শাহ্ সোহানুর রহমান, রাজশাহী ব্যুরো: দৈনিক যায়যায়কালে দুই দফা সংবাদ প্রকাশের প্রকাশের পর রাজশাহীর দুর্গাপুরে নাবালিকা এক কিশোরীকে তুলে নিয়ে গিয়ে পেয়ারা বাগানে ধর্ষণ করার অভিযোগে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
শুক্রবার দিনগত রাত ১২টার দিকে পাবনার আতাইকুল থানার গায়েশবাড়ী এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
শনিবার র্যাব-৫ রাজশাহীর উপ-অধিনায়ক মেজর আসিফ আল রাজেক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেফতার যুবকের নাম রাশেদ মিয়া (৩০)। তিনি জেলার দুর্গাপুর উপজেলার কাঁঠালবাড়িয়া গ্রামের রমজান মন্ডলের ছেলে।
র্যাব জানায়, দুর্গাপুরে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীকে দীর্ঘদিন থেকে নানারকম ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল রাশেদ। গত ২৭ মে রাতে ওই কিশোরী তার চাচার বাড়িতে তরকারি দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ওৎ পেতে থাকা আসামি রাশেদ ওই শিক্ষার্থীর মুখ চেপে ধরে। এ সময় কাঠালবাড়িয়া গ্রামের মুনবর শাহের পেয়ারা বাগানে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে এবং নানাভাবে ভয়-ভীতি ও হুমকি দিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। এ ঘটনায় পরবর্তীতে গত ২৮ মে ভুক্তভোগী ওই কিশোরীর পরিবার দুর্গাপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলা নং-১৮, ধারা ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন(সংশোধনী ২০২০) এর ৯(১)/৩০।
র্যাব-৫ রাজশাহীর উপ-অধিনায়ক মেজর আসিফ আল রাজেক বলেন, আসামি রাশেদ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে করে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে। তাকে দূর্গাপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুরুল হুদা বলেন, রাশেদকে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
গত সোমবার (২ জুন) সন্ধ্যার পর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী জেলা আহ্বায়ক নাহিদুল ইসলাম সাজু, যুগ্ম আহ্বায়ক মোখলেসুর রহমান বিজয়, এনসিপির রাজশাহীর সংগঠক ফাতিন মাহমুদ ভিক্টিমের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করেন। সে সময় ভিকটিমের মা কান্না জড়িত কন্ঠে ধর্ষণের করুণ কাহিনি বর্ণনা করেন। সব কথা শোনার পর ভিকটিমের পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন এই নেতারা।
নাহিদুল ইসলাম সাজু জানান, আমরা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখবো। পুলিশ সুপারের সাথে কথা বলবো। এর পর রাজশাহী জেলা প্রশাসকের আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিষয়টি উথাপন করেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী জেলা আহ্বায়ক নাহিদুল ইসলাম সাজু। এর পরেই অভিযানে নামে র্যাব-৫।
ভিকটিমের পরিবার জানায়, মামলার আগের রাতে আমরা থানায় যাওয়ার সাথে সাথে সোরাউদ্দিন (পশু ডাক্তার) সহ ২ জন থানায় অবস্থান করেন । মামলা না করার জন্য বলেন তারা। এমনকি আমাদের বলেন, মামলা করলে আসামিদের লোকজন ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করে দেবে। আমরা নান্দপাড়া যেতেই মাহবুব, মেহেদি আমাদের মিমাংসার জন্য চাপ দেন। এছাড়া আমার বোনের জামায় রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে চাকরি করেন। তাকে হুমকি দেয়া হয়েছে মিমাংসায় বসানোর জন্য। যদি না বসে তবে চাকরিচ্যুত করা হবে। কিন্তু আমরা আত্মীয়ের সাথে কথা বলে থানায় মামলা করতে গেলে বসিয়ে রেখে পরের দিন বিকেল ৪ টার দিকে মামলা নেন। আমরা অসহায়, গরিব মানুষ। সরকারের করে দেয়া বাড়িতে বসবাস করছি। বর্তমানে খুব আতঙ্কিত। আমরা ন্যায় বিচার চাই। দ্রুত আসামিদের গ্রেফতার করে বিচারের দাবি জানিয়েছিলেন।
স্থানীয় লোকজন বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে চাননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, আমরা ভয়ে আছি। যারা এর সাথে জড়িত তারা খুব খারাপ মানুষ। বিএনপির স্থানীয় কর্মীরা মিমাংসার জন্য ভিক্টিমদের চাপ দিচ্ছে। কিছু বলেছি জানলে বিপদে পড়ে যাবো। আসামীদের মাঝেমাঝে এলাকায় দেখা যাচ্ছে। কিন্তু পুলিশ গ্রেফতার করছেনা। তবে আমরা চাই, দ্রুত আসামি গ্রেফতার হোক। অসহায় পরিবারটি বিচার পাক।
উল্লেখ্য, ২৭ মে সন্ধ্যার পর রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে (১৪) ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে। মঙ্গলবার (২৭ মে) রাত থেকে থানায় অবস্থান করলেও অজ্ঞাত কারণে মামলা না নিয়ে গড়িমসি করে পুলিশ ।
তবে ভিকটিমের পরিবারের অভিযোগ, মামলা না নেয়ার পেছনে কাজ করেছে বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীরা। একপর্যায়ে ২৮ মে বুধবার বিকেল ৪ টার দিকে থানায় মামলা নেয় পুলিশ। উপজেলার কাঠালবাড়িয়া এলাকায় ওই ঘটনায় ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে মামলাটি করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন দুর্গাপুর থানার উপ-পরিদর্শক ইব্রাহিম খলিল।
মামলার এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার উপজেলার ঝালুকা ইউনিয়নের কাঠালবাড়িয়া এলাকায় স্থানীয় চাচার বাড়িতে বেড়াতে আসেন ওই স্কুলছাত্রী। রাতে চাচার বাড়ি থেকে নিজের বাড়িতে ফেরার পথে স্থানীয় রমজান আলীর ছেলে রাশেদ (৩০), তার দুই সহযোগী রকিব (৪০) ও আসলাম (৪২) মিলে ওই ছাত্রীকে হাত মুখ বেঁধে তুলে নিয়ে পাশেই একটি পেয়ারা বাগানে ধর্ষণ করেন। ছাত্রীর চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে রাশেদ ও তার দুই সহযোগী পালিয়ে যায়।
অবশেষে, শুক্রবার দিনগত রাত ১২টার দিকে পাবনার আতাইকুল থানার গায়েশবাড়ী এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
সম্পাদক ও প্রকাশক :মোঃ আলামিনুল হক,নিবার্হী সম্পাদক :আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইসমাইল
যোগাযোগ :ফোনঃ +৮৮০২৫৭১৬০৭০০,মোবাইলঃ ০১৭১২৯৪১১১৬,Emails:jaijaikalcv@gmail.com
সম্পাদকীয় কার্যালয় : ১২০/এ, আর. এস. ভবন, ৩য় তলা, মতিঝিল, ঢাকা