সামিউল আলীম, বগুড়া: পরকীয়ার জেরে স্বামীকে হত্যার দায়ে স্ত্রী জেসমিন আক্তার (৫২) এর যাবজ্জীবন এবং প্রেমিক মোজাফফর হোসেন (৬০) এর মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।
মঙ্গলবার বগুড়া জেলা প্রথম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক হাবিবা মণ্ডল এ রায় দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নাসিমুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের জানান, ২০২২ সালের ২৬ নভেম্বর বগুড়া শহরের বৃন্দাবন পাড়া এলাকা থেকে জামাল উদ্দিন খাজা (৫৮) নামে একজনের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃত জামাল উদ্দিন খাজা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কাজ করতেন এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মোজাফফর হোসেন নিহতের ভগ্নিপতি।
তিনি আরো জানান, মোজাফফর বগুড়া শাজাহানপুরের রানিরহাট এলাকার মৃত আসিমুদ্দিনের ছেলে। ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে মোজাফফর হোসেন হত্যার কথা স্বীকার করে জানান জেসমিন আক্তারের সাথে তার পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল এবং বিয়ের উদ্দেশ্যে তার স্বামীকে দুজনে হত্যা করেছেন।
এজহার সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে ২৫ নভেম্বর জামাল উদ্দিন এর বোন আম্বিয়া মারা গেলে স্ত্রী সন্তানসহ জেলার শাহজাহানপুরের ফুলদিঘী এলাকায় তাকে দেখতে যান তারা। পরিবারের লোকজনসহ মোজাফফর হোসেনও উপস্থিত ছিলেন সেখানে। এরপর সেখান থেকে জামাল উদ্দিন এর স্ত্রী জেসমিন আক্তার ছেলে জেমস রিমনকে সঙ্গে নিয়ে বাবার বাড়ি শহরের চাঁদমুহ হরিপুর এলাকায় যান। এরপর জামাল উদ্দিনও নিজ বাড়ি বৃন্দাবন পাড়ায় ফিরে যান। এই সুযোগে মোজাফফর হোসেন বৃন্দাবন পাড়ায় যান এবং সেখানে জামাল উদ্দিন খাজার স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া নিয়ে বাক-বিতণ্ডা বাধে দুজনের মাঝে। এক পর্যায়ে মোজাফফর আলী বাড়িতে থাকা লোহার শাবল দিয়ে জামাল উদ্দিন এর মাথায় আঘাত করে। রক্তাক্ত অবস্থায় জামাল উদ্দিন খাজা মাটিতে লুটিয়ে পড়লে লাশ কম্বল দিয়ে ঢেকে রেখে সেখান থেকে পালিয়ে যায় মোজাফফর। পরদিন সকালে জামাল উদ্দিনের ছেলে জেমস রিমন বাড়িতে এসে ডাকাডাকি করে কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে বাড়ির পাঁচিল টপকে ভিতরে ঢুকে গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় তার বাবাকে পড়ে থাকতে দেখে। এরপর পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে।
এই ঘটনার পর ছেলে জেমস রিমন বাদী হয়ে মা জেসমিন আক্তার এবং মোজাফ্ফর হোসেন এর নামে হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। পরে তদন্ত শেষে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। শুনানি শেষে মঙ্গলবার আদালত জেসমিন আক্তারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। অনাদায়ে আরো ছয় মাসের সাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন। সাথে মোজাফফর হোসেনকে মৃত্যুদণ্ড এবং সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা করা হয়।