মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী: কাগজ-কলমে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত কমিউনিটি ক্লিনিক খোলা থাকার কথা থাকলেও বাস্তব চিত্র এর উল্টো। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের তদারকি না থাকায় নীলফামারীতে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম চলে মাত্র দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। অর্থাৎ সকাল ১০টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত। এ কারণে কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, নীলফামারী জেলায় ছয় উপজেলার মধ্যে ৬১টি ইউনিয়ন রয়েছে। জেলায় কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে ১৯৭টি । কর্মরত সিএইচসিপির সদস্য ১৯৪ জন এবং জেলার এইচএ ১৮৩ পদের মধ্যে ৯৩ জন রয়েছে। প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে সিএইচসিপিদের সপ্তাহে ৬ দিন দায়িত্ব পালন করার কথা। এর সঙ্গে ইউনিয়নভিত্তিক স্বাস্থ্য সহকারীদের ৩ দিন এবং পরিবার পরিকল্পনা সহকারীদের (এফডব্লিউএ) ৩ দিন কমিউনিটি ক্লিনিকে বসে সেবা দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। সে হিসাবে প্রতিদিন কমিউনিটি ক্লিনিকে দুজনের সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও পাওয়া যায় শুধু সিএইচসিপিদের ।
এসব ক্লিনিকে তিন মাসের জন্য প্যারাসিটামল, মেট্রোনিডাজল, অ্যান্টাসিড, হিস্টাসিন, খাওয়ার স্যালাইনসহ ২৭ প্রকারের ওষুধ সরবরাহ করা হয়।
দক্ষিন চওড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের পাশের বাসিন্দা বিলকিছ বেগম অভিযোগ করে জানান, ডাক্তার ঠিকমতো ওষুধ দেয় না। নিয়মিত ক্লিনিকে আসেন না। বেলা ১১টায় আসলেও দুপুর ১টার আগেই চলে যায়। রোগীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করার অভিযোগও করেন তিনি।
কমিউনিটি ক্লিনিকে আসা হাজেরা বেগম বলেন, ‘নামেই ক্লিনিক। প্রয়োজনের সময় সেবা পাওয়া যায় না। বেশির ভাগ সময়ই থাকে বন্ধ। ২৭ ধরনের ওষুধের কথা বলা হলেও দুই এক প্রকার ওষুধ ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় না। প্রতিজনের কাছ থেকে ওষধ দেওয়ার জন্য ৫ থেকে ১০ টাকা নেন। টাকা না দিলে তিনি ওষধ দেন না।’
আরেক সেবাগ্রহীতা রাবেয়া বেগম বলেন, ‘মাঝে মধ্যে ওষুধ নিতে আসি। আসলেই বলে ওষুধ নাই, শেষ হইয়া গেছে। তাহলে ওষুধ দেয় কারে?’
কুড়িগ্রামপাড়া গ্রামের মমিনুর ইসলাম বলেন, ‘আমি ক্লিনিকে দু’দিন গেছি ওষুধ নিতে, কিন্তু কি কারণে আমাকে ওষুধ দেয়নি। এখানে যারা ওনার পরিচিত তাদের ওষুধ দেন বাকীদের অনেককে ফেরত দেন।’
তবে সুখধন কমিউনিটি ক্লিনিকে আসা রুমা আক্তার বলেন, আমি ও আমার ছেলে অসুস্থ তাই ওষুধ নিতে আসছি। এখানে নিয়মিত ওষুধ নেই।
আরেক সেবা নিতে আসা নারর্গিস বেগম বলেন, ‘এখান থেকে সব ধরনের ওষুধ নিই। কিন্তু মাঝে মধ্যে ওষুধ পাওয়া যায় না। আমরা চাই ওষুধ যাতে সবসময় পাই।
জানতে চাইলে দক্ষিন চওড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের দায়িত্বে থাকা সিএইচসিপি রত্না রানী রায় বলেন, ‘এখানে প্রতিদিন ৪০-৫০ রোগী আসে। কোনদিন আবার ২৫-৩০ জন আসে। সব রোগীদের সেবা দেওয়া হয়। আমাদের সকাল ৯টা আসার কথা, তবে আজকে আসতে দেরি হয়েছে। বিকাল ২-৩টায় পর্যন্ত থাকি।’
রোগীর কাছ থেকে টাকার নেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘রোগীর কাছ থেকে যে টাকা নেওয়া হয় সেটি ক্লিনিকের উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করা হয়। স্যার আমাকে নিতে বলেছে তাই নেই। সে টাকা আবার অনেকেই দেন না।’
সুখধন কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি শ্যামল চন্দ্র রায় বলেন, ‘প্রতিদিন গড়ে ৪০-৫০ জন রোগী চিকিৎসা নেন। এরমধ্যে সাধারণত সর্দি, কাশি, জ্বর, আমশা, পাতলা পায়খানা এবং প্রসূতি মা-দের চেকআপ, আয়রণ ওষুধ দিয়ে দেই। রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থাকি। ক্লিনিকে ২৭ প্রকার ওষুধ দেওয়া হয়। আমি সকাল ৯টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ক্লিনিকে থাকি। তবে অনেক সময় ওষুধ শেষ হওয়ার কারণে ওষুধ পেতে দেরি হলে দু’ একদিন কম দেওয়া হয়।’
এ ব্যাপারে নীলফামারী জেলা সিভিল সার্জন ডা: মো: হাসিবুর রহমান বলেন, ‘আপনার নিদিষ্ট কোন তথ্য থাকলে আমাকে জানাতে পারনে। সেবা গ্রহীতাদের যেসব অভিযোগ রয়েছে, সেগুলো আমরা তদারকি করব। এছাড়া প্রতি মাসে আমরা ক্লিনিকগুলো পরিদর্শন করছি। গ্রামীণ জনপদে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি।’