মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী: প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আজ শেষ হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে বিষাদের ছায়া। মর্ত্যলোক ছেড়ে বিদায় নেবেন মা। অশ্রুসজল চোখে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ বিসর্জন দেবেন প্রতিমা। ভাঙবে মিলনমেলা।
রোববার সকালে দশমীর বিহিত পূজা শেষে দর্পন ও বিসর্জন। শনিবার শারদীয় দুর্গোৎসবের মহানবমী তিথিতে বিহিত পূজা এবং দর্পন বিসর্জনের মাধ্যমে মন্ডপে মন্ডপে দেবীদুর্গার আরাধনা করেছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা, তবে বিসর্জনের ক্ষণ এগিয়ে আসায় ছিল বিদায়ের সুর-ও।
হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রতি শরতে কৈলাস ছেড়ে কন্যারূপে মর্ত্যলোকে আসেন দেবীদুর্গা। তার এই ‘আগমন ও প্রস্থানের’ মধ্যে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব।
নীলফামারী জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলার ছয় উপজেলায় এবার ৭৯৫টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ডিমলা উপজেলায় ৭৬টি, ডোমারে ১০০টি, জলঢাকায় ১৬০টি, কিশোরগঞ্জে ১২০টি, সদরে ২৬৪টি, সৈয়দপুরে ৭৫টি । সরকারিভাবে প্রতিটি মণ্ডপে পাঁচশ’ কেজি করে মোট ৩৯৭ দশমিক ৫ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এদিন সরেজমিন আনন্দময়ী কালিবাড়ি মন্দিরসহ বড়বাজার, ডালপট্টি, শিব মন্দির মিলনপল্লী পূজা মণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে ভক্ত এবং দর্শনার্থীর উপস্থিতি। অনেকেই পরিবার নিয়ে বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে ঘুরেছেন।এসময় ঢাকের বাদ্যির সঙ্গে মন্ত্রপাঠে আনন্দময়ীকে অঞ্জলি দিচ্ছেন ভক্তরা। এবার তিথির কারণে মহানবমী পূজার পরই দশমীর বিহিত পূজা এবং দর্পণ বিসর্জন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আনন্দময়ী কালিবাড়ি মন্দিরের পুরোহিত বলেন, 'এবার নবমী তিথি শুক্রবার শুরু হয়ে শনিবার সকাল ৬-১৩ মিনিট পর্যন্ত ছিল। ফলে আমরা ভোর থেকেই নবমীর বিহিত পূজা শুরু করেছি। এবার তিথি অনুযায়ী, নবমী পূজা সকাল ৯-২০ মিনিটের মধ্যে শেষ করার নিয়ম ছিল। এখানে সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে নবমী পূজা শেষ করে ৮-৫০ মিনিটে ভক্তরা দেবীকে অঞ্জলি প্রদান করেন। পরে শুরু হয় দশমীর বিহিত পূজা।'
তিনি আরও বলেন, 'সকাল ৬-১৪ মিনিট থেকে দশমী তিথি শুরু হয়। এই দশমী তিথি রাত পৌনে ৪টা পর্যন্ত থাকবে। দশমী তিথিতে দিনের মধ্যে পূজা করার নিয়ম আছে। এ জন্য আমরা নবমীর পরই দশমী পূজা করেছি। গত বুধবার ষষ্ঠী থেকে পাঁচ দিনের যে দুর্গোৎসব শুরু হয়েছিল, রোববার সিঁদুর খেলা, মাকে মিষ্টি দান, শোভাযাত্রা এবং প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এই আয়োজন।
পূজায় অঞ্জলি দিতে বড়বাজার মন্দিরে আসা আরোধা রানি বলেন, 'মা এসেছেন, আবার দেখতে দেখতে মায়ের বিদায়ও হয়ে গেছে। শেষবেলায় মায়ের কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদের সবাইকে ভালো রাখেন।
আনন্দময়ী কালিবাড়ি মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার সাহা জানান, নবমীতে এসেই পূজার ষোলোকলা পূর্ণ হয় এবং বিদায়ের সুর বাজে। দশমীতে বিদায় জানানো হয়। এবার নবমীতেই দর্পনে বিসর্জন হয়েছে, ফলে মাকে আমরা বিদায় দিয়েছি। প্রতীকীভাবে মায়ের বিদায় হয় রোববার।
এদিকে, শান্তিপূর্ণভাবে শারদীয় দুর্গোৎসব আয়োজনে জেলা প্রশাসন-সহ পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি প্রতিটি মণ্ডপে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করেছেন আনসার বাহিনীর সদস্যরা। অন্যদিকে, জেলার সীমান্ত এলাকার ১২টি মণ্ডপে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছে বিজিবি’র ৫৬ নীলফামারী ব্যাটালিয়ন।
বিজিবি নীলফামারী ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল শেখ মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানান, বিজিবি সদস্যরা উৎসবমুখর পরিবেশে উৎসব সম্পন্নে নিরবচ্ছিন্ন দায়িত্ব পালন করছেন।
অপর দিকে, নীলফামারীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম জেলার বিভিন্ন উপজেলার পূজামণ্ডপ পরিদর্শণ করেছেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, জেলার বিভিন্ন উপজেলার পূজামণ্ডপ পরিদর্শণ করেছি। কোথাও কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আনন্দঘন পরিবেশে সবজায়গায় শারদীয় দুর্গাপূজা সম্পন্ন হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক :মোঃ আলামিনুল হক,নিবার্হী সম্পাদক :আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইসমাইল
যোগাযোগ :ফোনঃ +৮৮০২৫৭১৬০৭০০,মোবাইলঃ ০১৭১২৯৪১১১৬,Emails:jaijaikalcv@gmail.com
সম্পাদকীয় কার্যালয় : ১২০/এ, আর. এস. ভবন, ৩য় তলা, মতিঝিল, ঢাকা