খাঁন মো. আ. মজিদ, দিনাজপুর: দিনাজপুরের সাতটি উপজেলা- বোচাগঞ্জ, বিরল, দিনাজপুর সদর, চিরিরবন্দর, ফুলবাড়ী, বিরামপুর এবং হাকিমপুর।
প্রায় ১৪৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভারতীয় সীমান্তের সঙ্গে ঘেঁষা। সীমান্ত অঞ্চলের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো মাদক পাচার ও গুলির শব্দ। যা সীমান্তবর্তী মানুষের আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাদকের ভয়াবহতা গ্রাস করেছে সীমান্তবাসীদের জীবন।
সীমান্তবাসীর অভিযোগ, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা প্রায়ই বাংলাদেশের সীমানায় প্রবেশ করেন। কারণ, আন্তর্জাতিক সীমানার ১৫০ ফুট এলাকাজুড়ে ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’ রয়েছে, যা কাঁটাতারের বাইরে।
কামদেবপুর এলাকার বাসিন্দা মোরসালিন ইসলাম জানান, মাঝেমধ্যেই ভারতীয় সীমান্তে গুলির শব্দ পাওয়া যায়, যা আতঙ্ক সৃষ্টি করে। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে বিএসএফের গুলিতে নিহত এক অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ পাওয়া গিয়েছিল।
জিয়াউর রহমান, কামদেবপুর গ্রামের আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘সীমান্তের গুলির শব্দে রাতে অনেক সময় ঘুম ভেঙে যায়, বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা ভীষণ ভয় পান।’
দিনাজপুরের বিরলের ধর্মপুর ইউনিয়নের পুনর্ভবা নদীঘেঁষা কামদেবপুর এলাকায় মাদকের বিস্তার ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গত দুই বছরে মাদকাসক্তির কারণে অল্প বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন অনেকেই। কেউ কেউ নিজের জমিজমা বিক্রি করে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। আগে যাদের ১০-১৫ বিঘা জমি ছিল, তারা এখন প্রায় নিঃস্ব।
গ্রামবাসী জানান, কামদেবপুরে চার থেকে পাঁচজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী রয়েছেন, যারা একসময় দিনমজুরের কাজ করতেন, এখন তারা শতকোটি টাকার মালিক। প্রশাসনসহ অনেকেই তাদের নাম জানেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। তবে নিরাপত্তাহীনতার কারণে কেউ তাদের নাম প্রকাশ করতে চাননি।
মাদকসেবন কামদেবপুর গ্রামের স্কুলছাত্র থেকে শুরু করে শিক্ষকদেরও ছড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি কামদেবপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সেলিমের অফিসে ফেনসিডিল সেবনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা তাকে সাময়িক বরখাস্তের কারণ হয়।
রাত হলেই চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদক নিয়ে আসে। গ্রামবাসী মানিক হোসেন বলেন, ‘মাদক আমাদের যুবসমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।’ যুবক হাসনাত মুহিতের মতে, ‘মাদক একটি পুরো ইউনিয়নকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। মাদকাসক্ত ব্যক্তি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করছে।’
বিজিবির দিনাজপুর ২২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আহসান উল ইসলাম জানান, ‘মাদকের বিষয়ে বিজিবি জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে। মাঝেমধ্যে বিএসএফ অস্ত্র ব্যবহার করলেও তা প্রাণঘাতী নয়। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’
দিনাজপুর সীমান্তের এই সমস্যা মোকাবিলায় প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।