ডা. মো. সাইফুল ইসলাম: বর্তমানে রাজনীতির চারপাশে যারা তৎপর তারা অধিকাংশই অপতৎপরতায় জড়িত। পথিক পথ হারালে যেমন আর পথিক থাকে না, হয় বিভ্রান্ত মানুষ। ঠিক তেমনি এ দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ স্বার্থ আর ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়ে পথ হারিয়ে বিভ্রান্ত মানুষে পরিণত হয়েছ। অবস্থান করছে বিভ্রান্তের জগতে। মূলতঃ স্বাথীনতার পর থেকে স্বার্থ আর ক্ষমতার লোভে অন্ধ পথ হারা কিছু স্বার্থপর ও লোভী বিভ্রান্ত মানুষ দ্বারা সরকার পরিচালিত হয়ে আসছে। এরা কিন্তু সমাজ, জাতি ও দেশের জন্য এমন কি দলের জন্যও রাজনীতি করে না। রাজনীতি করে নিজের জন্যে। অর্থাৎ অতীত জীবনের অপকর্ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারের পাহাড় সমান শাস্তিযোগ্য, ক্ষমার অযোগ্য অপরাধগুলো থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য দলকে বুলেট প্রæভ পরিধান হিসেবে রাজনীতির ছদ্মাবরণে নিজেকে রক্ষা করে যাচ্ছে মাত্র। এই শ্রেণীর নামধারী রাজনীতিবিদগণ যেমন দেশ ও জাতির শত্রæ ঠিক তেমনি দলকেও করছে বিপদগামী। দলের মধ্যে এরা কিন্তু আবার কট্টরপন্থী হিসেবে পরিচিত। অর্থাৎ দলের মূল নীতিতে বিশ্বাসী বলে দাবীদার। এটিও একটি কৌশল মাত্র। আর এই কৌশলগত কারণে দল তাদেরকেই মূল্যায়ন করছে বেশী। ভোগ করছে দলের সিংহভাগ সুযোগ-সুবিধা। এছাড়াও তাদের একমাত্র প্রার্থনা দলের শ্লোগান দিতে দিতেই তারা যেন কবরে যেতে পারে। তাদের দল ত্যাগের কোন প্রশ্নই আসে না। তবে যদি কোন অদৃশ্য শক্তির বলে দল থেকে বহিস্কৃত হয় তাহলে অতীত জীবনের অপকর্মগুলো মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে, ফলে পৃথিবীর নরকে বাকি জীবন নিয়ে ধুকে ধুকে মরতে হবে। এই চিন্তায় আজ তারা আতংকিত। আর তাই তারা বিকারগ্রস্ত মানসিক রোগীর মতো কখন কি বলছে তার ঠিক নেই। তাদের কাছে কোন কিছু আশা করা যায় কি? এদের কাছে কোন কিছু আশা করা বা ভরসা রাখা আর দুঃস্বপ্ন, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ও অসম্ভবের উপর ভর করে সোনার হরিণ কল্পনা করা একই কথা। কারণ এদের হৃদয় থেকে স্বপ্নের পাতাগুলো ঝরে গেছে, পচে গেছে, দুর্গন্ধ বেরুচ্ছে। ফলে এই পচন ক্রিয়াটি ভাইরাস জীবাণুর মতো আক্রান্ত করছে নতুন প্রজন্মের স্বপ্নের সম্ভাবনাময় উজ্জ্বল পাতাগুলো। ভাইরাস জীবাণু ধ্বংসের ওষুধ যেমন আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে আবিষ্কৃত হয় নাই। ঠিক তেমনি ডাক্তার, কবিরাজ ও হেকিম দ্বারা এদের সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
