কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি: রংপুরের কাউনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত প্রায় এক মাস থেকে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউএইচএন্ডএফপিও নেই। ফলে রোগীর খাদ্য, স্বাস্থ্য সেবার মানসহ মেডিকেলের বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজের মান নিম্নমুখী হচ্ছে।
সরেজমিন কাউনিয়া মেডিকেলে গিয়ে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: সাদিকাতুল তাহিরিণ লিজার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির লিখিত অভিযেগের প্রেক্ষিতে তাকে রংপুর সিভিল সার্জন অফিসে সংযুক্তিতে দিলেও তিনি সরকারি গাড়িটি এখনও ফেরত দেননি।
তার স্থলে সবচেয়ে জুনিয়র ডাক্তার আবাসিক মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডা: মেহেদী হাসানকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের জন্য বলা হলেও তাকে আর্থিক বিষয়ে ক্ষমতা দেয়া হয়নি। সরকারি গাড়ি ও আর্থিক ক্ষমতা না থাকায় উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো পরিদর্শন করতে না পাড়ায় স্বাস্থ্য সেবার মান দিন দিন কমে যাচ্ছে। সেই সাথে আর্থিক ক্ষমতা না থাকায় মেডিকেলের নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। রোগীদের প্রতিনিয়ত নিম্ন মানের খাবার পরিবেশন করা হলেও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না।
উত্তর জনপদের অবহেলিত কাউনিয়া মেডিকেলে প্রায় তিন লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় ব্যবহৃত এক্স-রে মেশিন দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে ১টি এবং অপরটি ১০ বছর ধরে অচল। অধিকাংশ যন্ত্রপাতি ব্যবহারের অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। আবাসিক মেডিকেল অফিসার নেই ১৩ বছর। ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে মেডিকেলের কাজ। ফলে সরকারের প্রতিশ্রুত স্বাস্থ্য সেবা জনগনের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া হচ্ছে না। এক্স-রে মেশিন দুটি অচল পড়ে থাকায় বাহিরে এক্স-রে করাতে গিয়ে দরিদ্র রোগীদের পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, এক্স-রে মেশিন ২টি অপারেটর না থাকায় চালানো সম্ভব হয়নি। আর এখনতো নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার চিঠি দিয়েও কাজ হয়নি। এখানের এক্স-রে অপারেটরকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডিপুটেশনে রাখা হয়েছে। এ উপজেলায় ১টি রেলওয়ে জংশন স্টেশন ও রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়ক হওয়ায় প্রতিনিয়ন দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনায় অনেকের হাত-পা ভেঙে যায়। তা সনাক্ত করতে এক্স-রে মেশিন প্রয়োজন। কিন্তু মেডিকেলের ২টি এক্স-রে মেশিন ১টি ২৩ অন্যটি ১০বছর ধরে অচল। ৩টি আধুনিক ওটি থাকলেও বিদ্যুৎ চলে গেলে জেনারেটর না চালানোর ফলে ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়। ভালো একজন সার্জারি ডাক্তার থাকলেও অ্যানেসথেসিয়া ডাক্তার না থাকায় গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন করা সম্ভব হচ্ছে না।
আবাসিক মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও ইউএইচএন্ডএফপিও (ভারপ্রাপ্ত) ডা: মেহেদী হাসান জানান, আমি নতুন মানুষ। চেষ্টা করছি মেডিকেলের উন্নয়নে সকলে মিলে কাজ করতে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহিদুল হক জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নানা সমস্যার কথা জেনেছি। জেলা সমন্বয় মিটিংয়ে এ বিষয়গুলো তুলে ধরবো।
এলাকার দরিদ্র জনগণ দ্রুত এক্স-রে মেশিনসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সচল করা ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জনবল সংকট দূর করে জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।