সুমন আল-মামুন, হরিণাকুণ্ডু (ঝিনাইদহ): প্লেটে প্লেটে সাজানো আছে হরেক রকম পিঠা। এসব সুস্বাদু পিঠা খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, অতিথি ও দর্শনার্থীরা। রোববার ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু সালেহা বেগম মহিলা ডিগ্রি কলেজে পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়। এই উৎসবে শিক্ষার্থীরা ৮০ ধরনের পিঠা নিয়ে হাজির হন।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ‘ভোর হল ঝিনাইদহ’ এর আয়োজিত নবান্ন উৎসব ও সাহিত্য-সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়ে কলেজ মাঠে পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়। কলেজ প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীরা স্টল স্থাপন করে বিভিন্ন প্রকারের বাহারি পিঠা নিয়ে বসে ছিলেন।
সায়মা নামের একাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী নানান পিঠার পসরা সাজিয়েছেন তাদের ‘ মরমি কবি লালন শাহ’ নামের স্টলে। তার সঙ্গে রয়েছেন রুবিনা, শেফালি, সাদিয়া, সামান্তা, ফারজানা আক্তার, নাসরিন নাহার, উষা, জেসিকা রুবাইয়া, সহ তাঁর অনেক সহপাঠী। তাদের স্টলে রয়েছে ইলিশ পিঠা, নকশি পিঠা, ভাপা, ছাদ পিঠা, শামুক পিঠা, পাটিসাপটা, শর্ষে ভর্তা, গ্রিল, মালাই রোলসহ ২৫ রকমের পিঠা। শিক্ষার্থীরা রাত জেগে পরিবার ও বন্ধুরা মিলে বানিয়েছেন এসব পিঠা।
সায়মা বলেন, রাত জেগে মায়ের সঙ্গে তিনি ৩ রকমের পিঠা বানিয়েছেন। শিক্ষা জীবনের প্রথম পিঠা উৎসব। তাই এই উৎসব ঘিরে তিনি খুবই আনন্দিত। তাঁদের স্টলে এসে সহপাঠী, জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অতিথিরা পিঠা খেয়েছেন।
রুবাইয়া ইসলাম তিশা নামের ডিগ্রী প্রথম বর্ষের ছাত্রী বলেন, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠা প্রায় বিলুপ্তির পথে, কিন্তু আমরা এই উৎসবের মধ্যে দিয়ে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে সবার মাঝে তুলে ধরতে পেরেছি। তার স্টলে প্রায় ২০ রকমের গ্রাম বাংলার বিলুপ্তি প্রায় সব পিঠা নিয়ে হাজির হন।
স্নাতক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা, মরমি লালন শাহ, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান, ডাঃ সেলিম আল দীন, শহীদ আবু সাঈদ, শহীদ মির মুগ্ধ, শহীদ রাকিব হোসেন, শহীদ সাব্বির হোসেন, শহীস শুভশীল নামের ৮টি স্টলে ৮০ রকমের পিঠা নিয়ে হাজির হয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এসব পিঠার মধ্যে ভাপা পিঠা, পুলি পিঠা, রাজদুলালি, চিতই, দুধ পায়েস, জামাই পিঠা, চাঁদ পিঠা, শিম পিঠা, পান পিঠা, বকুল পিঠা, কদম পিঠা, দুধ গোলাপসহ বাহারি নামের হরেক রকমের পিঠা এনেছিলেন।
উৎসবে এসেছিলেন তনুশ্রী নামের এক গৃহবধূ, তিনি বলেন, প্রথমবার এই নবান্ন উৎসবে এসেছি। তিনি বলেন, এখানে এসে তাঁর ছোটবেলার মা-দাদিদের পিঠা বানানোর কথা মনে পড়ে যায়। বিভিন্ন স্টল থেকে তিনি কয়েক রকমের পিঠা কিনে খেয়েছেন।
পিঠামেলায় আয়োজকদের একজন কলেজের অধ্যক্ষ মোক্তার রহমান জানান, এই বছরেই সর্ব প্রথম “ভোর হল ঝিনাইদহ” নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হয়। শিক্ষার্থীরা গ্রাম বাংলার বিলুপ্তের পথে প্রায় সব ধরনের পিঠা নিযে হয়। তিনি বলেন, আমাদের মূল লক্ষ বিলুপ্তির পথে সব রকমের পিঠা ছাত্রীরা চিনতে পারে সেই লক্ষ্যে এর আয়োজন। এসময় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অতিথিদের পদচারণে মুখর হয় কলেজ প্রাঙ্গন। সব স্টল সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে।
স্টল পরিদর্শন করেন অত্র কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও ঝিনাইদহ জেলা বিএনপি’র সভাপতি, জননেতা আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট এম এ মজিদ। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বি. এম. তারিক-উজ-জামান।