মো. রাশেদুল ইসলাম, কচাকাটা (কুড়িগ্রাম): সবেমাত্র কৈশরে পা দিয়েছে সুচিত্রা রাণী। এমন এক সময়ে পারিবারিক প্রথা মেনে নিয়ে বিয়েতে রাজি হবে নাকি নিজের স্বপ্নপূরণে পা বাড়াবে- এই দোটানায় পড়ে সে। চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় তাকে। বিশেষ করে আবাদি জমির সংকট এবং বিয়ের মাধ্যমে মেয়ের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার প্রচলিত বিশ্বাস তার পরিবারকে, সাথে তার ভবিষ্যতকেও সংকটে ফেলে দেয়।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী বেরুবাড়ি ইউনিয়নের ফরাসকুড়া গ্রামের সুশিল চন্দ্রের কন্যা সুচিত্রা রাণী বলেন, ‘আমি যখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি তখন আমার বিয়ের আলাপ আসে।বাবা-মা রাজি থাকলেও আমি রাজি ছিলাম না। আমার প্রচেষ্টা এবং ভগবানের কৃপায় বিয়ে বন্ধ করি। এভাবে অনেক বাধা-বিপত্তির মধ্যে দিয়ে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করি। আমার পরিবারের অবস্থা ছিল অসচ্ছল। আমার বাবা-মা সব সময় আমাকে নিয়ে চিন্তা করতেন কীভাবে আমার লেখাপড়ার খরচ চালাবে।’
সুচিত্রা রাণী আরও বলেন, ‘আমরা তিন বোন এক ভাই। আমি সবার ছোট। বড় দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেলেও আমাকে নিয়ে সবাই সমালোচনা করে। কিন্তু আমি সব সময় সমালোচনা মোকাবেলা করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সংগঠনের সাথে জড়িত হই। এই সংগঠনগুলো থেকে বিভিন্ন ধরনের ট্রেনিং পাই। ট্রেনিংয়ে যে টাকা দেয় এই টাকাগুলো দিয়ে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাই। এমন করেই চলতে থাকে আমার ছোট্ট জীবন। এভাবে আমি এসএসসি পাশ করলাম। বেড়ে গেল সমালোচনা। তবু আমি সব বাধা অতিক্রম করে কলেজে ভর্তি হলাম। ভর্তি হওয়ার পর বেড়ে গেল পড়াশোনার খরচ। জীবনে নেমে এলো দুশ্চিন্তা হতাশার ছাপ।’
‘তবুও থেমে গেলাম না। দুশ্চিন্তা হতাশা থেকে বেরিয়ে এসে শুরু করলাম টিউশনি। টিউশনির টাকা দিয়ে আমার লেখা পড়ার খরচ ভালো চলছে। তবুও প্রতিনিয়ত শিকার হতে হয় সমালোচনার। পরিশেষে এত বাধা, এত বিপত্তি পাড়ি দিয়ে ইংরেজি নিয়ে অনার্স পড়তেছি কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে। আমার স্বপ্ন হচ্ছে আমি লেখাপড়া করে শিক্ষা ক্যাডার হতে চাই। মানুষের মত মানুষ হবো। আদর্শ দেশ ও সমাজ গড়বো,’- বলেন সুচিত্রা।
সম্পাদক ও প্রকাশক :মোঃ আলামিনুল হক,নিবার্হী সম্পাদক :আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইসমাইল
যোগাযোগ :ফোনঃ +৮৮০২৫৭১৬০৭০০,মোবাইলঃ ০১৭১২৯৪১১১৬,Emails:jaijaikalcv@gmail.com
সম্পাদকীয় কার্যালয় : ১২০/এ, আর. এস. ভবন, ৩য় তলা, মতিঝিল, ঢাকা