মাহমুদ আলহাছান: বাংলাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা ও কারিকুলাম নিয়ে পরীক্ষণ ও পর্যবেক্ষণের শেষ নেই। স্বাধীনতার পর থেকে বেশ কয়েকটি কমিশন গঠিত হয়েছে কিন্ত তারা কেউই রাজনৈতিক চিন্তা দর্শনের উপরে উঠে দেশের প্রকৃত সামাজিক প্রেক্ষাপটের ভিত্তিতে একটি সর্বজনগ্রাহ্য শিক্ষা ব্যবস্থার রুপরেখা তুলে ধরতে পারে নাই। ফলে কোনো কমিশনের সুপারিশই কখনো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হতে পারেনি। পরবর্তী রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এসে আগের সুপারিশ বাতিল করে নতুন কারিকুলাম প্রনয়ণ ও বাস্তবায়ন করেছে। এর ফলে কারিকুলামের ভিত্তিতে দেশে এখন বেশ কয়েকটি প্রজন্ম বিরাজ করছে। যাদের একেকজনের শিক্ষার ধারণা ও প্রায়োগিক চিন্তা একেক রকম।
কিন্ত সকল রাজনৈতিক দল একটি জায়গায় এসে বিস্ময়করভাবে একমত তা হচ্ছে- বেসরকারি শিক্ষা ও বেসরকারি শিক্ষকদের প্রতি আচরণ।
একটি দেশে একই কারিকুলামে পরিচালিত একটি শিক্ষাব্যবস্থায় সরকারি ও বেসরকারি দু'ধরনের ব্যবস্থা পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ অনুসরণ করে। আবার তাদের মধ্যে সরকারি সুযোগ-সুবিধা ও জীবন ধারণ পদ্ধতিতে আকাশ-জমিন ফারাক। কিন্ত তাদের থেকে কাজ আদায়ের ক্ষেত্রে কোনো পার্থক্য নেই। শিক্ষাগত যোগ্যতা, প্রশিক্ষণ, পাঠদান পদ্ধতি, তিরস্কারের ব্যবস্থা সবকিছুই এক। শুধু পুরস্কারের বেলায় আলাদা।
বিশেষতঃ এনটিআরসিএ'র মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সাথে সরকারের চরম বৈষম্যমূলক আচরণ পুরো শিক্ষক সমাজকে হতাশাগ্রস্ত করে তুলছে। মেধাবিরা আর কেউ এ পেশায় আগ্রহী হচ্ছে না। ফলে সরকারের সকল উন্নয়ন ভাবনা পিছিয়ে পড়ছে।
এনটিআরসিএ'র মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত একজন শিক্ষক প্রারম্ভিক বেতন পান মাত্র ১২ হাজার ৫০০ টাকা। বিএড সম্পন্ন করার পরে বেতন দাঁড়ায় ১৬ হাজার টাকায়। বাড়ি ভাড়া ১ হাজার টাকা ও চিকিৎসা ভাতা ১৫শ’ টাকা নির্ধারিত। এই টাকায় একজন স্নাতক সম্পন্ন করা ব্যক্তির তার পরিবারসহ আদৌ চলা সম্ভব কি-না- এ নিয়ে কোনো ভাবনা নেই।
সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক যে বিষয়টি এনটিআরসিএ থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জীবনে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তা হচ্ছে- দেশের এক প্রান্তের শিক্ষককে নিয়োগ দেয়া হয়েছে অন্য প্রান্তে। তারা না পারছে ঠিকমতো চাকরি করতে, না পারছে পরিবারের দায়িত্ব নিতে- এ যেন এক শাঁখের করাত।
জলঢাকার মেধাবি শিক্ষক নাহিদ পারভেজ পাবেল নিয়োগ পেয়েছেন কক্সবাজার জেলার নয়াপাড়া আলহাজ্ব নবী হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ে। জলঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে আসতেই তার ভাড়া লাগে ৩ হাজার টাকার বেশি।
তিনি আক্ষেপ করে এ প্রতিবেদকের কাছে বলেন, বেসরকারি বিদ্যালয়ে চাকরি নিয়ে অনেক বড় পাপ করে ফেলেছি। যে বেতন পাই তা দিয়ে নিজ এলাকায় কোনোভাবে জীবন ধারন করা সম্ভব হলেও জলঢাকা থেকে সুদূর কক্সবাজারে এসে তা সম্ভব নয়। এই টাকায় আমারই চলে না, আমার পরিবার চলবে কীভাবে? তিনি আরও জানান, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ট্রান্সফারের নিয়ম চালু না হলে চাকরি ছেড়ে দেব। আর পারছি না।
ফজলার রহমান চাকরি করেন মৌলভীবাজার জেলার সাটিয়াজুড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে। তিনি বলেন, জলঢাকা থেকে এখানে আসতে প্রায় ২ দিন সময় লাগে, ভাড়াও লাগে প্রায় ২ হাজার টাকা। তাই প্রায় ২ মাস হয় বাড়ি যাই না। লজ্জায় বাড়িতে ফোনও করতে পারি না। বাচ্চাদের আহাজারিতে বুক ফেটে যায়।
কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম রাহমানিয়া দাখিল মাদরাসার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন জলঢাকার শিক্ষক সফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আশা করেছিলাম হয়তো দ্রুতই ট্রানৃসফারের বিষয়টি চালু হবে তাই এখানে এসে যোগদান করেছিলাম। কিন্ত এ বিষয়ে সরকারের কোনো ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখতে পাচ্ছি না। আমার বোধ-হয় চাকরিই আর করা হবে না।
শিক্ষায় দৃশ্যমান ইতিবাচক পরিবর্তন ও উন্নয়নের প্রয়োজনেই বেসরকারী শিক্ষা জাতীয়করণ ও শিক্ষক বদলি দ্রুত কার্যকর করা উচিত বলে শিক্ষক সমাজ মনে করে।
সম্পাদক ও প্রকাশক :মোঃ আলামিনুল হক,নিবার্হী সম্পাদক :আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইসমাইল
যোগাযোগ :ফোনঃ +৮৮০২৫৭১৬০৭০০,মোবাইলঃ ০১৭১২৯৪১১১৬,Emails:jaijaikalcv@gmail.com
সম্পাদকীয় কার্যালয় : ১২০/এ, আর. এস. ভবন, ৩য় তলা, মতিঝিল, ঢাকা