আব্দুর রহমান, সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো গ্রেপ্তার হয়নি মামলার প্রধান আসামিরা।
হামলার ভিডিও ফুটেজ, স্থিরচিত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য থাকা সত্ত্বেও পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলার সাংবাদিকরা।
অবাক করার বিষয়, আসামিরা থানার সামনেই দলবল নিয়ে প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। গত ৩০ জুন দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে চলমান নেতৃত্ব সংকট ও অভ্যন্তরীণ বিরোধকে কেন্দ্র করে প্রেসক্লাব সভাপতি মো. আবুল কাশেম ও তার সঙ্গে থাকা সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো হয়। এতে অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক আহত হন। ঘটনার পরপরই প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাদী হয়ে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলায় প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে নাম উঠে আসে আবু নাসের মো. আবু সাঈদের। এছাড়া সহঅভিযুক্ত হিসেবে রয়েছে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী আল ইমরান, অমিত ঘোষ বাপ্পা ও শাকিলা ইসলাম জুঁই। প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই হামলায় সরাসরি অংশগ্রহণের অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত আল ইমরান ও অমিত ঘোষের বিরুদ্ধে এর আগেও মাদক, প্রতারণা ও ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। শাকিলা ইসলাম জুঁই সাতক্ষীরা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়া সত্ত্বেও হামলার দিন তাকে হাতে লোহার রড নিয়ে হামলায় অংশ নিতে দেখা গেছে—যার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ঘটনার পরদিনই প্রধান অভিযুক্ত আবু সাঈদ থানায় গিয়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা দায়ের করেন। সেখানে জেলার ৩৭ জন কর্মরত সাংবাদিককে আসামি করা হয়, যা সাংবাদিক সমাজের মতে একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও হয়রানিমূলক মামলা। তারা বলেন, প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করতে ও তদন্তকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেই এমন ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, “ভিডিও ও স্থিরচিত্রসহ পর্যাপ্ত প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ছয় দিনেও মূল আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। এটা প্রশাসনের চরম ব্যর্থতা।” তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
সাংবাদিকরা জানান, আসামিরা প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন এলাকায় এবং কখনো থানার সামনেই দলবল নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, অথচ পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করছে।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামিনুল হক বলেন, “ঘটনাস্থল থেকেই একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।” তবে থানার সামনেই আসামিদের ঘোরাফেরা নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “বিষয়টি তদন্ত কর্মকর্তা দেখবেন।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, “আসামিদের গ্রেপ্তারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে থানার সামনে আসামিরা ঘুরে বেড়াচ্ছে—এমন কোনো তথ্য আমার কাছে আসেনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সাতক্ষীরার সাংবাদিক সমাজ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, “হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার না করা হলে আমরা আইনি পথে যাওয়ার পাশাপাশি রাজপথেও নামতে বাধ্য হবো।” তারা সাংবাদিকতার নিরাপত্তা ও ন্যায়ের স্বার্থে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ দাবি করেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক :মোঃ আলামিনুল হক,নিবার্হী সম্পাদক :আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইসমাইল
যোগাযোগ :ফোনঃ +৮৮০২৫৭১৬০৭০০,মোবাইলঃ ০১৭১২৯৪১১১৬,Emails:jaijaikalcv@gmail.com
সম্পাদকীয় কার্যালয় : ১২০/এ, আর. এস. ভবন, ৩য় তলা, মতিঝিল, ঢাকা