এখন একটু পর্যালোচনা করতে হয় যে, স্বাধীনতার পর থেকে তিন দশকে কারা এ দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। কারা রাজনীতিতে ছিল বা আছে। বিগত তিন দশকে মূলতঃ তিনটি প্রজন্ম রাজনৈতিক অঙ্গনে এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় ছিল বা আছে। প্রথম প্রজন্ম ,যারা ৬০-এর দশকে যুবক ছিল। প্রথম প্রজন্মটি প্রায় জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছেছে। দ্বিতীয়টি ৬০ এর দশকের প্রজন্ম। এখন এই দুটো প্রজন্মই কর্মক্ষম বিদ্যমান। ৬০-এর দশকের পরে আর একটি প্রজন্ম আছে। তারা হলো তৃতীয় প্রজন্ম। তৃতীয় প্রজন্ম ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন থেকে পর্যায়ক্রমে ১৯৬৯ সালের গণ আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি। তাদের কাছে মুক্ত চিন্তা, সততা, নিষ্ঠা, মূল্যবোধ, ঐতিহ্য শব্দাবলী তেমন ক্রিয়াশীল নয়। দেশপ্রেমী থেকে শুরু করে বৈশিক গ্রাম বা গেøাবাল ভিলেজ তাদের কাছে কৌশলগত শব্দাবলী মাত্র। ব্যক্তি স্বার্থের জন্য যখন যেটাকে যেভাবে দেখা বা প্রয়োগ করা উচিৎ, করছে তারা। এরা আদর্শহীন, স্বার্থান্ধ, ভোগবাদী বা সুবিধাবাদী প্রজন্ম। এর জন্য তাদেরকে দায়ী করা যাবে না। কারণ তারা নিজেকে সুন্দর চরিত্রে গড়ার সুস্থ ও আলোকিত পরিবেশ পায় নাই। ৬০- এর দশকের প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ করেনি ও ভাষা আন্দোলন দেখেনি। তবে এরা দীর্ঘ এক আন্দোলনের যোদ্ধা। এ প্রজন্মের চোখের সামনে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে কিন্তু তারা মুক্তিযোদ্ধা বা গেরিলা নয়। তবে যুদ্ধের ভয়াবহতা, মৃত্যু বেদনা তাদের স্মৃতিতে জ্বল জ্বল করছে। তারা স্বাধীনতাত্তর অস্থির সময়ের সাক্ষী। জন্মের পর তারা গণতন্ত্রের স্বাদ পায়নি। এই প্রজন্ম সামরিক শাসকের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন লড়ছে ও রয়েছে স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনা। এরা আবার সৎ যোগ্য ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞাসম্পর্ণ ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারে নাই। এ কারণে তারা অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ, যুক্তি পাল্টা যুক্তি, হিংসা ও প্রতিহিংসার রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। এরাও কিন্তু মানবতা, মানবিক মূল্যবোধ ও নৈতিক চরিত্র হারিয়ে ফেলেছে প্রায়। তবে এদের ইচ্ছা শক্তি ও অনুভুতি এখনো সম্পূর্ণভাবে লোভ পায় নাই। ফলে দলের মধ্যে এরা মাঝে মধ্যে বিবেকের তাড়নায় বিদ্রোহী হয়ে উঠে। নৈতিক চরিত্র অবক্ষয়ের জন্য তাদেরকেও দায়ী করা যাবে না। কারণ চরিত্রকে সুন্দরভাবে গঠন করার জন্য সৎ সংগ ও সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ তারা পায় নাই। প্রথম প্রজন্ম অর্থাৎ ৬০-এর দশকের যুবক প্রজন্ম ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে ৬৯ সালের গণআন্দোলন ও ৭১ সালের মুক্তিযেদ্ধের বা স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল। কেউ সপক্ষে, কেউ বা বিপক্ষে। