বৃহস্পতিবার, ৭ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,২৩শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

কোটা আন্দোলনে সংঘর্ষ, চট্টগ্রামে ২ জন নিহত

বশির আলমামুন, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যুবলীগ-ছাত্রলীগের সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে একজনের বুকে গুলির চিহ্ন রয়েছে।

মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আহত কয়েকজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে দুজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এর আগে বেলা তিনটার দিকে নগরের মুরাদপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর অস্ত্রধারীরা গুলি ছুড়লে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়।

নিহত দুজন হলেন মো. ফারুক (৩২) ও মো. ওয়াসিম (২২)। ফারুক ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী এবং ওয়াসিম চট্টগ্রাম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র বলে জানা গেছে।

দুজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দিন বলেন, আন্দোলনের ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে হাসপাতালে আনা হয়। এর মধ্যে দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এ ছাড়া আহত অন্তত ছয় থেকে সাতজন বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক নুজহাত ইমু বলেন, নিহত দুজনের মধ্যে ফারুকের বুকে গুলির চিহ্ন রয়েছে। বাকিজনের মৃত্যুর কারণ এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এর আগে চট্টগ্রাম নগরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার ঘটে। এ সময় কয়েকজন অস্ত্রধারীকে গুলিবর্ষণ করতে দেখা যায়। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয় বেলা সোয়া তিনটায় নগরের মুরাদপুরে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হামলা করেছেন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

শিক্ষার্থীরা জানান, সোমবার বিভিন্ন স্থানে কোটা সংস্কার আন্দোলন কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটায় কর্মসূচি ছিল চট্টগ্রামের ষোলশহর রেলস্টেশনে। তবে এর আগে থেকে লাঠিসোঁটা নিয়ে ষোলশহর রেলস্টেশনে অবস্থান নেন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে খণ্ড খণ্ড জমায়েতে শিক্ষার্থীরা ষোলশহরের দিকে আসতে থাকেন। আসার পথে মুরাদপুরে একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা শুরু হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুরুতে লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করলেও পরে গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ শুরু হয়। কয়েকজন অস্ত্রধারীকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন। পরে তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। এভাবে চলছে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া।

সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে নগরের ব্যস্ততম সিডিএ অ্যাভিনিউ সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আতঙ্কিত হয়ে সাধারণ মানুষ এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। শিক্ষার্থীদের কয়েকটি অংশ অলিগলিতে ঢুকে পড়লে সেখান থেকেও খুঁজে বের করে হামলা করা হয়েছে।

জানতে চাইলে ষোলশহর রেলস্টেশনে থাকা মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূরুল আজিম ওরফে রনি বলেন, তারা (আন্দোলনকারীরা) ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। ট্রেন অবরোধ করে মানুষের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছেন। এই আন্দোলন এখন আর কোটাবিরোধী আন্দোলন নেই। এ আন্দোলন জামায়াত-শিবিরের আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়েছে। তারা এ আন্দোলন মোকাবিলা করবেন।

আন্দোলনে থাকা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের জশদ জাকির নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘পূ্র্বঘোষণা অনুযায়ী আমাদের কর্মসূচি ছিল; কিন্তু ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নিজেদের মতো একই জায়গায় কর্মসূচি দেন। পরে আমরা মুরাদপুর এলাকায় অবস্থান করলে ছাত্রলীগ বিচ্ছিন্নভাবে আমাদের ওপর হামলা করে। এতে আমাদের পাঁচ থেকে ছয়জন আহত হয়েছেন।’

জশদ জাকির নামের ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘নামে ছাত্রলীগ হলেও এরা কেউ ছাত্রলীগের নন। অধিকাংশ টোকাই। তাদের হাতে অস্ত্র দেওয়া হয়েছে। গুলি করা হয়েছে।’

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) কাজী তারেক আজিজ বলেন, নগরের মুরাদপুরসহ যেসব স্থানে সংঘর্ষ হচ্ছে, সেখানে পুলিশ রয়েছে। বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না। অস্ত্রধারীদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রকাশ্যে অস্ত্রধারী কেউ থাকলে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