বিশেষ প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে বাজার কিংবা দোকান, সব জায়গায় হরহামেশাই চলছে পলিথিনের ব্যবহার। অধিকাংশ ক্রেতার হাতেই দেখা যাচ্ছে পলিথিন ব্যাগ। এটা বন্ধে প্রশাসনের জোরালো উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানান সচেতন মহল।
তারা বলছেন, সাধারণ মানুষ পলিথিনের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে তেমন অবগত না থাকায় দিন দিন বেড়েই চলছে এর ব্যবহার। এতে করে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, ক্ষতি হচ্ছে কৃষি জমি।
সরেজমিনে রোববার উপজেলার দোকানপাট ও বাজারগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, সবজি, মাছ, মাংস, ডাল যা-ই কিনছেন, তার জন্য নিতে হচ্ছে পলিথিন ব্যাগ। যে কোনো পণ্য কিনলেই তা বহনের জন্য পলিথিন ব্যাগ ধরিয়ে দিচ্ছেন বিক্রেতারা।
উপজেলার চান্দাইকোনা, ধানগড়া, সোনাখাড়া, ধামাইনগর, ঘুড়কা,নলকা, ধুবিল ইউনিয়নের কয়েকটি বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পলিথিন ব্যাগ তৈরি হয় খোদ রাজধানীতে। সেখান থেকে হাতবদল হয়ে প্রতিটি জেলা-উপজেলায় ডিলারদের কাছে চলে আসে। সেখান থেকে সপ্তাহের যে কোনো একদিন কয়েকজন খুচরা বিক্রেতা এসে পলিথিন ব্যাগ দিয়ে যান। দোকানে দোকানে ঘুরে বিক্রি করেন এসব ব্যাগ।
ব্যবসায়ীদের মতে উপজেলায় প্রতি সপ্তাহে অন্তত ৩০ হাজার পলিথিন বিক্রি হয়।
চান্দাইকোনা ইউনিয়নের লক্ষিকোলা গ্রামের বাসিন্দা শামীম হোসেন বলেন, এখন আর বাজার করতে গেলে ব্যাগ কেনা লাগে না। কিছু কেনার সময় বিক্রেতারাই পলিথিন ব্যাগে ভরে দেন। আবার অনেক মুদি দোকানি বিভিন্ন মালামাল আধা কেজি এক কেজি বা দুই কেজি করে মেপে পলিথিন ব্যাগে রেখে দেন বিক্রির সুবিধার্থে। কাগজের মোড়ক বা পাটের তৈরি কোনো ব্যাগই বাজারে নেই। পলিথিনের সহজলভ্যতার কারণে এর ব্যবহার বেড়েছে।
ব্যবসায়ী ফরিদুল ইসলাম বলেন, পলিথিন ব্যবহার বন্ধে আইন থাকলেও তার বাস্তবায়ন নাই। যার কারণে পলিথিন দিন দিন বেড়েই চলেছে। খুব সহজে এটি এখন পাওয়া যায়।
পরিবেশ নিয়ে কাজ করেন স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী দীপক কুমার কর জানান, নিষিদ্ধ এই পলিথিন একই সঙ্গে কৃষিজমি ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে। এটি একটি অপচনশীল প্লাস্টিক জাতীয় পদার্থ। যা দীর্ঘদিন পর্যন্ত অপরিবর্তিত, অবিকৃত থেকে মাটি ও পানি দূষিত করে। এতে মাটির উর্বরতা শক্তি ও গুণ নষ্ট হয়ে কমে যায় ফলন। এ বিষয়ে প্রতিকার পেতে আমরা স্থানীয় প্রশাসনের নিকট হস্তক্ষেপ কামনা করি।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, পলিথিন মোড়ানো গরম খাবার খেলে মানুষের ক্যান্সার ও চর্মরোগের সংক্রমণ হতে পারে। পলিথিনে মাছ ও মাংস প্যাকিং করলে তাতে অবায়বীয় ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয়, যা দ্রুত পচনে সহায়তা করে। পলিথিন থেকে সৃষ্ট ব্যাকটেরিয়া ত্বকের বিভিন্ন রোগের জন্ম দেয়, যা থেকে এমনকি ডায়রিয়া ও আমাশয় হতে পারে।
রায়গঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আমিমুল ইহসান তৌহিদ বলেন, পলিথিন পরিবেশের জন্য হুমকি স্বরূপ। এটি মানুষ ও পরিবেশের জন্য দুর্যোগ ও দুর্ভোগ বয়ে আনে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রউফ বলেন, পলিথিন ব্যবহার করে তা মাটিতে ফেলার পর পঁচে না এবং এতে মাটির উর্বর শক্তি কমিয়ে ফেলে।
রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, ক্ষতিকর পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার বন্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।