রবিবার, ১০ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,২৩শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার দাবিতে খুলনায় ভিন্নধর্মী প্রচারাভিযান

উত্তম দাস, খুলনা: জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরির অংশ হিসেবে খুলনায় DHRUBA সংস্থার বাস্তবায়নে , CLEAN, এবং BWGED-এর উদ্যোগে এক প্রচারাভিযান অনুষ্ঠিত হয়। এতে পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক এবং বিভিন্ন পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। “ভূগর্ভস্থ জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো বন্ধ করো, এলএনজি আমদানি বন্ধ করো!” স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে সবাই।

বক্তারা বলেন, এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি দেশের জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। এটি পরিবেশ ও অর্থনীতির জন্য বিপজ্জনক এবং জলবায়ু সংকটকে আরও গভীর করে তুলছে। বাংলাদেশ সরকার যখন নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ না করে ব্যয়বহুল আমদানি করা এলএনজি নির্ভরতা বাড়াচ্ছে, তখন দেশের সাধারণ মানুষ তার ক্ষতি বহন করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, এলএনজি কোনো ‘পরিবর্তনকালীন জ্বালানি’ নয়, বরং এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি বিপদ। বিশ্ববাজারে গ্যাসের দাম অস্থিতিশীল, ফলে এলএনজির ওপর নির্ভরতা বাড়ানো মানেই অর্থনৈতিক সংকটের দিকে আরও এগিয়ে যাওয়া। সরকারের এই নীতির কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে জনগণের জীবনযাত্রার ওপর।

সমাবেশে ধ্রুব সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রেখা মারিয়া বৈরাগী তুলে ধরেন যে, এলএনজি কেবল ব্যয়বহুলই নয়, এটি জলবায়ু সংকটকে ত্বরান্বিত করছে। এই গ্যাস পুড়লে বিপুল পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়, যা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের অন্যতম প্রধান কারণ। আরও বিপজ্জনক হলো মিথেন গ্যাসের নিঃসরণ, যা কার্বন-ডাই-অক্সাইডের তুলনায় ৮০ গুণ বেশি ক্ষতিকর গ্রিনহাউস গ্যাস।

খুলনার মতো উপকূলীয় এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইতোমধ্যে ভয়াবহ আকার নিয়েছে। বারবার ঘূর্ণিঝড়, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নদীভাঙন, এবং অনিয়মিত বৃষ্টিপাত এই অঞ্চলের কৃষি ও জীবিকার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। বক্তারা বলেন, সরকার যদি এই অঞ্চলের মানুষকে রক্ষা করতে চায়, তবে জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্প বাতিল করে নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ করাই একমাত্র সমাধান।

পরিবেশবিদদের মতে, বাংলাদেশে সৌর ও বায়ু শক্তির বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে বায়ুশক্তি থেকে টেকসই বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব, যা এলএনজির তুলনায় অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী। বক্তারা বলেন, নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ করলে বিদ্যুৎ ঘাটতি কমবে, আমদানি নির্ভরতা কমবে, এবং নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।

সমাবেশে উপস্থিত একজন পরিবেশ কর্মী বলেন, “এলএনজি আমাদের জন্য এক ভয়াবহ ফাঁদ। এটি কেবল বড় কর্পোরেশনগুলোর লাভ নিশ্চিত করছে, কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলছে। আমাদের ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে হলে এখনই নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে যেতে হবে।”

সমাবেশে বক্তারা জোর দিয়ে বলেন, এখনই সময় জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভরতা কমিয়ে পরিবেশবান্ধব শক্তির দিকে অগ্রসর হওয়ার। বাংলাদেশকে জলবায়ু সংকট থেকে রক্ষা করতে হলে, নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।

সমাবেশে বক্তব্য তুলে ধরেন এশা ক্যাথরিনা বৈরাগী ছাত্রী, লাভলী হোম বিশিষ্ট সাহিত্যিক, উত্তম দাস সাংবাদিক, সালমা খাতুন, সায়মা পিয়া খাতুন, প্রিয়ংকা বৈরাগী, ধ্রুব এবং ধ্রুব নির্বাহী পরিচালক রেখা মারিয়া বৈরাগী সহ আরো অনেকে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *