প্রিন্ট এর তারিখঃ মার্চ ১৫, ২০২৫, ৭:৪৮ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৫, ৬:৪৪ অপরাহ্ণ
বান্দরবানে ইউপি চেয়ারম্যান চনুমং মারমা’র বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

আরাফাত খাঁন, বান্দরবান: গেল বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরও বান্দরবান পার্বত্য জেলার অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদে ফ্যাসিবাদী আওয়ামিলীগ থেকে নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের প্রভাব কমেনি একটুও।
এরকমই একজন ফ্যাসিবাদী আওয়ামিলীগের মনোনয়নে নির্বাচিত রোয়াংছড়ির নোয়াপতং ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও রোয়াংছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহ সভাপতি চনুমং মারমা। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আওয়ামীলীগের দলীয় সমর্থনে নির্বাচিত ইউপি সদস্যদের নিয়ে দলীয় প্রভাব বিস্তার করে গড়ে তুলেন সিন্ডিকেট। সরকারি বরাদ্দকৃত বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্নীতি ও অনিয়ম করে আসছে দীর্ঘদিন যাবত। গত ৩ বছরে নিজের ইচ্ছে মতো গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কাবিটা,কাবিখা ও অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টি.আর) সহ সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছে চনুমং মারমা। তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস করেনা পুরো ইউনিয়ন জুড়ে। গেল ৫ আগস্ট ২০২৪ ইং শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটলেও এখনো বহালতবিয়ত এই ইউপি চেয়ারম্যান।
রোয়াংছড়ি উপজেলা ৪নং নোয়াপতং ইউনিয়নে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের উন্নয়নে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কাবিটা,কাবিখা এবং রক্ষণাবেক্ষণ (টি.আর) কর্মসূচির আওতায় ১ম ও ২য় কিস্তির নগদ অর্থের বিপরীতে প্রকল্প গ্রহণের কার্যক্রম শুরু হতে না হতে বিভাজনের মাধ্যমে নয়-ছয় করার অভিযোগ ৪নং নোয়াপতং ইউপি চেয়ারম্যান চনুমং মারমার বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন শাখাসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যলয় কর্তৃক গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কাবিটা, কাবিখা ও অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টি.আর) কর্মসূচির আওতায় ১ম ও ২য় কিস্তিতে নগদ অর্থ ও খাদ্যশস্য গম বিপরীতে প্রকল্প তালিকা প্রেরণে ৪টি ইউনিয়নে প্রকল্প বিভাজন করে। উপবরাদ্দ হিসেবে ৪নং নোয়াপতং ইউনিয়নের প্রাপ্ত উপবরাদ্দকৃত নগদ অর্থের কাবিটা থেকে ১৪,২৩,১৪৩.০২ টাকা এবং টিআর থেকে ১১,৯৬,০৩৪.৯৬ টাকা। এতে নগদ অর্থ দাঁড়ায় মোট ২৬,১৯,১৭৭.৯৮ (ছাব্বিশ লক্ষ উনিশ হাজার আটানব্বই টাকা)। এছাড়া খাদ্যশস্যে থেকে ১১.৬৬২১ মেঃটন গম। প্রাপ্ত উপবরাদ্দকৃত নগদ অর্থ ও খাদ্য শস্যসহ অনুমানিক ৩২ লক্ষাধিক টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৪নং নোয়াপতং ইউনিয়নের কয়েকজন মেম্বার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে নতুন অর্থ বছরে প্রাপ্ত বরাদ্দের বিষয়ে বলেন, সাড়ে ৩ লক্ষ থেকে ৮ লক্ষাধিক করে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রকল্প ভাগ করা হয়ে গেছে। তবে ৩নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মংহ্লাগ্য মারমাকে প্রকল্প দেওয়া হয়নি। কেন বা কী কারণে প্রকল্প দেওয়া হয়নি তা আমরা জানি না। এ বিষয়ে চেয়ারম্যান বলতে পারবেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ চেয়ারম্যান নিয়মিত অফিসে আসেন না এই করণে জাতীয়তাসনদ ও জন্মনিবন্ধন পেতে ভোগান্তি বেড়েছে।এডিপি,এলজিএসপি বর্তমানে স্থানীয় সরকার বিভাগ ইউনিয়ন তহবিল, ভিজিডি, ভিজিএফ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিশেষ বরাদ্দকৃত প্রকল্প, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের বাস্তবায়িত প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্প কতটুকু বাস্তবায়ন সরজমিন তদন্তের প্রয়োজন বলে মনে করেন।
