কাজী আল আমিন, বিজয়নগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় বিভিন্ন ফল চাষে খ্যাতি অর্জনের পাশাপাশি আদা চাষেও পিছিয়ে নেই।
বস্তায় আদা চাষ একটি লাভজনক আধুনিক পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে আদা চাষের জন্য আলাদা করে জমি ও পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। বিজয়নগর উপজেলায় অনেকের বাড়িতেই এ পদ্ধতিতে চাষ শুরু হয়েছে। এভাবে আদা চাষ করলে অতিবৃষ্টি বা বন্যার নষ্ট হওয়ার ভয় নেই। এদিকে যেমন মাটি বাহিত রোগের আক্রমণ অনেক কমে যায় অন্যদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে বস্তা অন্য অন্যস্থানে স্থানান্তর করা যায়। বাড়ির উঠান প্রাচীরের কূল ঘেঁষে বা বাড়ির আশেপাশে ফাঁকা জায়গা অথবা যেখানে খুশি বস্তায় আদা চাষ করা যায়। বিশেষ করে ছায়াযুক্ত স্থানেও চাষ করা যায়। বাঁশ বাগানের তলায় ছায়াযুক্ত স্থানে যেখানে কোন ফসল হয় না, সেখানেও আদা চাষ করা যায়।
এবছর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলা বিভিন্ন ইউনিয়নে বসতবাড়ির আশেপাশে বিভিন্ন ছায়াযুক্ত স্থানে মোট ১০ হাজার বস্তায় আদা চাষ হয়েছে।
পাহাড়পুর ইউনিয়নে ওলিপুর গ্রামের কৃষানী রাবিয়া খাতুন জানান, তিনি এবারই প্রথম কৃষি বিভাগের সহায়তায় ১৫শ’ বস্তা আদা চাষ করেন।
সেজামুরা গ্রামের ইউসুফ মিয়া বলেন, তিনিও ৪শ’ বস্তা আদার চাষ করেন। আদা চাষে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করেন। ভিটিদাউদপুর ব্লকে কর্মত উপ-সহকারী আশরাফুল আলম ও উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার মো. নূরে আলম।
উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার মোঃ নূরে আলম জানান, বস্তায় আদা চাষ একটি লাভজনক আধুনিক চাষ পদ্ধতি।
বস্তায় আদা চাষের জন্য বিভিন্ন ইউনিয়নে কর্মরত উপসহকারী কৃষি অফিসারদেরকে সাথে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী বসতবাড়ির আঙিনায় অনাবাদি জায়গা ও বিভিন্ন ফল বাগানের নিচে ছায়াযুক্ত স্থানে, উঠান বৈঠক প্রশিক্ষণ মাঠ দিবসের মাধ্যমে বস্তায় আদা চাষের জন্য কৃষকদের উৎসাহিত করা হয়। এতে করে কৃষক আদা চাষে উৎসাহিত হচ্ছে, ফলে বিজয়নগর উপজেলায় দিন দিন বস্তায় আদা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ পদ্ধতিতে চাষের জন্য আলাদা করে জমি বা পরিচর্যা প্রয়োজন হয় না। বস্তায় আদা চাষের জন্য প্রয়োজন একটি বস্তা, ৩ ঝুড়ি মাটি, ১ ঝুড়ি বালি ১ ঝুড়ি পচা গোবর সার, ১ ঝুড়ি চুলার ছাই ও ২৫ গ্রাম ফুরাডান, ১০ গ্রাম টিএসপি, ৫ গ্রাম এমওপি সার। উল্লেখিত উপকরণ একসাথে মিশিয়ে বস্তা ভর্তি করে ৩৫-৫০ গ্রামে ৩কুড়ি বিশিষ্ট আদা এপ্রিল-মে মাসের মধ্যে রোপণ করতে হয়। এতে করে কৃষকের মাত্র খরচ ৫০-৬০ টাকা।
তিনি আরো জানান, সার্বক্ষণিক কৃষকদের পাশে থেকে আদার গোড়া পচা, কাণ্ড পচা ও রাইজোম ফ্লাই পোকা দমন সহ বিভিন্ন পরিচর্যার বিষয়ে প্রয়োজনে পরামর্শ দিয়ে আসছে। সঠিক পদ্ধতি প্রয়োজনে পরিচর্যা পেলে এক বস্তায় ১-১.৫ কেজি আদা উৎপাদন সম্ভব।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ জানান, ফ্লাড রিকনস্ট্রাকশন ইমারজেন্সি অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রজেক্ট (ফ্লিপ) এর আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রায় ১৩২০জন কৃষককে বস্তায় আদাসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদনের আধুনিক প্রযুক্তির বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এতে করে কৃষক গান বস্তায় আদা চাষসহ অন্যান্য ফসল চাষে উৎসাহিত হয়ে উঠেছেন। ফ্লিপ এর আওতায় কৃষকদের বস্তায় আদা চাষ প্রদর্শনী প্রদান করা হয়েছে। বিজয়নগর উপজেলায় এবছর দশ হাজার বস্তায় আদা চাষ হয়েছে।এবং সরাসরি জমিতে ৩৪ হেক্টর জমিতে আদা চাষ হয়েছে। বস্তায় ১০ টন এবং বস্তায় ৪৭৬ টনসহ সর্বমোট ৪৮৬ টন আদা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা আশা করি ছাড়িয়ে যেতে পারে।
সম্পাদক ও প্রকাশক :মোঃ আলামিনুল হক,নিবার্হী সম্পাদক :আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইসমাইল
যোগাযোগ :ফোনঃ +৮৮০২৫৭১৬০৭০০,মোবাইলঃ ০১৭১২৯৪১১১৬,Emails:jaijaikalcv@gmail.com
সম্পাদকীয় কার্যালয় : ১২০/এ, আর. এস. ভবন, ৩য় তলা, মতিঝিল, ঢাকা