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের স্বপ্ন ছিল পাকিস্তানের অখÐতা রক্ষা করা ও বাঙ্গালি জাতিকে চির গোলাম হিসেবে প্রভুদেরকে উপহার দেওয়া এবং বিনিময়ে তাদের আশা ছিল শাহীমর্যাদা। যেমনটি নবাব হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল মীরজাফর। যদিওবা বিশ্বাসঘাতকের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছিল, তবে বাঙ্গালি জাতির সহজ, সরল, সবুজ, সতেজ ও কোমল প্রাণের স্বপ্নকে এমনিভাবে আঘাত করেছিল যা আহত উষ্ণ হৃদয়ের গহীন গহŸরে ঘুমন্ত জগতে সুপ্ত, স্পন্দনহীন ও অসুস্থ অবস্থায় আত্মগোপন করতে বাধ্য হয়েছিল। বাঙ্গালি জাতির এই স্পর্শকাতর আহত স্বপ্ন কোমল হৃদয়ের আদ্র উষ্ণতায় বিকশিত হতে সময় লেগেছিল দু’শ বছর। আর এই সফলতা থেকেই প্রমাণিত হয় যে, বাঙ্গালি জাতির ধৈর্য্য ও ইচ্ছাশক্তি কত প্রখর। বাঙ্গালি জাতির হৃদয়ে সফলতা নিত্যদিন নব-নব রূপে মন ও বিবেককে দোলা দেয়। তাই তারা ব্যর্থতার মিছেমিছি ভয়ে শঙ্কিত হয় না। বার বার এ জাতি প্রমাণ করেছে এরা ভীরু কাপুরুষ নয়, বীরের জাতি। এরা সত্য, সুন্দর ও মংগলকে চেনে, কাজেই তারা মিথ্যা, কুৎসিত ও অমংগলকে ভয় পায় না। আর এ কারণেই স্বাধীনতার বিপক্ষের নেতৃবৃন্দ সেদিন চরমভাবে পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের নেতৃবৃন্দের স্বপ্ন ছিল ‘স্বাধীনতা’ ও একটি সিভিল সমাজ অর্থাৎ সুশীল সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করা। এ স্বপ্ন মূলতঃ গুটিকতক গোলাম ছাড়া সমগ্র জাতির। সমগ্র বাঙ্গালি জাতি সেদিন বুঝতে পেরেছিল যে, একটা সুশীল সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য একান্ত প্রয়োজন ভুখÐকে স্বাধীন করা। স্বাধীন ভুখÐ ছাড়া সুশীল সমাজ প্রতিষ্ঠিত করা মোটেই সম্ভব নয়। তাই মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে দল মত নির্বিশেষে সমষ্টিগতভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই আমাদের এই সুজলা, সুফলা, শষ্য শ্যামলা সোনার বাংলা স্বাধীন হয়েছিল। আমাদের এদেশ, একটি ছোট্ট দেশ। কিন্তু ছোট্ট হলে কি হবে, এ যেন অমূল্য রূপরাশি, সুখ স্বপ্নের এক রতœতরী। বাঙ্গালি জাতি আজ রতœতরীর মালিক। স্বাধীনতা হলো রতœতরীর নীল নকসা। আর এই নীল নকসার মাধ্যমে বাঙ্গালি জাতির পূর্ণাঙ্গ স্বপ্ন বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। তবে কেন রতœতরী ও রতœতরীর রূপরাশি, সুখ স্বপ্ন উপভোগ করার সঠিক নীল নকশা থাকা সত্তে¡ও ভিক্ষুকের মতো সোনার পাতের উপরে দাঁড়িয়ে রূপার পয়সার জন্য হাত পেতে নির্বোধের মতো কান্নাকাটি করছি? কেন আমরা শীতে ঠক ঠক করে কাঁপছি? আমাদের প্রচুর সম্পদ, ধনরতœ, সর্বোপরি সবকিছু থাকা সত্তে¡ও