মোহাম্মদ মনির, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার: শহীদ খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ’র বাবা ডা. কামরুল হাসান স্বাগত বক্তব্য বলেন, আমরা যেন আমাদের শহীদদেরকে ভুলে না যাই। আহতদের কাঁধ থেকে যেন আমাদের হাত সরে না যায়। এরাই আমাদেরকে এই স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন।
মঙ্গলবার রাজধানীর লালমাটিয়ায় মসজিদ সমাজ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শহীদ আবু সাঈদ কর্ণার উদ্বোধন এবং জুলাই ২৪ স্বাধীনতার স্মরণে ‘সুপ্রভাত বাংলাদেশ’ শিরোনামে গ্রাফিতি উন্মোচন অনুষ্ঠানে শহীদ খালিদ হাসান সাইফুল্লাহর পিতা ডা: কামরুল হাসান নিজ হাতে ফিতা কেটে আবু সাঈদ কর্ণার উদ্বোধন করেন।
বক্তব্যে তিনি বলেন, স্বৈরাচারের দোসর পুলিশ বাহিনী মায়ের পেট থেকে জন্ম নিয়েছিল, এটাই ভুলে গিয়েছিল। আমার সন্তানের গায়ে ৭১টি বুলেট বিদ্ধ হয়েছিল। লাশটাও আমি সুস্থভাবে আনতে পারিনি। উল্টো আমাদেরকে আসামি করার হুমকি দিয়েছিলেন।
এভাবেই স্মৃতিচারণ করছিলেন তিনি। এ সময় হল রুমের সকলেই আবগেপ্রবণ হয়ে পড়েন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ বলেন, আজ বেদনাবিধুর চিত্তে আবু সাঈদ-মুগ্ধকে স্মরণ করছি। তাদের মতো আমাদেরকেও অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। শহীদ আবু সাঈদদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না।
শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিন বলেন, রাজাকার শব্দটি পরহেজগার মানুষদেরকে ঘায়েল করার একটি অস্ত্র। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র সবসময় এদেশে আওয়ামী লীগের ঘাড়ের উপরে সওয়ার হয়। আগে উঠেছিল মুজিবের ঘাড়ে, এখন ফ্যাসিস্ট হাসিনার ঘাড়ে।
সঠিক ইতিহার জানার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে এ দেশে হিন্দুদের রক্ত ঝড়ে নাই। অথচ গত ১৫ বছর ধরে আমরা এই দেশের সংঘ্যালঘু জাতিতে পরিণত হয়েছিলাম। ২৫২ জন নতুন এসাই নিয়োগের মধ্যে ৯৬ জনই হিন্দু। সকল বড় বড় সেক্টরে তাদেরকে বসানো হয়েছে। এগুলো সব র’য়ের ষড়যন্ত্র। এ দেশটাকে আওয়ামী লীগ নয়, বরং র চালিয়েছিল।
তিনি বলেন, আমাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের ভুল ভাল ইতিহাস শুানানো হয়। ৩ লাখ শহীদ হয়েছে, অথচ ৩০ লাখের কথা বলা হয়েছে। শেখ মুজিব লাখ আর মিলিয়নের হিসাব না বুঝার কারণেই এই কথা বলেছেন।
তিনি আরও বলেন, আমার পরিবারে ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা। আমার বড় ভাই আলেম ও মুক্তিযোদ্ধা। অথচ মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে আলেমদেরকে দাঁড় করানো হয়েছে। রাজাকারের চিত্র বানালে দাড়ি টুপি লাগিয়ে দেয়া হয়।
তিনি যোগ করেন, আওয়ামী লীগ একটা রাজাকারের তালিকা তৈরি করেছিল। সেখানে সবচেয়ে কম (যা ১০০ এরও কম) ছিল জামায়াত ইসলামীর লোক। সবচেয়ে বেশি ছিল আওয়ামী লীগের। যার ফলে সেই তালিকা আর প্রকাশ পায় নাই। এমনকি হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদেরও কোনো তালিকা করেন নাই। কারণ শেখ পরিবারের কোনো মুক্তিযোদ্ধা নাই। একজন শেখ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ছিল, কিন্তু সে ছিল জাতীয় পার্টির মন্ত্রী, কখনও আওয়ামী লীগ করে নাই।
সোমালিয়ার দারুস সালাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আসিফ এস মিজান বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদরা এ দেশে জীবন দিয়েছে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য। তারা তাদের কাজ করেছে, এখন আমাদের এই সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করার সময়। সকল ভেদাভেদ ভুলে আমাদেরকে অবশ্যই দেশ বিনির্মানে কাজ করতে হবে। ড. মুহাম্মদ ইউনুস জনগনের আশা আকাঙ্খার বিপ্লোবোত্তর সরকার। এখনই তাকে সব দিক থেকে চাপ দিলে হবে না। বরং সময় দিতে হবে, সহযোগিতা করতে হবে। ইন্টেরিম সরকার সঠিক পথেই কাজ করে যাচ্ছে বলে আমার মনে হয়। এখনই তাদের উপর থেকে আস্থা হারালে হবে না। জুলাইয়ের শহীদরেকে আমাদের মনে রাখতে হবে।
হেফাজতের নায়েবে আমীর মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী বলেন, রক্ত বহু দেয়া হয়েছে। এখন আর রক্ত দেয়ার সময় নাই। এখন রক্ত নেয়ার সময়। এখন কিসাস করার সময়। বিপ্লবী সরকার না করে আপনারা ভুল করছেন। আমাদের শত শত লোক জীবন হারিয়েছে, আজও পর্যন্ত তাদের নামের তালিকা করতে পারেন নাই।
তিনি আরও বলেন, এত ঢিলেমি না করে দ্রুত কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে আপনারা নির্বাচিত নয়। আপনারা সাগর সমান কাজ নিলে হবে না। যে পরিবর্তনগুলো জরুরি সেগুলো করে নির্বাচন দিন। বৈষম্য হয়েছে মানে জুলুম হয়েছে। আমরা আর এই জুলুমের শিকার হয়েছি। আর জুলুমের শিকার হতে চাই না। পাকিস্তান হওয়ার সময় কলকাতা থেকে দিল্লি পর্যন্ত প্রত্যেকটা গাছে গাছে আলেমদেরকে মেরে ঝুলিয়ে রেখেছিল। এখনও আলেমরা রক্ত দিয়ে যাচ্ছে। আর রক্ত দেয়া নয়। এবার রক্ত নেয়ার পালা। এবার কিসাস করা হবে।
লেখক ও গবেষক হারুন অর রশীদ বলেন, আমরা জুলাই মাসের শহীদদেরকে ভুলবো না। আমি মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম। কিন্তু ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে আমি মানি না। কারণ ঐ যুদ্ধকে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ বলা হয়। এমনকি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানীর হাতে আত্মসমর্পণ করা হয় নাই। এতে করে আমাদের স্বাধীনতা ছিনতাই হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এই স্বাধীনতা আমাদের এটা একটা গণবিপ্লব। এই গণবিপ্লবের শহীদরা আমাদের গর্বের সন্তান। এই আবু সাঈদরাই নতুন স্বাধীনতার বীর যোদ্ধা।
সভাপতি নওয়াব আলী ভূ্ইয়া বলেন, মসজিদ ভিত্তিক সমাজ তৈরি হলে এ দেশে আর কোনো রকম বৈষম্য থাকবে না। আবু সাঈদরা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। এই স্বাধীনতাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের এই সমাজকে সুন্দরভাবে তৈরি করতে হবে। সকল মসজিদে জুলাই বিপ্লবের শহীদদের জন্য দোয়া করতে হবে। আমরা অবশ্যই এই দেশকে আদর্শ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবই করব ইনশাআল্লাহ!