হল- স্থায়ী পদ সৃষ্টি হলে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে বিভাগে যিনি অস্থায়ী (আপগ্রেডেড) পদে যিনি আছেন তাকে স্থায়ী করা। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে প্রশাসন যা করল তা শুধু যে “অন্যায়” তা নয়, এটি অভূতপূর্ব। সুস্পষ্টত, আমাকে আমার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এমতাবস্থায়, আশা করি, আপনি আমার মানসিক অবস্থার কথা আঁচ করতে পারছেন। আপনি আমেরিকার কঠিন শিক্ষাব্যবস্থায় পিএইচডি’র কোর্সওয়ার্ক ও গবেষণার চাপের কথা হয়ত শুনে থাকবেন। হয়ত সেকারনেই একাডেমিক জগতে উত্তর আমেরিকার উচ্চশিক্ষাকে অন্য যেকোন দেশের থেকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। এসবের মধ্যে যখন নিজের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্যায় ও বিমাতাসুলভ আচরন পাই, তখন আমাদের মন ভেঙ্গে যায়। আশা করি, আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমার প্রতি যে ‘অন্যায়’ করা হয়েছে তা পুনর্বিবেচনা করে আমার স্থায়ী পদ আমাকে ফিরিয়ে দেবেন। এতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাম্প্রতিক সময়ে যে-ভাবমূর্তির সংকটে পড়েছে, তার কিছু হলেও লাগব হবে ব মলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।।
এমন কোন চিঠি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আমিরুল হক চৌধুরী পেয়েছে কিনা জানতে চেয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে হলে তিনি ফোন ধরেননি।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক (আপগ্রেডেড ) মোহাম্মদ আকবর হোসেন বলেন, ‘এ রকম ঘটনা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনো ঘটেনি। প্রচলিত আইন ও নর্মসের সুস্পষ্ট লক্ষণ। সিনিয়রিটির ভিত্তিতে বিভাগের স্থায়ী পদ আমি প্রাপ্য ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন তাদের এই ভুল শুধরে নেয় এবং আমাকে যেন আমার প্রাপ্য সম্মান দেয়া হয়।’
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, ‘একটি উদীয়মান বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে নিয়মনীতিগুলো ছিল সেগুলো এই দুই বছরে বর্তমান উপাচার্য শুধু ভেঙেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টি চূড়ান্ত অনিয়ম, অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। ওনাকে এখানে যতদিন রাখা হবে ততদিন তিনি নিয়ম ভাঙায় ও অনিয়মে মশগুল থাকবেন।’
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, ‘ এটা ওপেন পোস্ট ছিল। সেখানে যে কেউ এপ্লাই করতে পারে। বোর্ড যোগ্যতা দেখে নিয়োগ দিয়েছে। এই নিয়োগে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে। কেউ আপত্তি তুলেনি।’