
এস.এম পারভেজ আলম আদেল, স্টাফ রিপোর্টার: সরাইল যেন বদলে যাচ্ছে ধীরে ধীরে—অভ্যন্তরীণ প্রশাসন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের জীবনযাপনেও লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। আর এই পরিবর্তনের অগ্রনায়ক হিসেবে যার নাম বারবার উচ্চারিত হচ্ছে তিনি হলেন উপজেলার বর্তমান নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মোশারফ হোসাইন।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ৩৬তম ব্যাচের এই কর্মকর্তা দায়িত্ব নিয়েছেন গত বছরের ১৪ নভেম্বর সরাইল উপজেলার ২৬তম ইউএনও হিসেবে। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তিনি একের পর এক জনবান্ধব ও মানবিক পদক্ষেপ নিয়ে ইতিবাচক আলোচনায় চলে এসেছেন। সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলোতে কমেছে হয়রানি ও জনভোগান্তি। বেড়েছে জবাবদিহিতা, গতি এবং সেবার মান। ইউএনও মোশারফের কঠোর মনিটরিং ও আন্তরিক নেতৃত্বে কর্মকর্তাদের মধ্যে ফিরে এসেছে দায়বদ্ধতার অনুভব।
এই ইউএনওর কাজ কেবল অফিসের চৌহদ্দিতে সীমাবদ্ধ নয়। ফাঁকা সময় পেলেই তিনি ছুটে যান মাঠে, কৃষিজমি, হাট-বাজার কিংবা কোনো বিদ্যালয়ে। অবৈধ মাটি কাটা বন্ধে অভিযান পরিচালনা করেন, বাজারে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং করেন, আবার কখনো মাদকের বিরুদ্ধে গড়ে তুলছেন সামাজিক সচেতনতা।
সম্প্রতি উপজেলায় টিউবওয়েলে পানি না ওঠায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজরে এলে ইউএনও নিজেই তাঁর ফেসবুক পোস্টে তা তুলে ধরে সমস্যার গভীরতা ব্যাখ্যা করেন। পরে ৯টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের সঙ্গে সভা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেন। এতে কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হয় সমাধানের পথচলা। শিক্ষা উন্নয়নে সরাইলের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইউএনও মোহাম্মদ মোশারফ হোসাইন আয়োজন করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সকল শিক্ষকদের নিয়ে একটি সম্মিলিত সেমিনার।
এই সেমিনারে শিক্ষকদের পেশাগত নৈতিকতা, শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ গঠন, আধুনিক শিক্ষা কৌশল ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়। ইউএনও নিজেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে দীর্ঘ সময় মঞ্চে দাঁড়িয়ে শিক্ষকদের উদ্বুদ্ধ করেন শিক্ষা ব্যবস্থায় মানোন্নয়ন ও জাতিগঠনে সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বানে। শিক্ষক সমাজ এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এটি শুধু একটি সেমিনার নয়, বরং সরাইলের শিক্ষা খাতের জন্য নতুন দিগন্তের সূচনা। সরাইল সদর ইউনিয়নের লীলবানু, কালিকচ্ছের রঞ্জিতা সাহা কিংবা নন্দীপাড়ার কিছু হিন্দু পরিবার সকলেই পেয়েছেন তার সহযোগিতা। প্রকৃত উপকারভোগীদের কাছে সেবা পৌঁছে দিতে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন যেন নিজের মমতা থেকেই।
সরাইল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মৃধা আহমেদুল কামাল বলেন, “ইউএনও মোশারফ হোসাইন একজন সংস্কৃতিমনা, পাঠপ্রিয়, শিক্ষকবান্ধব কর্মকর্তা। শুধু প্রশাসক নন, একজন চিন্তাশীল মানুষ—যিনি সময় পেলে দেশ সমাজ এবং পরিবেশের সময় সাময়িকি বিষয় নিয়ে গবেষণা ও লেখালেখিও করেন যাহা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে সচেতন মহলের নজর কেড়েছেন।
পাঠশালা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম মানিক এবং সরাইল উপজেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতা মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, “সরাইলে যত ইউএনও এসেছেন, মোশারফ স্যার তাঁদের মধ্যে ব্যতিক্রম। তার দরজা সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য খোলা থাকে সবসময়।” সরাইল উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মাস্টার ও উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব নূর-আলম বলেন, “তিনি একজন সাহসী, সৎ ও দায়িত্বশীল ইউএনও। তার নেতৃত্বে সরাইল এগিয়ে চলেছে।”
নিজের লক্ষ্য সম্পর্কে ইউএনও মোহাম্মদ মোশারফ হোসাইন বলেন, “সরাইলের মানুষ খুব সাহসী, অঙ্গীকারবদ্ধ। আমি বিশ্বাস করি, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সরাইলকে একটি মানবিক ও সমৃদ্ধ উপজেলা হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। আমি আমার সাধ্যমতো সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি। সকলের সহযোগিতা পেলে স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবেই।”