জীবন তরী কেন কূলে ভিড়াতে পারলাম না? বাঙ্গালি জাতি এমোনই এক অবস্থায় জীবনযাপন করছে যেন একটি সাগরের তীরে তৃষ্ণার্ত থাকার মতো, একটি পশু খামারের ভারী খাদ্যের বস্তা সারাদিন বহন করেও ক্ষুধার্ত থাকছে। এমতাবস্থার জন্য দায়ী কে? তিনটি প্রজন্মের প্রেক্ষাপট পর্যালোচনার আলোকে বুঝতে আর বাকী আছে কী? দায়ী কে? মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের নেতৃবৃন্দকে আমার বলার কিছু নেই। কারণ তারা তো এখনো ৫২ ও ৭১ কে বিশ্বাস করে না। তার পরও তাদেরকে অতীত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মনিয়োগ করা উচিৎ। এখনো আত্মশুদ্ধির সময় আছে। নইলে সমূহ বিপদ তাদের জন্য অপেক্ষা করছে। যেমনটি বাঙ্গালি জাতির হৃদয়ে ঢুকাতে পারেননি উর্দু ভাষা ও রক্ষা করতে পারেননি পাকিস্তানের অখÐতা। ঠিক তেমনি আপনাদের পাতানো ষড়যন্ত্রের জাল থেকে জাতি একদিন বেরিয়ে আসবেই। সত্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটবেই।
অনেক হয়েছে। আর নয়। আমাদের জীবন থেকে অনেক সময় হারিয়ে গিয়েছে। মেঘে মেঘে অনেক বেলা হয়েছে। এখনো সংশোধন হওয়ার সময় আছে। সময় আর নষ্ট না করে আসুন সমাজ, জাতি, দেশ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অমূল্য সম্পদ জ্ঞান ও সময়কে কল্যাণ, সুন্দর, ও মংগলের মাঝে বেঁধে ফেলি। রতœ ভান্ডারকে ফ্রেমে না রেখে রতেœর খনির মতো কাজে লাগাই। বিগত দিনের ভুলত্রæটি নিজ নিজ বিবেচনায় নিয়ে হীনমন্নতাবোধ, পরশ্রীকাতরতা, অনুদান চিত্ত ও পরের নিন্দাণে¦ষণের মতো কুপ্রবৃত্তিগুলোর কবর রচনা করে আসুন একটি সিভিল সমাজ অর্থাৎ সুশীল সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে আজই শপথ গ্রহণ করি।
সুশীল সমাজ প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমাদেরকে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ। আসুন একটু আলোচনা ও সমালোচনা করে পথ ও পদ্ধতিটা জেনে নিই। পথ ও পদ্ধতি তো আমাদের জানাই আছে। ২১ শের সিঁড়ি বেয়ে যেমন আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি ঠিক তেমনি স্বাধীনতার সিঁড়ি বেয়ে খুঁজে বের করতে হবে সমগ্র জাতির মুক্তির পথ। তবে প্রবল ইচ্ছা ও ধৈর্যের প্রয়োজন। এছাড়াও বের হয়ে আসতে হবে অনৈতিকতার গভীর অন্ধকার থেকে। হিংসা প্রতিহিংসার মতো কুপ্রবৃত্তির দরজায় আগল লাগাতে হবে। প্রবল ইচ্ছা শক্তি ও ধৈর্য জীবনের সব সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ। তবে ধৈর্যের স্বাদটি যদিও বিষাদপূর্ণ কিন্তু এর ফলাফলটি যথেষ্ট মিষ্টি। ধৈর্যের সহিত অবিরল সাধনায় গগণচুম্বী পাহাড় পদতলে আসতে পারে, সাগরকে তৈরি করতে পারে পুকুরে এবং জীবনের সকল বস্তুই পূর্ণভাবে আসতে পারে হতের মুঠোয়। নাবিক যদি রতœ তৈরির সমস্ত কলকবজা ও কূলে ভিড়ার সঠিক নীল নকশা পাবার পরও