মিনহাজ আলী, শিবগঞ্জ (বগুড়া): বগুড়ার শিবগঞ্জে কিটনাশক ব্যবসায়ীর দেয়া ভুল ওষুধের কারণে এক অতি দরিদ্র কৃষকের ১ বিঘা জমির ধানক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এতে করে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছে ঐ দরিদ্র কৃষকের পরিবার।
গত শুক্রবার উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের মধুপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের নাম ওবাইদুল ইসলাম(৪৫)। তিনি ৯নং দেউলী ইউনিয়নের মধুপুর গ্রমের বাসিন্দা।
ওবাইদুল ইসলামের স্ত্রী জানান, গত বুধবার সন্ধ্যায় আমার ছেলে রবিউল ধানক্ষেতের মাজরা পোকা দমনের জন্য পাকুড়তলার মিনহাজুলের মেসার্স মন্ডল ট্রেডার্স থেকে ওষুধ নিয়ে আসে। পরের দিন বৃহস্পতিবার তার দেয়া সেই ওষুধ স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে ধানক্ষেতে প্রয়োগ করলে ১ বিঘা জমির সমস্ত ধানগাছ পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়। ধানক্ষেত নষ্ট করে আমার সর্বনাশ করেছে কীটনাশক ব্যবসায়ী মিনহাজুল ইসলাম। ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর তার কাছে গিয়ে বললে সে আমাক ধমক দেয়, আর বলে যে পুড়ে যাওয়া পাতাগুলো ছেটে দিলেই ভালো হয়ে যাবে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, আমরা অসহায় গরিব মানুষ। অনেক কষ্টে ধার দেনা করে অন্যের এক বিঘা জমি বন্ধক নেই। মিনহাজুলের দেয়া ভুল ওষুধের কারণে আমার ক্ষেতের ধান নষ্ট হয়ে গেছে। আমি এখন কি করবো? ধার দেনা করে চাষাবাদ করে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি। আমি মিনহাজুলের কি এমন ক্ষতি করেছিলাম যে, সে আমার এত বড় একটা ক্ষতি করলো।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, আমরা কীটনাশকের জন্য দোকানে যাই। কিন্তু তাদের ভুলের কারণে যদি আমাদের ক্ষেত নষ্ট হয়ে যায় এমন ব্যবসায়ীদের কেন সার ও কীটনাশকের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। কৃষিকাজ করেই আমরা জীবিকা নির্বাহ করি।
অভিযুক্ত মন্ডল ট্রেডার্সের প্রোপাইটর মিনহাজুল ইসলাম দেউলী ইউনিয়নের ভরিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বলেন, ঐ ছেলে অটো ভ্যান থেকে নেমে এসে তড়িঘড়ি করে আমাকে বললেন যে, পুড়ে ফেলে দেওয়ার ওষুধ দেন। তখন আমি বললাম ৪০০ মিলি পরিমাণ খোলা ওষুধ ১৫০ ও বোতল ২২০ টাকা দাম পড়বে। উনি বোতল ওষুধটাই নিয়ে গেছে এবং ধানের জমিতে স্প্রে করেছে। উনি যদি বলতে ভুল করে তাহলে আমার আর কি করার আছে।
দেউলী ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আনারুল ইসলাম বলেন, কৃষক ওবাইদুল ইসলাম অত্যন্ত গরিব মানুষ। সে অনেক কষ্ট করে কিছুদিন আগে অন্যের ১ বিঘা জমি বন্ধক নিলো। তার অনেক আশা ছিলো এবার ঘরে একটু ধান তুলবে। কিন্তু কীটনাশক ব্যবসায়ী মিনহাজুল ভুল ওষুধ দিয়ে বেচারার স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে আমি মিনহাজুলকে বলেছি, যে ছেলেটা তোমার দোকান থেকে ওষুধ নিয়ে গেছে সে একজন ছাত্র মানুষ। কৃষিকাজ সম্পর্কে তার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তোমার উচিত ছিলো ভালোভাবে বুঝে শুনে ওষুধ দেওয়া।
শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মুজাহিদ সরকার জানান, এমন অভিযোগ বছরে দুই একটা পাওয়া যায়। ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়ের অসচেতনতার অভাবে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। তবে ব্যবসায়ীর ভুলের কারণে এমনটা হলে আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ঘটনায় শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।