
যায়যায়কাল প্রতিবেদক: ঢাকা-১০ সংসদীয় আসনের ভোটার হওয়ার আবেদন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া৷
তিনি বলেছেন, তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন। ঢাকা থেকে যে নির্বাচন করবেন, সেটাও মোটামুটি নিশ্চিত। তবে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে কবে পদত্যাগ করবেন, সেটা সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।
রোববার বিকেলে রাজধানীর গ্রিন রোডে ঢাকা-১০ আসনভুক্ত ধানমন্ডি থানা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে ভোটার হওয়ার আবেদন করেন আসিফ মাহমুদ।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা।
আসিফ মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেহেতু ঢাকা থেকে নির্বাচন করব, এটা মোটামুটি নিশ্চিত, সেই জায়গা থেকে নিজের ভোটটাও ঢাকায় নিয়ে আসা। কারণ, ভোটটা যাতে অপচয় না হয়। আমি যদিও ভোটার হয়েছি আগে, কিন্তু কোনো নির্বাচনে ভোট দিতে পারিনি। আমি ভোটার হওয়ার পর দুটো নির্বাচন হয়েছে ২০১৮ ও ২০২৪ সালে। সে সময় কেউই ভোট দিতে পারেনি। নির্বাচনে যাতে ভোট দিতে পারি, সেটা নিশ্চিত করলাম। নির্বাচন কোথা থেকে করব, এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে ঢাকা থেকে করব, ইনশা আল্লাহ।’
কোনো দলে যোগ দেবেন কি না, এ প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, এখন পর্যন্ত পরিকল্পনা স্বতন্ত্র নির্বাচন করার। তারপর দেখা যাক।
বিএনপি যেসব আসনে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি, সেগুলোর মধ্যে ঢাকা-১০ আসন রয়েছে। বিষয়টি উল্লেখ করে একজন সাংবাদিক আসিফ মাহমুদের কাছে জানতে চান, এটি তার জন্যই ফাঁকা রাখা হয়েছে কি না বা তার সঙ্গে বিএনপির কোনো আলোচনা চলছে কি না।
জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমার কারও সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা হয়নি। কোনো রাজনৈতিক দল কোনো আসন ফাঁকা রাখল কি রাখল না, সেটা আমার জানার বিষয় নয়। আমি আমার সিদ্ধান্ত ব্যক্তিগতভাবে, এককভাবেই নেব।’
এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, সরকার থেকে পদত্যাগ করার পর ধানমন্ডি এলাকায় থাকার পরিকল্পনা রয়েছে তার। সেই জায়গা থেকে এই এলাকার ভোটার হচ্ছেন, যাতে ভোটটা অপচয় না হয়।
সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করে জনতার কাতারে আসবেন কবে, এমন এক প্রশ্নে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘নিশ্চিতভাবেই বলছি যে আমি নির্বাচন করব। কবে নাগাদ পদত্যাগ করব, এটা আপনারা জানেন সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। আলোচনা করে দ্রুতই আপনাদের সে বিষয়ে জানাব।’
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট কবে হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমতের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকেরা উপদেষ্টা আসিফকে প্রশ্ন করেন।
জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। সরকার রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনা করার জন্য সময় দিয়েছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ফিডব্যাক (মতামত) পাওয়ার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে বলা যাবে। এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।
আরেক প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘এই সরকারের তিনটা কাজ ছিল; সংস্কার, বিচার ও গণতান্ত্রিক রূপান্তর। আপনারা দেখছেন, তিনটা কাজই সমানভাবে এগিয়ে চলছে। বিচারের বিষয়ে এ মাসের মধ্যেই একটা গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হবে বলে আমরা জানি। সংস্কারের কার্যক্রমও চলমান আছে, প্রায় শেষের দিকে। এখন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে এ বিষয়গুলো ডিফাইন (সংজ্ঞায়িত) হয়ে গেলেই আর কোনো সন্দেহ থাকবে না। নির্বাচনের বিষয়ে সরকার খুব স্পষ্টভাবে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন করার কথা বলেছে এবং বারবার বলছে। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন আয়োজনের জন্য সরকার সব অংশীজনকে প্রস্তুত করছে এবং সবার সহযোগিতাও চাইছে।’
যেসব দল আঙুল বাঁকা করে ঘি খেতে চায়, তাদের উদ্দেশে কিছু বলতে চান কি না, সাংবাদিকদের এই আহ্বানে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘এখন আমি রাজনৈতিক বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না৷ যেহেতু সরকারের অংশ আছি, এ বিষয়ে পরে কথা বলব।’
বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলে যৌন হয়রানি নিয়ে সম্প্রতি যে অভিযোগ সামনে এসেছে, সে বিষয়ে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকেরা। জবাবে তিনি বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক। ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে বিসিবির সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। বিসিবি একটা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, ক্রীড়াক্ষেত্রসহ সব ক্ষেত্রে নারীদের নিরাপত্তা এবং তাদের যোগ্য সম্মানটা যেন আমরা নিশ্চিত করতে পারি, সেই জায়গা থেকে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে প্রমাণিত হলে আমরা অবশ্যই যথাযোগ্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেব। ইতিমধ্যে আমার দপ্তর থেকেও ভুক্তভোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। যদি তিনি কোনো আইনি পদক্ষেপ নিতে চান, সে ক্ষেত্রেও সরকার সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে।’
সরকার এ ঘটনায় কোনো তদন্ত কমিটি করবে কি না, সে প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘যেহেতু বিষয়টা বিসিবির অভ্যন্তরীণ, প্রাথমিকভাবে বিসিবির তদন্তের ওপর আমরা ভরসা করতে চাই। পরবর্তী সময়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেব এ বিষয়ে।’
এর আগে বিকেল পৌনে চারটার দিকে ধানমন্ডি থানা নির্বাচন কার্যালয়ে পৌঁছান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। তার আগেই কিছু তরুণ ওই কার্যালয় ভবনের নিচে অবস্থান করছিলেন।
আসিফ মাহমুদ গাড়ি থেকে নামতেই তারা ‘ঢাকা ১০-এর মাটি, আসিফ ভাইয়ের ঘাঁটি’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।
আসিফ মাহমুদ আবেদন জমা দিয়ে বের হওয়ার পরও তাকে একই স্লোগান দিতে দেখা যায় তার সমর্থক ওই তরুণদের।
আসিফ মাহমুদ যখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখনো ওই তরুণেরা তার সঙ্গেই ছিলেন।