রতœতরী কূলে ভিড়াতে না পারে, তাহলে এর জন্য দায়ী কে? নাবিক নয় কি? তাই যদি হয় তাহলে রাষ্ট্রের নাবিক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নয় কি? তাহলে বুঝতেই পারছেন রাষ্ট্রের জন্য রাজনৈতিক দল ও নেতৃবৃন্দের গুরুত্ব কত অপরিসীম। তাই এই মুহূর্তেই সুস্থ রাজনীতি, অবাধ, নিরপেক্ষ ও মুক্ত গণতন্ত্র এবং স্থিতিশীল ও কার্যকরী সংসদ প্রতিষ্ঠিত করার জন্য রাজনৈতিক চর্চা ও গণতন্ত্র বিকাশের মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির প্রক্রিয়া এখনিই গ্রহণ করতে হবে। স¤্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তনের পদক্ষেপ গ্রহণপূর্বক গণমুখী, উন্নয়নমুখী, উৎপাদনমুখী, বাস্তবমুখী ও সময়োপযোগী শাসন ব্যবস্থা প্রণয়নের পদক্ষেপ আজই গ্রহণ করা উচিৎ। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক চর্চা ও গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ ও গতিশীল করার লক্ষ্যে গ্রামকে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে মূল্যায়ন ও স্ব-স্ব দলের কর্মীবৃন্দের দ্বারা গণতান্ত্রিক পথে অর্থাৎ ভোটের মাধ্যামে জাতীয় নির্বাচনে অংশ গ্রহণের জন্য নির্বাচিত প্রতিনিধিকে মনোনয়ন পত্র প্রদানে কর্মীদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য করতে হবে। এ পদ্ধতিতে প্রতিনিধি নির্বাচিত হলে দলের মধ্যে ফিরে আসবে শৃঙ্খলা, শান্তি ও ঐক্য। জনগণ পাবে সৎ, যোগ্য ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নেতৃত্ব।
সর্বত্র, সবখানে, সবার মাঝে জ্ঞান, মেধা, মননশীলতা ও সৃজনশীলতার চাষের ব্যবস্থা অতীব জরুরি ও সময়ের দাবীও বটে।
এ লক্ষ্যে কালবিলম্ব না করে নষ্ট রাজনীতির দুষ্ট চক্রের কবল থেকে গণতন্ত্রকে মুক্ত করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আজই গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় ঘোরতর অন্ধকার সবার জীবনকে গ্রাস করতে প্রচন্ড প্রতাপে ধেয়ে আসছে।
কৃষি বিপ্লব এর পাশাপাশি ব্যাপক শিল্পায়নের ব্যবস্থাসহ মেধাভিত্তিক শিক্ষা পদ্ধতি প্রণয়নের মাধ্যমে, মেধাকে শক্তিতে রুপান্তরিত করার ক্ষেত্র সৃষ্টির ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়নের যাবতীয় কৌশল প্রয়োগের অঙ্গীকরে আজই হতে হবে অঙ্গীকারবদ্ধ। নইলে সকলের সামনে অপেক্ষা করছে মহাপ্রলয়।
ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অমূল্য সম্পদ। এ অমূল্য সম্পদ অর্জনে যে সকল দেশপ্রেমিক ও নিবেদিত প্রাণ মানুষ আত্মত্যাগ ও আত্মহুতি দিয়েছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সঠিক মূল্যায়নের মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। অন্যথায় অব্যাহত বিতর্ক ক্রমাগতভাবে সমগ্র জাতির মধ্যে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়বে এবং অদূর ভবিষ্যতে জাতি হারিয়ে যাবে বিষাদের অতল অন্ধকারে।
