রাজশাহী ব্যুরো: দৈনিক বণিক বার্তার রাজশাহী প্রতিনিধি ও স্হানীয় দৈনিক পত্রিকার চিফ রিপোর্টার ফয়সাল আহমেদকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে অপহরণ, হত্যাচেষ্টা ও চেক ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে।
এনিয়ে মঙ্গলবার রাতে তিনজন সন্ত্রাসীর নাম উল্লেখ করে মহানগরীর বোয়ালিয়া থানায় একটি অভিযোগও দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক ফয়সাল আহমেদ।
অভিযুক্তরা হলেন- বিনোদপুর মতিহার থানা এলাকার মো. শহিদুল্লাহর ছেলে মো. ফারুকুজ্জামান শাওন (৩৮), মো. আজিমুদ্দিনের ছেলে মো. রাসেল (৩২) ও একই এলাকার বাসিন্দা মো. টিংকু (৪৪)। শাওন নিজেকে জামায়াত ইসলামের শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের মহানগরের নেতা ও শীর্ষ ক্যাডার হিসেবে পরিচয় দেন ও রাসেল নিজেকে শিবিরের কর্মী পরিচয় দেন। অপরদিকে টিংকু জামায়াতের কর্মী ও রিজার্ভ ফোর্সের ক্যাডার হিসেবে পরিচয় দেন। এদের বিরুদ্ধে মহানগরীতে বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই, দখলবাজি, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মেরও অভিযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে।
শাওন, টিংকু ও রাসেলের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ এবং জামায়াতের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা আছে কি-না? তা জানতে চাওয়া হয় মতিহার থানা জামায়াতের কয়েকজন নেতার কাছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, কথিত সন্ত্রাসীরা আমাদের সংগঠনের কেউ না। তারা তাদের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে যে কোনো সংগঠনের পরিচয় দিতে পারে। তাই বলে, তাদের অপকর্মের দায় জামায়াত কেন নেবে’।
একই কথা বলেন রাজশাহী মহানগরীর জামায়াতের রাজশাহী আমির ড. কেরামত আলী। তিনি বলেন, ‘এমন নামে বিনোদপুর এলাকায় আমাদের কোনো কর্মী, সমর্থক এমনকি নেতা নেই। এ ধরনের কোনো ব্যক্তিকে আমি চিনি না। আমাদের সংগঠনের এমন অপকর্মের কোনো সুযোগ নেই। কেউ যদি নাম ব্যবহার করে সংগঠনকে বদনাম করতে চাই তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্হা গ্রহণ করা হবে।’
বোয়ালিয়া থানায় দায়েরকৃত সাধারণ ডায়েরি সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার ১টা ৩৭ মিনিটে সাংবাদিক ফয়সালের বাড়ির সামনে এসে শাওন, রাসেল, টিংকু সহ অজ্ঞাত বেশকিছু সন্ত্রাসীরা বিশৃংঙ্খল ও ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি করে। তারা সাংবাদিক ফয়সালকে বাড়ির নিচে একটি চেক নিয়ে আসতে বলে। বাড়ির বাইরে চেকটি না আনলে তারা তালা ভেঙে বাসায় প্রবেশ করার চেষ্টা করে। বিষয়টি স্থানীয়দের নজরে আসলে লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন এবং মুঠোফোনে সাংবাদিককে ‘যেখানে পাবে, সেখানেই হাত-পা ভেঙে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন। ওই সময় ঘটনাটি অনেকেই দেখেন এবং তাদের চলে যেতে বলেন।
হত্যা ও অপহরণের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে সাংবাদিক ফয়সাল বলেন, মূলতঃ সন্ত্রাসী পাঠিয়ে অপহরণ ও হত্যার হুমকি দাতা হচ্ছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) জেনেটিক্স বিভাগে কর্মরত ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট শরিফুল ইসলামের। তিনি চাকরি দেবার নামে আবুল বাশার নামের আমার এক বন্ধুর কাছে থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়। সে নিজেকে সাবেক রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের খাস লোক ও চাকরি দেবার মতো তার ক্ষমতা আছে বলে আশ্বাস দিয়ে প্রতারণা করে।
বাশারের মা গুরুত্বর অসুস্থ। দ্রুত চিকিৎসার জন্য অর্থের প্রচন্ড প্রয়োজন। শরিফুলের কাছে এমন নাজুক পরিস্থিতিতে তার পাওনা অর্থ চাইতে গেলে সে আপত্তি জানাচ্ছে। এমনকি স্থানীয় কিছু মাস্তানকে দিয়ে তাকে ফোনে হুমকি দিচ্ছে। এসব ঘটনা আমাকে জানায় এবং তাকে সহযোগিতার অনুরোধ করে। বিষয়টি জেনেটিক্স বিভাগের সভাপতিকে পুরো ঘটনাটি বললে,তিনি শরিফুলকে অর্থ পরিশোধের জন্য নির্দেশ দেন। কিন্তু প্রতারক শরিফুল অর্থ পরিশোধ না করে উল্টো বিনোদপুর বাজারের কিছু মাদকাসক্ত সন্ত্রাসী ভাড়া করে আমাকে অপহরণ পূর্বক চেক কেড়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করে। পরে ব্যর্থ হয়ে শাওন নামের জামায়াতের ক্যাডার পরিচয় দিয়ে আমাকে মুঠোফোনে হত্যার হুমকি প্রদান করে তিনটি বাইকে মোট নয়জন সন্ত্রাসী এলাকা ছেড়ে যায়। পরে তাদের নাম,ঠিকানা সহ তথ্য সংগ্রহ করে বোয়ালিয়া থানায় প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা ও নিরাপত্তার স্বার্থে একটি জিডি করি বলে জানান সাংবাদিক ফয়সাল আহমেদ।
এ বিষয়ে বোয়ালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মেহেদী মাসুদ বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। তাকে প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে থানায় একটি জিডি করতে বলেছি। ঘটনাটি তদন্ত সাপেক্ষে খুব শিগগির আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।