সুমন আল-মামুন, হরিণাকুণ্ডু (ঝিনাইদহ) : ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার একটি মাদ্রাসায় ২০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের পরিবর্তে অফিসের হিসাবরক্ষক কাম অফিস সহকারীকে দিয়ে বিধি বর্হিভূতভাবে ইবতেদায়ী প্রধান শিক্ষক এবং কম্পিউটর ল্যাব সহকারী নিয়োগের বোর্ড বসানোর অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল বারীর প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ বোর্ডে হিসাবরক্ষকে পাঠিয়েছেন। তবে রেজুলেশনে স্বাক্ষর করবেন তিনি। প্রতিনিধি পাঠানোর কোনো নিয়ম আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডিসি সাহেব প্রতিনিধি পাঠালে হবে, আমি পাঠালে হবে না কেন?
মাদ্রাসার নিয়োগপ্রত্যাশী দু’জন ভুক্তভোগীর মধ্যে আফরিন জাহান নামে একজন এই পাতানো নিয়োগ বন্ধের দাবি জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট আবেদন করেছে।
এই আবেদনে তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠান একাধিকবার নিয়োগের সার্কাকুলার দিয়েছে। আমি ল্যাব সহকারী পদে চাকরির জন্য প্রথমবার আবেদন করেছি। কিন্তু আমাকে কিছু না জানিয়ে এবং পরীক্ষার প্রবেশপত্র ইস্যু না করে টাকার বিনিময়ে সম্পুর্ণ বিধি বহির্ভূতভাবে এবং গোপনে নিয়োগ বোর্ড বসিয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে আমি এই অবৈধ নিয়োগ বোর্ড বাতিল এবং এই ঘুষখোর নিয়োগ কমিটির বিচার দাবি করছি।
সকাল নয়টায় অতি গোপনে উপজেলার গাড়াবাড়িয়া সিদ্দিকী দাখিল মাদ্রাসায় এই নিয়োগ বোর্ড বসান প্রতিষ্ঠানের সুপার আব্দুল আলিম। এই নিয়োগ নিয়ে রয়েছে অভিযোগ এবং নিয়োগের বিপরিতে রয়েছে মামলাও তবে কোনো বিষয় তোয়াক্কা না করে ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে দেশের এই কারফিউ পরিস্থিতির মধ্যেও নিয়োগ বোর্ড বসালেন মাদ্রাসা সুপার। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি বন্ধ করে স্বচ্ছতার সাথে বিধিমোতাবেক নিয়োগের আবেদন জানান এলাকাবাসী।
আরও জানা যায়, প্রতিষ্ঠানের দাতা সদস্য আসাদুল ইসলাম, ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর তারিখে গোপনে দেশের অপচলিত পত্রিকায় প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার কারণে হরিণাকুণ্ডু নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে নির্বাহী অফিসার উভয় পক্ষকে ডেকে একটি সমঝতা করে দেন।
এরপর আবার ষড়যন্ত্র করে গোপনে ১০অক্টেবর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলে দাতা সদস্য আদালতে মামলা করেন। যার নং ১৫/২৩ । মামলাটি চলমান রয়েছে। এই অবস্থায় আবার তৃতীয়বার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কমিটির কয়েকজনকে নিয়ে গোপনে মিটিং করে টাকা ভাগাভাগির মাধ্যমে গত ১৯ জুলাই সর্বত্র শাট ডাউনের মধ্যে নিযোগ বোর্ড বসানোর চেষ্টা করে। বিষয়টি জানাজানি হলে তা আর সম্ভব হয়নি। পরে একই কায়দায় গত ২৬ জুলাই কারফিউর মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা পরিচালকের ব্যক্তিগত সহকারী রাজিয়া সুলতানার উপস্থিতিতে নিয়োগ বোর্ড বসান। সেখানে বিধি মোতাবেক শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের উপস্থিত বাধ্যতামূলক থাকলেও তার পরিবর্তে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের হিসাবরক্ষক মোঃ ফিরোজ আহমেদ প্রতিনিধিত্ব করেণ যা সম্পুর্ণ অবৈধ।
এবিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল বারী বলেন, আমার প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ বোর্ডে হিসাবরক্ষকে পাঠিয়েছি, তবে রেজুলেশনে আমি স্বক্ষর করবো। তাকে প্রতিনিধি পাঠানোর নিয়ম আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন ডিসি সাহেব প্রতিনিধি পাঠালে হবে, আমি পাঠালে হবে না কেন?
এ বিষয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারই মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি। উনাকে স্বশরীরে নিয়োগ বোর্ডে উপস্থিত থাকতে হবে। উনি কাউকে প্রতিনিধি হিসেবে পাঠাতে পারেন না, পাঠালে নিয়োগ বোর্ড কার্যকর নয়।
নিয়োগ সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানের সুপারেন্টটেন্ড মো. আব্দুল আলিম বলেন, আমরা মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যারা নিয়োগ বোর্ডে আসছেন তাদের দিয়েই বোর্ড গঠন করা হয়েছে। সঠিক হয়েছে কিনা ওনারা ভাল জানেন। মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে বলেন কোর্টের কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি। প্রতিষ্ঠানের সভাপতি টুলু মুন্সীকে বার বার ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।