আবু শামা, কুবি প্রতিনিধি: বাবা ট্র্যাভেল এজেন্সির কর্মচারি। মা গৃহিনী, সন্তানদের গড়ে তোলা দায়িত্ব নিয়োজিত। ১৩ আগস্ট ঘড়ি কাটা যখন সকাল ১১ টা।শাহনাজকে নিয়ে মায়ের আগমন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিক্ষা কেন্দ্রে, মায়ের পথচলা গেইটে থামিয়ে দিয়ে তার দায়িত্ব নিয়ে নেন বিএনসিসির দুইজন ক্যাডেট তারা হুইল চেয়ারে করে শাহনাজকে নিয়ে আসেন পরিক্ষার হলে। জন্ম থেকে অন্য দশজনের মতো কখনো স্কুল- কলেজে যেতে পারেন নি শাহনাজ । কখনো হামাগুড়ি দিয়ে আবার কখনো মায়ের সহযোগিতায় হুইল চেয়ারে নিয়মিত স্কুল কলেজের ক্লাস করেছেন। তার সুফলও পেয়েছে সে। এবার স্বপ্ন গড়ার পালা তাই হার মানে নি সেই অদম্য তরণী। পড়াশোনার প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল তার। তাই অচল পা নিয়ে ২য় বারের মত সে বিশ্ববিদ্যালয়ে 'খ' ইউনিটে ভর্তি পরিক্ষা দিতে এসেছেন।
শনিবার (১৩ আগস্ট) অনুষ্ঠিত গুচ্ছ পদ্ধতিতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ‘খ’ ইউনিটের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে।
পরিক্ষা শেষে কথা হয় শাহনাজের সঙ্গে, ছোট বেলা থেকে তার পা দুটি অচল শাহনাজের। তার মনে কষ্টের পাহাড়। সে সহপাঠীদের সঙ্গে একসঙ্গে হেঁটে পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে পারেনি। দৌড়াতে পারে না। খেলতে পারে না। তার অন্য সব সহপাঠীরা যখন স্কুল মাঠে খেলা করে, সে তখন চেয়ে চেয়ে দেখে। তার চোখের কোণে তখন বিন্দু বিন্দু নোনাপানি এসে জমা হয়। তবু সে দমেনি।আমি পড়াশোনা করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ১ম বারের মত পরিক্ষা দিয়ে যখন ভর্তি হতে পারলাম না, তাই প্রবল ইচ্ছা নিয়ে ২য় বারের মত পরিক্ষা দিতে আসলাম। আমি পড়াশোনা করে আমার মতো পিছিয়ে থাকা শারীরিকভাবে অপূর্ণাঙ্গদের নিয়ে কাজ করতে চাই।
তিনি আরও বলেন, আমি আমেনা গালর্স স্কুল থেকে এসএসসি পরিক্ষায় জিপিএ–৪.৪৪ এবং লালমাই সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ ৪.৭৫ পেয়েছেন। পড়াশোনার সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছিলেন হার না–মানা অদম্য মেয়েটি।
লালমায়ের আবুল কালামের ঘরে জন্ম শাহনাজের, পরিবারে চার বোন এক ভাই। পরিবারে সবার ছোট শাহনাজ।
শাহনাজের মা বলেন , ছোটবেলা থেকে শাহনাজ পড়াশোনায় খুবই মনোযোগী। প্রবল ইচ্ছায় সে এতদূর আসতে পেরেছে। সেই পড়াশোনা জন্য অনেক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ সেই ১ম হেরে গিয়েও হার শিকার না করে আবার আসলেন পরিক্ষা দিতে। আমাদের পরিবাের সবার ইচ্ছে এই অদম্য মেয়েটি যেন একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হতে পারে ফরহাদ।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি রায়হানের। পড়াশোনায় প্রচণ্ড ঝোক আর অদম্য ইচ্ছা শক্তির জোরে সব প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ঠেলে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে ফরহাদ।
দিল মোহাম্মদ ফরহাদ, জন্ম থেকেই স্বাভাবিক আট-দশ জন মানুষের মতো হাঁটতে পারে না। বিভিন্ন জায়গায় চলাফেরার একমাত্র সম্বল তার দুই হাঁটু। এবারের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষায় হাঁটুতে ভর করেই অংশগ্রহণ করেছে ফরহাদ। তার কেন্দ্র ছিল সরকারি টিচারর্স ট্রেনিং কলেজ।
দিল মোহাম্মদ পরিবারের মেঝ সন্তান। সুয়াগঞ্জ টি এ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক সম্পূর্ণ করেন ফরহাদ। তার স্বপ্ন এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। তার বাড়ি কোটবাড়ি মাস্টার বাড়ি। মাধ্যমিকে একটা পরীক্ষা দেওয়ার পর বাবা হারা হয়ে যায় ফরহাদ। তার মা গৃহিণী। তার এতদূর পথ আসার পেছনে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন তার মা এবং মামা। তার মামা পেশায় ব্যবসায়ী।
দিল মোহাম্মদ ফরহাদ নিজের জীবন সম্পর্কে বলেন, আমি জন্মগতভাবে অন্যান্যদের মতো পায়ে ভর করে হাঁটতে পারি না। হাঁটুতে ভর করেই চলতে হয়। যার কারণে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে ভালোমতো মিশতে পারতাম না। আমার সাথে তেমন কেউ মিশতে চাইতো না। আমার মা এবং মামার অনুপ্রেরণায় আমি এতটুকু পথ এসেছি। উনারা আমাকে সবসময় সাপোর্ট দিয়ে আসছেন। আমি অস্বাভাবিক- এটা কখনো বুঝতে দেননি।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে দিল মোহাম্মদ ফরহাদ বলেন, ‘আমার ইচ্ছে আছে পড়াশোনা শেষ করে ভালো জায়গায় যাওয়া। সরকারি চাকরির প্রতি আমার আগ্রহ আছে।’
সম্পাদক ও প্রকাশক :মোঃ আলামিনুল হক,নিবার্হী সম্পাদক :আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইসমাইল
যোগাযোগ :ফোনঃ +৮৮০২৫৭১৬০৭০০,মোবাইলঃ ০১৭১২৯৪১১১৬,Emails:jaijaikalcv@gmail.com
সম্পাদকীয় কার্যালয় : ১২০/এ, আর. এস. ভবন, ৩য় তলা, মতিঝিল, ঢাকা