
বিশেষ প্রতিবেদক : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চতুর্পাশের ফুটপাত এমনকি মেডিকেলের ভিতরের বসার জায়গাসহ অনেকগুলো ভ্রাম্যমান চা, সিগারেট,ফল,পেয়ারার দোকান বসিয়ে প্রতিদিন চাঁদাবাজি করছেন সোর্স আনোয়ার সিন্ডিকেটের সদস্য জলিল, হারেস, একরাম, জামাল ও ইমরান। সারাদেশ থেকে সেবা নিতে আসা অসংখ্য রোগীদের চলাচলের সুবিধার্থে ঢাকা মেডিকেলের চতু্র্পাশ দিয়ে প্রশস্ত একটি রাস্তা তৈরী করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আর সেই রাস্তা/ফুটপাত এখন সোর্স আনোয়ার সিন্ডিকেটের দখলে।রক্ষা পায়নি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মসজিদের জায়গা, জরুরি বিভাগ গেট, বহির্বিভাগ গেট,শহীদ মিনার গেটের একপাশ, এমনকি নতুন ভবন এর উভয়গেট।
সরজমিনে দেখা যায়, ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের চতুর্পাশের অংশটুকু দখলবাজ, চাঁদাবাজ, দলবাজরা কব্জায় নিয়ে এখন ফুট বাই ফুট ভাড়া দিচ্ছে। একইসঙ্গে চলছে চাঁদাবাজিরও মচ্ছব। ফলে ঢাকা মেডিকেলে সেবা নিতে আসা চলাচলকারী যানবাহন ও পথচারীদের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। চাঁদাবাজ চক্রটি দীর্ঘ দিন ধরে রাস্তা দখল করে সিএনজি, এ্যাম্বুলেন্স ষ্টান্ড এবং অবৈধ দোকান বসিয়ে প্রত্যেকটা দোকান থেকে প্রতিদিন ৩শ’ থেকে ৫শ’ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করেন। সোর্স আনোয়ার, জলিল, কুদ্দুস, হারেছ, জামাল ও একরাম যাদের দখলে প্রায় ২২৫ টি দোকান। লাইটের চাঁদা আদায় করেন একরাম। সরকারি ও চোরাই লাইন দিয়ে একরাম প্রত্যেকটা দোকানদারের নিকট থেকে প্রতিদিন ১শ’ থেকে ১৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একাধিক সরকারি স্টাফ জানায়, ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের হুইল চেয়ার সিন্ডিকেটের মূল হোতা ওয়ার্ড মাস্টার রিয়াজসহ একাধিক স্টাফ, সরকার দলীয় নেতা এবং ঢাকা মেডিকেলের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়াসহ প্রশাসনের সকলেই এই ফুটপাত থেকে দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক টাকা নেন।
কে চাঁদা আদায় করেন এবং চাঁদার অংশ কাকে দিতে হয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, লাইনম্যান সোর্স আনোয়ার, জলিল, কুদ্দুস, হারেছ, ইমরান ও একরাম সমস্ত ফুটের টাকা উত্তোলন করেন। যার মধ্যে মেডিকেল টু এর গেট থেকে আনন্দবাজার পুলিশ ফাড়ির আইসি প্রতিদিন ১২শ টাকা এবং সপ্তাহে ২৫শ টাকা। মেডিকেল টু এর গেট থেকে শাহবাগ থানা প্রতিদিন ১৫শ টাকা ও জরুরি বিভাগ এর গেট থেকে প্রতিদিন ৩৪শ টাকা পায়। এসি জোন জরুরি বিভাগ এর গেট থেকে প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা এবং সপ্তাহে ৮ হাজার টাকা। তাছাড়াও আনন্দবাজার পুলিশ ফাঁড়ির আইসি দেলোয়ার হোসেন রেলওয়ে হাসপাতালের সামনের ফুট থেকে বঙ্গবাজার ফুট পর্যন্ত লাইনম্যান কানা লিটনের মাধ্যমে দিনে ২০ হাজার টাকা এবং সপ্তাহে ১০ হাজার টাকা নেন। নগর ভবনের ফুট থেকে দিনে ৩ হাজার টাকা নেন লাইনম্যান বাবুলের মাধ্যমে। এভাবেই ঢাকা মেডিকেলের ফুটপাতসহ আশেপাশের ফুটপাত থেকে টাকা খাচ্ছে প্রশাসনসহ দলীয় অনেকেই।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়,মেডিকেলের নতুন ভবনের প্রবেশদ্বারে আনোয়ারের দুইটি কাথা বালিশ, একটি চা ও দুইটি ভ্রাম্যমান চা- সিগারেট এর দোকান আছে। নতুন ভবনের প্রবেশদ্বারের উভয় পাশের পঁচিশটি দোকান থেকে সোর্স আনোয়ার প্রতিদিন ২শত ও ৩ শত করে চাঁদা উত্তোলন করেন।
ঢাকা মেডিকেলে রোগী নিয়ে এসেছে কুলসুম, বাড়ি মুন্সিগঞ্জে। তার স্বামীর ক্যান্সার হয়েছে। দুদিন হয়ে গেছে মেডিকেলে কোন আসন খালি নাই। উপায়ান্তর না পেয়ে কাঁথা, বালিশ,মাদুর ও প্লাস্টিকের কিছু পণ্য কিনেছে। জানতে চাইলাম এখানে কয়দিন থাকবেন এবং যে পণ্যগুলো কিনেছেন আপনার এলাকার তুলনায় এখানে দাম কম নাকি বেশি নিয়েছে? করুন কন্ঠে জানালো, ভাই এগুলো জেনে আপনারা কি করবেন? কেননা, আমার এলাকায় যেই বালিশটার দাম ১শ টাকা এখানে সেই বালিশটার দাম নিচ্ছে ২৫০ থেকে ৩শ টাকা। ঠিক এরকম কলা, রুটিসহ প্রত্যেকটা জিনিস প্রায় দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে। আর ও একজন রোগীর স্বজন শিহাব। এসেছে সাতক্ষীরা থেকে। সড়ক দুর্ঘটনায় বড় ভাই আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি আছেন।এদেরও একই অবস্থা, আসন খালি না থাকাই ফ্লোরেই থাকতে হচ্ছে। যে কারণে কাথা বালিশসহ নিত্য প্রয়োজনীয় কিছু পণ্য কিন্তে হয়েছে মেডিকেলের সামনের ফুটপাত থেকে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যগুলির দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে শিহাব জানাই এখানে সবকিছুই প্রায় দ্বিগুন দামে কিন্তে হচ্ছে।
প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেশি নেওয়ার ব্যাপারে কয়েকজন ভাসমান দোকানদারের সাথে কথা বললে তারা জানায়, ভাই আমরা কি করব চাঁদা বেশি নেওয়ার কারণে প্রত্যেকটা জিনিস বেশি দামে বিক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছি।
রাস্তা ও ফুটপাত হকারদের দখলে যাওয়ায় পথচারীর পাশাপাশি সড়কের যানবাহনও স্বাভাবিকভাবে চলতে পারছে না। সময়ে সময়ে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। ট্রাফিক পুলিশ সেই যানজট নিরসনে ব্যস্ত থাকলেও যানজটের উৎস ফুটপাত দখল নিয়ে কাহার ও কোনো উদ্যোগ নেই। পথচারীদের দুর্ভোগ নিয়েও নতুন কোনো ভাবনা নেই।