৪নং নোয়াপতং ইউপি ৩নং ওয়ার্ড মেম্বার মংহ্লাগ্য মারমা বলেন ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কাবিটা,কাবিখা ও খাদ্যশস্য কর্মসূচির আওতায় ১ম ও ২য় কিস্তিতে নগদ অর্থ ও খাদ্যশস্য গমের বিপরীতে প্রকল্প তালিকা প্রেরণে উপবরাদ্দ প্রদান করা হয়। সরকারি ভাবে বরাদ্দ দিলেও পূর্বে ন্যায় আমাকে প্রকল্প না দিয়ে নিজের লোকদের দিয়ে প্রকল্প গ্রহণ করে অর্থ আত্মসাৎ করতে চাচ্ছেন। ইতিমধ্যে অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষে অন্যান্য ইউনিয়নের মতো নোয়াপতং ইউনিয়নে সরকারি ভাবে যথেষ্ট বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু প্রতিবারের মত আমাকে বাদ দিয়ে চেয়ারম্যান চনুমং মারমা তাঁর ফ্যাসিবাদ আওয়ামীলীগ দলীয় মেম্বারদের বাছাই করে প্রকল্প দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, তিনি চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নাম মাত্র প্রকল্প বানিয়ে সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়ম করে আসছেন। তার বিরুদ্ধে কেউ এই পর্যন্ত মুখ খুলতে সাহস পাননি। ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমাকে গত প্রায় ৪ বছর যাবত বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে। আমার ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষকে সুবিধা বঞ্চিত করেছেন। এবারও উপ বরাদ্দের অর্থ লুটেপুটে খাওয়ার ফন্দি করছে। এই ইউনিয়নে বরাদ্দকৃত প্রকল্প সঠিক ভাবে বন্টন করে সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সকল প্রকল্প কার্যক্রম বন্ধ ও গৃহীত প্রকল্প বাতিল করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছি। তাঁর পরও কোন সমাধান না হলে ডিসি স্যারের কাছে যাবো। ফ্যাসিস্ট আওয়ামিলীগের চেয়ারম্যান চনুমং মারমার বিরুদ্ধে আওয়ামিলীগ সরকারের সময়ে বিভিন্ন দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ থাকার পরও কোন মামলা না হওয়ায় বহালতবিয়ত এই চেয়ারম্যান বলে জানান ৩নং ওয়ার্ডের এই ইউপি সদস্য।
অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে তার বিরুদ্ধে আগেও একটি অভিযোগ করা হয়েছে সার্বিক বিষয়ে জানতে ৪নং নোয়াপতং ইউপি চেয়ারম্যান চনুমং মারমা সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে উনার ব্যবহারিত নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। তায় ওনার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে রোয়াংছড়ির অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত ত্রাণ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মিলটন দস্তিদার বলেন,এমন কোন অভিযোগের বিষয়ে আমার জানা নাই। এমন কেও আমাদের কাছে কোন অভিযোগ করে নাই।
রোয়াংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.সাইফুল ইসলামের মুঠোফোনে একাদিক বার কল করা হলে সংযোগ পাওয়া যায়নি তাই উনার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
সম্পাদক ও প্রকাশক :মোঃ আলামিনুল হক,নিবার্হী সম্পাদক :আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইসমাইল
যোগাযোগ :ফোনঃ +৮৮০২৫৭১৬০৭০০,মোবাইলঃ ০১৭১২৯৪১১১৬,Emails:jaijaikalcv@gmail.com
সম্পাদকীয় কার্যালয় : ১২০/এ, আর. এস. ভবন, ৩য় তলা, মতিঝিল, ঢাকা