
যায়যায়কাল ডেস্ক: কট্টর ডানপন্থি নেতা জর্জিয়া মেলোনির শাসনামলে ইতালিতে বিদেশি নাগরিকের সংখ্যা বেড়েছে।
এ মুহূর্তে দেশটির মোট কর্মশক্তির ১০ দশমিক ৫ শতাংশই বিদেশি নাগরিক। শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সংখ্যাটি ১১ দশমিক ৫ শতাংশ।
এই পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে কারিতাস-মিগ্রান্তেস ফাউন্ডেশন।
৩৪তম কারিতাস-মিগ্রান্তেস অভিবাসন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইতালির মোট জনসংখ্যার ৯ দশমিক ২ শতাংশ, অর্থাৎ, অন্তত ৫৪ লাখ মানুষ বিদেশি।
গত ১৪ অক্টোবর দেশটির রাজধানী রোমে ‘বিদেশি বংশোদ্ভূত তারুণ্য: ইতালির রূপান্তর ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
ইতালিতে বসবাসরত বিদেশিদের প্রধান উৎস দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে রোমানিয়া, মরক্কো, আলবেনিয়া, ইউক্রেন ও চীনকে।
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পেরু ও বাংলাদেশ থেকে আসা নাগরিকের সংখ্যা বেড়েছে।
মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে ইতালিতে বাংলাদেশি নাগরিকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
ইতালির অর্ধেকেরও বেশি প্রদেশে নতুন ইস্যু করা রেসিডেন্স পারমিট বা বসবাসের অনুমতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশিরা এখন শীর্ষ তিনটি দেশের মধ্যে রয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, ইতালিতে নিয়মিতভাবে বসবাসরত বিদেশি নাগরিকরা মূলত দেশটির মধ্য ও উত্তরাঞ্চলে থাকেন। তবে, অনিয়মিত অভিবাসীদের উপস্থিতি সারা দেশে অসমভাবে ছড়িয়ে আছে।
এতে আরো বলা হয়েছে, অনিয়মিত অভিবাসীদের আবাসন পরিস্থিতি খুবই অনিশ্চিত।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটা নির্ভর করে স্থানীয় প্রেক্ষাপটের ওপর। দক্ষিণ ইতালির গ্রাম থেকে শুরু করে মধ্য ও উত্তরাঞ্চলের শহরগুলোতেও তাদের বসবাস রয়েছে।
আবাসন নিয়ে কারিতাস ইতালি ও মিগ্রান্তেস ফাউন্ডেশনের যৌথ সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশটিতে তীব্র আবাসন সংকট চলছে। যার ফলে বৈষম্য ও দুর্দশার পাশাপাশি নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে।
এ কারণে, ইতালিয়ান সমাজে বিদেশি নাগরিকেরা ব্যাপকভাবে পিছিয়ে পড়ছেন বলে মন্তব্য করা হয়।
দেশটিতে নিম্নমুখী জন্মহারের মধ্যেও ২০২৪ সালে মোট তিন লাখ ৭০ হাজার শিশু জন্ম নিয়েছে। তাদের মধ্যে ২১ শতাংশের বেশি নবজাতকের অভিভাবকদের অন্তত একজন বিদেশি।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই পরিসংখ্যান জনসংখ্যার পুনর্গঠনে অভিবাসী পরিবারগুলোর গঠনমূলক অবদানের একটি স্পষ্ট সূচক।
একইভাবে, ২০২৪ সালে নতুন রেকর্ড তৈরি করে দুই লাখ ১৭ হাজারের বেশি মানুষ ইতালির নাগরিকত্ব অর্জন করেছেন। যা চলমান পরিবর্তনগুলো বুঝতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বিশেষ করে ইতালির শহুরে ও গ্রামীণ জনপদে বিদেশিদের উপস্থিতি নিম্নমুখী জন্মহার ঠেকাতে সহায়তা করেছে এবং স্কুল, সেবা ও মৌলিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে সচল রেখেছে।
প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়েছে, ইতালিতে বিভিন্ন খাতে কর্মরত রয়েছেন দুই কোটি ৪০ লাখ মানুষ। এদের মধ্যে ২৫ লাখের বেশি বিদেশি কর্মী (১০ দশমিক ৫ শতাংশ)।
গত বছর দেশটিতে মোট কর্মসংস্থানের হার বেড়ে ৬১ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে (২০২৩ সালের তুলনায় ১ শতাংশ বেড়েছে)।
তবে এই পরিসংখ্যানে বড় ধরনের বৈষম্য ফুটে উঠেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের নাগরিকদের মধ্যে এটি কমে ৫৭ দশমিক ৬ শতাংশে নেমেছে। ইউরোপীয় নাগরিকদের মধ্যে এটি স্থিতিশীল (৬২ দশমিক ২ শতাংশ)।
মোটের ওপর কমেছে বেকারত্ব (১৪ দশমিক ৬ শতাংশ)। এক্ষেত্রে ইতালীয়দের বেকারত্বের হার কমেছে ১৬ শতাংশ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের নাগরিকদের মধ্যে কমেছে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। এখনও তাদের মধ্যে ১০ দশমিক ২ শতাংশ বেকারত্বের মুখোমুখি। আর ইতালীয়দের মধ্যে সেটি ৬ দশমিক ১ শতাংশ।
তবুও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশিরা ক্রমশ ভালো করছেন। ২০২৪ সালে বিদেশি নাগরিকদের অন্তর্ভুক্ত করে ২৬ লাখ ৭৩ হাজার ৬৯৬টি নতুন চাকরির চুক্তি নিবন্ধিত হয়েছে। ২০২৩ সালের তুলনায় এর পরিমাণ ৫ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে।
এসব নিয়োগের বেশিরভাগই হয়েছে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। সেখানে বিদেশিরা কর্মশক্তির ২১ শতাংশের বেশি। দক্ষিণাঞ্চল ও দ্বীপগুলোতে অংশগ্রহণ কম (১৬ দশমিক ৬ শতাংশ) হলেও, সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি (১৩ দশমিক ৬ শতাংশ) সেখানেই দেখা গেছে।
অন্তত ১০ লাখ বিদেশি শিক্ষার্থী
২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ইতালিতে বিদেশি শিক্ষার্থী ছিলেন নয় লাখ ১০ হাজার ৯৮৪ জন। সংখ্যাটি মোট শিক্ষার্থীর ১১.৫ শতাংশ।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, নতুন অভিবাসী প্রজন্ম আরো বিশ্বজনীন এবং বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতিকে ধারণ করতে পারেন।
অভিবাসী শিশুদের একটি বড় অংশের জন্ম ইতালিতে, বেড়েও উঠছেন ইতালীয় সমাজে। বাস্তবিক অর্থে তারা ইতালীয় হলেও, তাদের নাগরিকত্ব নেই।












