রকিবুজ্জামান, মাদারীপুর: পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা ও হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল উর্মির পরিবার। বাবা মারা যাওয়ার আগে বিয়ের কথা চলছিল তার। ছেলে পক্ষও পছন্দ করে গিয়েছিল। হঠাৎ বাবার মৃত্যুতে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে পরিবারটি।
বিয়ে ভেঙে যাওয়ার উপক্রমে উর্মির জীবনে নেমে আসে কালো মেঘের ছায়া। ঠিক সেই মুহূর্তে সমাজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে পরিচালিত সংগঠন ইউথ ফর বাংলাদেশ পাশে এসে দাঁড়ায় পরিবারটির। উর্মির বিয়ের সকল কার্যক্রম সম্পাদনা করে সংগঠনটি। পরে গত শুক্রবার আনুষ্ঠানিক ও জাঁকজমকভাবে উর্মির বিয়ের আয়োজন সফলভাবে সম্পন্ন হয়।এতে এলাকাবাসীসহ পরিবারটি ও তাদের আত্মীয় স্বজন সকলেই খুশি।
জানা গেছে, মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার আলিনগর ইউনিয়নের চর হোগলপাতিয়া গ্রামের উজ্জল হাওলাদার অটোরিকশা চালিয়ে দুই মেয়ে এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে মোটামুটি ভাবে সংসার চালাচ্ছিলেন। স্বপ্ন ছিল বড় মেয়েকে আনন্দ মুখর পরিবেশে বিয়ে দিবে। বাকি ছোট মেয়ে ও ছেলেকে লেখা পড়া করিয়ে মানুষের মত মানুষ করবে। কিন্তু গত তিন মাস আগে অটো রিক্সা চালাতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান উজ্জ্বল হাওলাদার। এরপরই পরিবারটিতে নেমে আসে আমাবস্যার অন্ধকার। হতাশাগ্রস্ত ও অসহায় হয়ে পড়ে পরিবারের সদস্যরা। যেখানে সংসারের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সেখানে মেয়ের বিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা আরও একটি দুঃস্বপ্ন। কিন্তু এরমধ্যে একই উপজেলার কাসেমপুর এলাকার মোঃ ছায়েদুল সিপাহী ছেলে সাজ্জাদ সিপাহীর জন্য মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব আসে পারিবারিক ভাবে। মেয়েকে পছন্দ হলে বিয়ের প্রস্তাব দেয় কিন্তু উর্মির বাবা বেঁচে না থাকায় এবং আর্থিক সমস্যার কারণে পুরো পরিবারটি হতাশাগ্রস্ত হয়ে।পরে কিভাবে মেয়ের বিয়ে দিবে?
সে সময় ইউথ ফর বাংলাদেশের একজন সদস্য শিক্ষার্থী বিষয়টি ইউথ ফর বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিতা চেয়ারম্যান আরিফুর রহমানকে জানালে অতিদ্রুত পুরো পরিবারের খোঁজ-খবর নিয়ে বিয়ের সকল খরচ বহন করার দায়িত্ব নেয় সংগঠনটি। সকল সামাজিকতা রক্ষা করে সুন্দরভাবে উর্মির বিয়ের সকল আয়োজন সম্পন্ন করেন তারা।
বিয়ে বাড়ির সাজসজ্জা, গেট সাজানো, গায়ে হলুদ, বরযাত্রীসহ প্রায় ২ শতাধিক মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। খাবারের মধ্যে ছিল তিন রকমের মাছ, মুরগী রোস্ট, গরুর মাংস, বোতলজাত পানি, কোমল পানীয়, মিষ্টান্ন, দধি ও রসগোল্লা। এরপর মেয়ের গহনা, মেয়ের নতুন সংসারের কিছু আসবাবপত্রসহ ক্রোকারিজ সামগ্রীও কিনে দেয় তারা। উর্মি বাবাকে হারিয়েছে তবে বাবার দায়িত্ব পালনে একটুও কমতি করেনি শিক্ষার্থীদের সংগঠন ইউথ ফর বাংলাদেশ।
কনে উর্মি আক্তার বলেন, আমার বাবা বেঁচে নেই। তবে আমার বিয়ের জন্য ইউথ ফর বাংলাদেশ যে আয়োজন করেছে এ জন্য তাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
কনের মা ময়না বেগম বলেন, আমার মেয়ের বিয়ের জন্য ইউথ ফর বাংলাদেশ খুব সুন্দর আয়োজন করেছে। মেহমানদের খাবারের জন্য বিভিন্ন ধরনের মাছ, মাংস, পায়েস, দদি, মিস্টি, কোমল পানিসহ একটি সামাজিক বিয়ের জন্য যা যা দরকার সকল আয়োজন করেছে সংগঠনটি। মেয়েকে ঘর সাজানোর সকল ফার্নিচার দিয়েছে। এত সুন্দর করে আমার মেয়ের বিয়ের আয়োজন করা হবে কল্পনায়ও ভাবিনি।
ইউথ ফর বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান মো. আরিফুর রহমান বলেন, আমাদের এক সদস্যের মাধ্যমে জানতে পারি যে, উর্মির বিয়ের কথা চলছে কিন্তু পরিবারের আর্থিক সমস্যার কারণে বিয়ে সম্পন্ন করতে পারছে না। তাই ইউথ ফর বাংলাদেশের মাধ্যমে উর্মির বিয়ের সকল আয়োজন সম্পন্ন করেছি। বিয়ের সাজসজ্জা, খাওয়া, মেয়ের ফার্নিচারসহ সকল আয়োজন আমরা সংগঠন থেকে খরচ করেছি।