মামুন উর রশিদ, কুড়িগ্রাম: জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান কুড়িগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক রুখসানা পারভীন।
২০১০ সালে তিনি বিদ্যালয়টিতে যোগদানের পর থেকেই তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠতে থাকে। এমনকি স্কুলের বিজ্ঞানাগারে নিজ স্বামীর বিশ্রামের জন্য বিছানা পেতে তৈরি করেছেন বিশ্রামাগার।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় বিজ্ঞান ল্যাবের ভিতর ব্যবহারিক উপকরণ রাখার আলমারি দিয়ে পার্টিশন বানিয়ে নিজ স্বামীর জন্য তৈরি করেছেন বিশ্রামাগার। সেখানে বিছানা পেতে পাশে রাখা হয়েছে টেলিভিশন, আলনা একটি হাইস্পিড স্ট্যান্ড ফ্যান। শিক্ষক মিলনাতয়নের পাশে তৈরি করা হয়েছে রান্নাঘর। রান্নাঘরে ফ্রিজ, গ্যাসের চুলা, রাইচকুকার, শো-কেসে রাখা প্লেট-বাটি-গ্লাস।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও আয়াদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক রুখসানা পারভীনের পৈত্রিক নিবাস গোপালগঞ্জে। তার স্বামীর বাড়ি লালমনিরহাট জেলা সদরে। লালমনিরহাট থেকে প্রাইভেট কারে করে স্বামী রেজাউল করিম সহ নিয়মিত স্কুলে যাতায়াত করতেন। স্কুল যেন তাদের দ্বিতীয় সংসার। স্কুল চলাকালীন তার স্বামী দিনভর স্কুলে থাকতেন। এই দম্পতির দুপুরের রান্নার জন্য নিযুক্ত রাখতেন আয়াদের এবং বাজারের জন্য পিয়নকে নিয়োজিত রাখতেন।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো কুড়িগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, স্বৈরাচারী আচরণ এবং দুর্নীতি ও অনিয়মের নানা অভিযোগ তুলে তাকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে। বিদ্যালয়টির বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা গত দুইদিন ধরে স্কুল ও স্কুলের সামনে অবস্থান করছে। বিজয় স্তম্ভ প্রাঙ্গনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে।
বৃহস্পতিবারও দিনভর আন্দোলন করেছে তারা। এদিন বিকালে বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন সহ বিভিন্ন কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে সকল ধরণের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আচ করতে পেরে গা ঢাকা দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক রুখসানা পারভীন। গত দুই দিন ধরে তিনি স্কুলে অনুপস্থিত।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা বলছেন, ‘গোপালগঞ্জে বাড়ি হওয়ায় তিনি সবসময় শিক্ষকদের থ্রেটের ওপর রাখতেন। বদলির ভয় দেখাতেন। ফলে ভয়ে কেউ মুখ খুলতেন না। কোনও নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে একরকম ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করেছেন প্রধান শিক্ষক। তিনি বেপরোয়াভাবে স্কুল পরিচালনা করছেন।’
শিক্ষকরা আরও বলেন, ‘ গত ১৫ বছরে প্রধান শিক্ষক স্কুল ফান্ডের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ, ভর্তি বাণিজ্য সহ নানা অনিয়ম ও অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন। ভয়ে সাধারণ শিক্ষকরা কিছু বলতে পারতেন না। স্কুল শিক্ষার্থীদের অন্দোলনের পর শিক্ষকরা সাহস ফিরে পেয়েছেন। তারা শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে একমত পোষণ করেছেন। তবে প্রধান শিক্ষক স্কুলে আসছেন না। তিনি ছুটির আবেদন দিলেও তার ছুটি মঞ্জুর হয়নি। ’
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ( প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্বে নিয়োজিত) তুষার কুমার রক্ষিত বলেন, ‘স্কুলের ভিতর স্বামীর জন্য বিশ্রামাগার আর রন্ধনশালা তৈরি বিধিসম্মত নয়। কিন্তু আমাদের সবার মুখ এতোদিন বন্ধ ছিল। আমাদের কিছু বলার ক্ষমতা ছিল না। কথা বললেই বদলির হুমকি, মর্নিং থেকে দিবা দিবা থেকে মর্নিং শিফটে দেওয়া সহ নানা ধরণের হয়রানির হুমকি আমাদের দমিয়ে রেখেছিল। এখন আমরা শিক্ষার্থীদের দাবি ও আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছি। বিষয়টি আমরা জেলা প্রশাসক ও উপপরিচালককে লিখিত আকারে জানিয়েছি।’