পারভেজ আলম আদেল, স্টাফ রিপোর্টার: সরাইল উপজেলার নিভৃত চুন্টা গ্রামে, সময়ের ধুলোয় ঢাকা পড়ে থাকা একটি প্রাচীন স্থাপনা আজও দাঁড়িয়ে আছে—নীরব সাক্ষী হয়ে, এক ঐতিহ্যের, এক গৌরবময় অতীতের।
এটি চুন্টার বিখ্যাত সেন পরিবারের আদি বাড়ি—যেখান থেকে উদিত হয়েছিলেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, এক মানবদরদী মহাপুরুষ— ড. অবিনাশ চন্দ্র সেন।
১২৭৬ বঙ্গাব্দের ১ আশ্বিন, এই ঐতিহ্যবাহী সেন পরিবারে জন্ম নেন অবিনাশ চন্দ্র সেন। ছাত্রজীবনে ছিলেন অতুলনীয় মেধাবী। ১৯১৯ সালে, যখন সমগ্র ভারতবর্ষ ব্রিটিশ শাসনের জালে বন্দি, তখন তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেন—যা ছিল এক যুগান্তকারী সাফল্য।
তাকে সবাই চিনত এক নামে—“দানবীর অবিনাশ”। কারণ তিনি শুধু জ্ঞানেই নয়, হৃদয়ে ধারণ করতেন সমাজসেবার দীপ্ত অঙ্গীকার। ড. অবিনাশ ছিলেন একাধারে সমাজসংস্কারক, দানবীর ও প্রতিষ্ঠান গড়ার কারিগর। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠা করেন “কৃষ্ণানন্দ দাতব্য চিকিৎসালয়”—সাধারণ মানুষের চিকিৎসার জন্য এক আলোকবর্তিকা। ১৯২৬ সালে স্ত্রীর নামে গড়ে তোলেন “গিরিবালা বালিকা বিদ্যালয়”—নারী শিক্ষার এক সাহসী প্রয়াস, যা সে সময় ছিল বিপ্লবসদৃশ।
১৯২৩ সালে কুমিল্লা হাসপাতালে প্রথম এক্স-রে মেশিন ও আধুনিক ওয়ার্ড চালু করে স্বাস্থ্যখাতে সুনিশ্চিত করেন আধুনিকতার পথ। তার ব্যক্তিগত পাঠাগার “দুলভা লাইব্রেরি” ছিল এক দুর্লভ জ্ঞানের ভাণ্ডার। সেই মহামূল্যবান সংগ্রহ ১৯৬৬ সালে পরিবার দান করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পাবলিক লাইব্রেরিতে—যাতে আগামী প্রজন্ম পায় জ্ঞানের আলো।
ড. অবিনাশ ১৯৪০ সালে হন ত্রিপুরা হিতসাধনী সংঘের প্রেসিডেন্ট এবং ছিলেন জাতীয় বণিক সমিতির সদস্য। তার স্ত্রী গিরিবালা সেন, ছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের কন্যা—এক দুর্লভ মিলন দুই মহৎ পরিবারের।
১৯৪১ সালে সেন পরিবারের ঐতিহ্যবাহী বাড়ির পাশে নিজ উদ্যোগে তৈরি করেন একটি বাংলো, যা আজও স্থানীয়দের কাছে পরিচিত ‘অবিনাশ বাবুর বাংলো’ নামে—এক জীবন্ত ইতিহাস, এক নিঃশব্দ কাব্য।
স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিদের সাথে চুন্টা সেন পরিবার নিয়ে কথা হলে অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, চুন্টার সেন পরিবার কেবল একটি বংশ নয়—এটি একটি ঐতিহ্য, শিক্ষা, সমাজসেবা ও সংস্কৃতির মহামিলন। এখন সময় এসেছে এই ঐতিহাসিক সম্পদের যথাযথ মূল্যায়ন, সংরক্ষণ ও জাতীয়ভাবে তুলে ধরার—যাতে আগামী প্রজন্ম জানে, এই মাটিতে কী অসাধারণ মানুষের জন্ম হয়েছিল। চুন্টা শুধু একটি গ্রাম নয়—এটি বাংলাদেশের গৌরবের প্রতীক।
ঐতিহ্যবাহী সেন পরিবার ও তাদের একমাত্র ঐতিহাসিক নিদর্শন বাংলোর বিষয়ে সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মোশারফ হোসেন বলেন, “চুন্টার সেন পরিবারের অবদান শুধু আমাদের অঞ্চলের গর্ব নয়, এটি সমগ্র জাতির অহংকার। ড. অবিনাশ চন্দ্র সেন ছিলেন মানবতার এক উজ্জ্বল বাতিঘর। আমরা তাঁর স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেব।”
সম্পাদক ও প্রকাশক :মোঃ আলামিনুল হক,নিবার্হী সম্পাদক :আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইসমাইল
যোগাযোগ :ফোনঃ +৮৮০২৫৭১৬০৭০০,মোবাইলঃ ০১৭১২৯৪১১১৬,Emails:jaijaikalcv@gmail.com
সম্পাদকীয় কার্যালয় : ১২০/এ, আর. এস. ভবন, ৩য় তলা, মতিঝিল, ঢাকা