মো. এরশাদ আলী, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) : হাটহাজারীতে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে প্রধান শিক্ষকের (ভারপ্রাপ্ত) পদে সহকারী শিক্ষিকা। নিয়মবহির্ভূত জানিয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদকে জ্যেষ্ঠ সিনিয়র শিক্ষককে দায়িত্ব প্রদানে লিখিতভাবে অনুরোধ করলেও কর্ণপাত করছেন না তারা।
অপরদিকে পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্তকেই চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে এ বিষয়ে কমিটির সাথে কথা বলতে প্রতিবেদককে অনুরোধ করেন অভিযুক্ত শিক্ষিকা। ঘটনাটি উপজেলাধীন ধলই ইউনিয়নের এনায়েতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের।
জানা গেছে, চলতি বছরের ১০ মার্চ পদত্যাগ জনিত কারণে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদটি শূন্য হয়। কিন্তু পূর্ব থেকে সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদটিও শূন্য ছিল। ঐ পদে ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষিকা অভিযুক্ত শুভ্রা দত্ত দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
এদিকে শূন্য প্রধান শিক্ষকের পদে পরিচালনা কমিটি বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো (সর্বশেষ সংশোধনী) ২৮ মার্চ, ২০২১, ধারা-১৩ লঙ্ঘন করে সহকারী প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা শুভ্রা দত্তকে দায়িত্ব প্রদান করেন। এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো ধারা-১৩ মোতাবেক জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করা হয় যার এমপিও আগের। এক্ষেত্রে রেকর্ডপত্র মোতাবেক মোহাম্মদ আলীর এমপিও শুভ্রা দত্তের তিন বছর পূর্বের। এ বিষয়ে অপারগ হয়ে ২ এপ্রিল মোহাম্মদ আলী জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবরে অভিযোগ দিলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশনায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের তদন্তের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৪ মে পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত জ্যেষ্ঠ সিনিয়র শিক্ষক মোহাম্মদ আলীকে দায়িত্ব প্রদানের অনুরোধ করেন জেলা শিক্ষা অফিসার উত্তম খীসা। একইসাথে ৪ জুন জনতা ব্যাংক পিএলসি হাটহাজারী শাখার ব্যবস্থাপকের প্রতি প্রতিষ্ঠানটির এমপিও বাবদ অর্থ ছাড়করণে এমপিও নীতিমালার ২০২১ এর ১৩ বিধি ও ১৭.১০ বিধি অনুসরণ পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণে লিখিত অনুরোধ করেন তিনি।
সরেজমিনে অভিযুক্ত শিক্ষিকা জানান, সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য হলে অভিযোগকারীকে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি প্রস্তাব দিলে তিনি নাকোচ করে অপর একজনকে করার প্রস্তাব করেন। কমিটি তা মেনে নেয়। কয়েকমাস পর দায়িত্ব পাওয়া শিক্ষক অবসরে চলে গেলে কমিটি অভিযোগকারীকে প্রস্তাব দিলে তিনি আবারো নাকোচ করে দেন। পরে সকলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাকে প্রস্তাব দিলে শূন্য পদে ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন তিনি। পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ জনিত কারণে পদটি শূন্য হলে পরিচালনা কমিটি সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে প্রধান শিক্ষকের (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্ব প্রদান করেন। তবে নিয়মতান্ত্রিক কিনা প্রশ্নে না বলে উত্তর দিলেও পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্তে দায়িত্বে আছেন উল্লেখ করে তাদের সাথে কথা বলার অনুরোধ জানান।
জানতে চাইলে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. খোরশেদুল আলম চৌধুরী বলেন, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের অনুরোধ পেয়েছেন তবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এক তরফা প্রতিবেদন দিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে মৌখিকভাবে এ বিষয়ে জানিয়েছি এবং জেলাকে লিখিতভাবে জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে প্রথমে প্রতিবেদকের ফোন পেয়ে সাংবাদিকরা সব জায়গায় নাক গলায় কেন উল্লেখ ইতস্তত বোধ করেন। পরে বলেন অভিযোগকারীকে দুই দুইবার সহকারী প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিতে চেয়েছিলেন উনি নেন নি। উনার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। আপনারা (প্রতিবেদক) তদন্ত করেন।
এদিকে সাবেক পরিচালনা কমিটি, অভিভাবক ও শিক্ষার্থী কেউ তাকে তার কর্মের কারণে পছন্দ করেন না। প্রধান শিক্ষকের (ভারপ্রাপ্ত) পদে প্রস্তাবনার উত্তরে বলেন, যেহেতু আগেও দায়িত্ব নেয়ার প্রস্তাব নাকোচ করেছেন সেহেতু ভেবে নিয়েছিলাম এটাও নিবেন না পাশাপাশি তাকে যেহেতু অনেকেই পছন্দ করেন না তাই জোর দিয়ে বলা হয়নি এ পদের দায়িত্ব নিতে। তারপরও যদি নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতেন তাহলে সকলে বসে একটা সিদ্ধান্ত নেয়া যেত। উনি (মোহাম্মদ আলী) নিয়মিত উপস্থিত না হয়ে বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে শুধু অভিযোগ নিয়ে ব্যস্ত। কমিটির মেয়াদের বিষয়ে বলেন, এ নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। আইনকে শ্রদ্ধা করেন জানিয়ে বলেন আদালত এখনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। এর আগে কেউ অবৈধ বললে তো আর অবৈধ হয় না। এসময় তিনি প্রতিবেদককে বার বার এমপি মহোদয় এসব বিষয় অবগত বলে জানান।
এবিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. মাইনুদ্দিন মজুমদার বলেন, তদন্ত করে প্রতিবেদন জেলায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। উর্ধ্বতনের সাথে কথা বলার অনুরোধ জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম মশিউজ্জামান বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে জানানো হয়েছে। তারা না মানলে লিখিতভাবে শিক্ষা বোর্ডে জানানো হবে। বেতন প্রদানের বিষয়ে বলেন, মানবিক চিন্তা করে কারো বেতন আটকানো হয়নি।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা উত্তম খীসা বলেন, লিখিতভাবে জানানোর পরও যদি পরিচালনা কমিটি এটার সমাধান না করে তাহলে সরাসরি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবগত করা হবে। কেউ চাইলেই নিজেদের ইচ্ছেমত কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা। নীতিমালা মেনেই সবাইকে চলতে হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক :মোঃ আলামিনুল হক,নিবার্হী সম্পাদক :আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইসমাইল
যোগাযোগ :ফোনঃ +৮৮০২৫৭১৬০৭০০,মোবাইলঃ ০১৭১২৯৪১১১৬,Emails:jaijaikalcv@gmail.com
সম্পাদকীয় কার্যালয় : ১২০/এ, আর. এস. ভবন, ৩য় তলা, মতিঝিল, ঢাকা