সুপ্রিয় পাঠক সিভিল সমাজ অর্থাৎ সুশীল সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে যে পথ ও পদ্ধতির সন্ধান পেলেন তা মূলতঃ আমাদের সার্বিক চেতনার উন্মেষ ঘটানোর ক্ষেত্রে একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র। তবে গোড়ামীমুক্ত, অহমিকামুক্ত, হিংসুটেমুক্ত মনই সুশীল সমাজ গড়ার পথে বড় সহায়ক। মনে রাখবেন সত্যই সুন্দও এবং সুন্দরই কল্যাণ পথের দিশারী। দু’টি শক্তি মানুষের চেতনা ও চেতনাবোধকে সত্য, সুন্দর ও কল্যানের পথে পরিচালিত করতে প্রতিপক্ষ হিসেবে কঠিন ও কঠোরভাবে কাজ করে থাকে। প্রথমটি হচ্ছে জ্ঞানের মাধ্যমে অর্থাৎ আত্মজ্ঞানের মাধ্যমে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে কোনো শক্তি সংক্রান্তের কাছে চরমভাবে বাঁধা প্রাপ্তের মাধ্যমে।
সুন্দর ও কল্যাণের পথ ও পদ্ধতির সন্ধান পাওয়া সত্তে¡ও যদি আত্মজ্ঞানের মাধ্যমে চেতনা ও চেতনাবোধকে সত্যের পথে পরিচালিত না করে আত্মকেন্দ্রিক, ব্যক্তিকেন্দ্রিক ও স্বার্থকেন্দ্রিক মানসিকতা অব্যাহত রেখে জাতিকে অসত্য, অনিয়ম, অন্যায়, নিয়মনীতির অপব্যবহার, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও নিরাপত্তাহীনতার নরগরাজ্য উপহার দিতে চান তাহলে ভুল করবেন, চরম ভুল এবং মুখামুখি হয়ে যাবেন এক অশুভ শক্তি সংক্রান্তের কাছে। একে অপরকে প্রতিহত ও ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য যে ফাঁদ তৈরী করেছেন, সে ফাঁদেই আপনারাই জড়িয়ে পড়বেন। যাদেরকে নিয়ে আপনারা খেলছেন তারাই আপনাদের সৃষ্ট অপকর্ম ও অপশক্তি ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট। মনে রাখবেন আকাশ মেঘমুক্ত হবেই, অন্ধকারের অবশান ঘটিয়ে আলো আবছা সোনালী প্রভাতে পাখিরা সুর ও ছন্দে, মধুর কন্ঠে গান গাইবেই। অন্যায়, অসত্য ও অপশক্তির পতন ঘটবেই। বাঙ্গালি জাতি একদিন আলোকিত জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবেই। তবে অন্যায়, অসত্য ও অপশক্তির ধারক, বাহকদের পরিণতি কি হবে জানি না। একটি দৃষ্টান্তের মাধ্যমে তাদের পরিণতির বাস্তব প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। ‘এ টেল অব টু সিটিজেন’ সিনেমাটি যারা দেখেছেন তাদের মনে থাকার কথা। ছোট খাটো কিছু প্রশ্ন তুলে ধরেই ছবি শুরু করা হয়েছে। মদের পিপে বোঝাই একটি ঘোড়ার গাড়ী ছুটে যেতে গিয়ে সেখান থেকে দু’চারটি পিপে বাহিরের রাস্তায় গড়িয়ে পড়ে ভেঙ্গে গেলো। এমনি ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণার্ত, বুভূক্ষ, দুঃস্থ, অর্ধোলঙ্গ মানুষ রাস্তায় ঝাঁপিয়ে পড়ে তা আজলা ভরে আবার কেউ কেউ রাস্তায় মুখ লাগিয়ে জিহŸা দ্বারা চেটে খেতে শুরু করলো। আর তখনি পর্দার উপর ফুটে উঠলো বিরাট এক প্রশ্ন