রাজবাড়ী প্রতিনিধি : রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ায় চাঁদা তোলা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ফারুক সরদার (২৮) নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গুরুতর জখম অবস্থায় আলামিন শেখ (২৫) নামের আরেক যুবককে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শনিবার রাতে দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ফারুক দৌলতদিয়া ইউনিয়নের সোহরাব মণ্ডলপাড়ার পল্লী চিকিৎসক শহিদ সরদারের ছেলে। তিনি দৌলতদিয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের কর্মী ছিলেন বলে জানা গেছে। আলামিন যৌনপল্লির লক্ষ্মী বাড়িওয়ালির ছেলে।
এ ঘটনায় আজ রোববার দুপুরে ফারুকের স্ত্রী গোয়ালন্দ ঘাট থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। এতে একই গ্রামের রমজান ফকিরের ছেলে রিপন ফকিরসহ (৩০) সাতজনের নাম এবং অজ্ঞাতনামা চার থেকে পাঁচজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ববিরোধের জের ধরে ফারুককে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন তিনি।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রায় এক বছর আগে ফারুক ও রিপন যৌথভাবে বাহির চর দৌলতদিয়ায় মাটি উত্তোলনের ব্যবসা করতেন। ব্যবসায় ফারুকের প্রায় ৭০ হাজার টাকা রিপনের কাছে পাওনা ছিল। দৌলতদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মোহন মণ্ডলের দুই পক্ষ আত্মীয় হওয়ায় মীমাংসার চেষ্টা করে নিজে ব্যর্থ হন। এর পর থেকে রিপন ও ফারুকের মধ্যে বিরোধ বাড়তে থাকে।
৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে বিএনপির একটি পক্ষ আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছিল। সম্প্রতি সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আয়ুব আলীর যৌনপল্লির বাড়িতে খড়গুটি, তিনতাস, রামি নামের জুয়ার আসর বসায় পক্ষটি। আরেকটি পক্ষ পৃথক স্থানে জুয়ার আসর বসালে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়ে।
এ ছাড়া শারদীয় দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে দৌলতদিয়া রেলস্টেশন এলাকায় বসানো মেলা থেকে রিপন ও তার লোকজন চাঁদা তুললে ফারুক বাধা হয়ে দাঁড়ান। এ নিয়ে শনিবার রিপন মুঠোফোনে ফারুককে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। হুমকির জবাব দিতে শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফারুক লোকজন নিয়ে যৌনপল্লিতে রিপনের পান–সিগারেটের দোকানের সামনে গেলে রিপন ও তার লোকজন ধারালো ছ্যান দিয়ে ফারুকের মাথা, পিঠ, হাত-পায়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করেন। আলামিন এগিয়ে গেলে তাকেও কুপিয়ে জখম করেন। এ সময় যৌনপল্লিতে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়। রাত ১০টার দিকে স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ফারুককে মৃত ঘোষণা করেন।
আজ সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, যৌনপল্লিতে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। সবার চোখে–মুখে আতঙ্কের ছাপ ফুটে উঠেছে।
মুদিদোকানি দুলালী বলেন, ‘শনিবার রাতে বেচাকেনায় দোকানে ব্যস্ত ছিলাম। বেশ কয়েকজন পোলাপান রিপনের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা করে। কিছুক্ষণ পর সবাই চিৎকার চেঁচামেচি করে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। পরে জানতে পারি, ফারুককে কুপিয়ে মেরে ফেলেছে।’
ফারুকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ফারুকের স্ত্রী সুমী আক্তার বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। তিন বছর আগে ফারুকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের দুই বছর বয়সী একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। সুমি আক্তার বলেন, ‘আমার তো এখন সবই শেষ। ওরা আমার স্বামীকে মেরে ফেলেছে।’
ফারুকের বাবা স্থানীয় পল্লিচিকিৎসক শহিদ সরদার বলেন, ‘শনিবার বিকেলে সালিশ থেকে আমার ছেলে ফারুককে খুন করার হুমকি দেওয়া হয়। আমার ছেলেকে যারা খুন করেছে, যারা এই হত্যায় ইন্ধন দিয়েছে, তাদের সবার শাস্তি চাই।’
গোয়ালন্দঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘স্থানীয় একটি গ্রুপ যৌনপল্লিতে জুয়ার আসর বসালে আমরা দুই দফা ভেঙে দিয়েছি। জুয়া খেলাসহ স্থানীয় আধিপত্য বিস্তার এবং চাঁদার টাকা তোলা নিয়ে দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে ফারুককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।’