চিহ্ন ও নেপথ্যে থেকে শব্দ ভেসে এলো ‘হোয়াই’ একেরে পর এক এমনি ড্রামাটিক সিকোয়েন্স এর সাথে বারংবার দেখানো হচ্ছে ঐ প্রশ্ন চিহ্ন এবং শোনানো হচ্ছে ‘হোয়াই’। শেষ পর্যন্ত এসব ‘কেনই’ বিরাট আকার ধারণ করে ফরাসি অভিজাততন্ত্রের নিপীড়ন, নির্যাতনের প্রতীক বাস্তিল শহর দুর্গকে গুড়িয়ে ধুলোয় মেশিয়ে আভিজাতন্ত্রের পতন ঘটিয়ে ছাড়ে। বাস্তিল দুর্গের পতনের খবর ফরাসি স¤্রাট ষোড়শ লুইকে দেওয়া হলে তিনি নাকি বলেছিলেন ‘নাথিং হ্যাজ হ্যাপেন্ড’ অর্থাৎ কিছুই হয় নাই। ফরাসি স¤্রাট ষোড়শ লুই এর হয়তোবা ‘কিছুই হয় নাই’ বলার পরিস্থিতি ছিল। কিন্তু আমাদের দেশের যা অবস্থা তাতে অন্যায়, অসত্য, অনিয়ম ও অপশক্তির ধারক বাহকরা স¤্রাট লুই এর মতো ‘কিছুই হয় নাই’ বলারও সুযোগ পাবে না। কারণ দীর্ঘ দিন থেকে এ দেশে আত্মীয়করণ, দলীয়করণ, দুর্নীতিকরণ ও সন্ত্রাসীকরণের রাজনীতি চলছে। বিবেক তাড়িত মানুষ বিবেকের সাথেই করছে প্রতারণা। যার ফলে নিত্যদিন ঘটে যাচ্ছে কত তান্ডবলিলা তার শেষ নেই। যে তান্ডবলিলা প্রতিদিন মানুষের মন ও হৃদয়কে করছে ক্ষতবিক্ষত, বিবেককে তাড়া করছে প্রতিনিয়ত। গোটা জাতি আজ স্তম্ভিত। হতবাক, নির্বোধ ও অসহায়ের মতো মনের অজান্তে হৃদয় থেকে বের হয়ে আসছে শুধু একটি সত্য, ‘একি হচ্ছে’? সিনেমার পর্দায় যেমন পর্যায়ক্রমে দৃশ্যগুলো বারবার ফিরে আসে। ঠিক তেমনি আমাদের এই হৃদয়ের সত্য হতাশাব্যাঞ্জক জিজ্ঞাসাটি ‘এ কি হচ্ছে’ বার বার জীবন কাব্যের হৃদয় পাতায় ফিরে ফিরে আসছে। এতে আতংকিত হওয়ার কিছুই নেই। একটি মাত্র ‘হোয়াই’ প্রশ্ন চিহ্নটি যেমন ফরাসি স¤্রাট ষোড়শ লুই-এর আভিজাততন্ত্রের বাস্তিল শহর দুর্গ গুড়িয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে নিপীড়ন ও নির্যাতনের অবশান ঘটিয়েছিল। ঠিক তেমনি আমাদের হৃদয়ের সত্য হতাশব্যাঞ্জক জিজ্ঞাসাটি ‘এ কি হচ্ছে’ এর মধ্যে সেই ধরনের অনুভূতি, অনুভাবের পূর্বাভাস পরিলক্ষিত হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে মনের অজান্তেই হৃদয়ের সত্য হতাশাব্যাঞ্জক জিজ্ঞাসা ‘এ কি হচ্ছে’ এর কাছে প্রতারক বিবেক পরজিত হয়ে আলোকিত বিবেক আত্মপ্রকাশ করবে এবং সকল অপশক্তির অবশান ঘটিয়ে সমগ্র জাতিকে আলোকিত জীবন উপহার দিবে। আলোকিত-বিবেক দ্বারা প্রতারক বিবেক বিতাড়িত হলে তখন আর কোন মানুষের কিছু বলার সুযোগ থাকে না। এটাই সত্য।
লেখক: ডা. মো. সাইফুল ইসলাম
কবি, সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক চিলাহাটি, ডোমার, নীলফামারী।
সম্পাদক ও প্রকাশক :মোঃ আলামিনুল হক,নিবার্হী সম্পাদক :আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইসমাইল
যোগাযোগ :ফোনঃ +৮৮০২৫৭১৬০৭০০,মোবাইলঃ ০১৭১২৯৪১১১৬,Emails:jaijaikalcv@gmail.com
সম্পাদকীয় কার্যালয় : ১২০/এ, আর. এস. ভবন, ৩য় তলা, মতিঝিল, ঢাকা