
যায়যায়কাল ডেস্ক: ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের বিখ্যাত ল্যুভর জাদুঘরে দিনে–দুপুরে অবিশ্বাস্য কায়দায় চুরির ঘটনা ঘটেছে। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, আজ রোববার জাদুঘর খোলার কিছুক্ষণ আগে স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৩০ থেকে ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার পর জাদুঘর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। চোর ধরতে তদন্তে নেমেছে দেশটির পুলিশ।
ফরাসি সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, তিন মুখোশধারী ব্যক্তি সেইন নদী সংলগ্ন অংশ দিয়ে আসে। জাদুঘরে প্রবেশের জন্য তারা একটি ধাতব মই ব্যবহার করে।
পরে তারা ছোট বৈদ্যুতিক করাত দিয়ে জানলার গ্রিল কেটে জাদুঘরের অ্যাপোলো গ্যালারিতে ঢুকে নয়টি মহামূল্যবান অলংকারসামগ্রী নিয়ে মোটর-স্কুটারে করে পালিয়ে যায়।
ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লরাঁ নুনেজ বলেছেন, ‘মাত্র সাত মিনিটে এই চুরির ঘটনা সম্পন্ন হয়েছে। চোরেরা খুব দ্রুত প্রদর্শনী কেস থেকে অলংকারগুলো নিয়ে পালিয়ে যায়।’
চুরি যাওয়া অলংকারের একটি অংশ ঘটনাস্থলের কাছাকাছি জায়গায় পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ফ্রান্সের সংস্কৃতিমন্ত্রী রাশিদা দাতি।
ফরাসি টিভি চ্যানেল টিএফ১-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘পালিয়ে যাওয়ার সময় চোরেরা সম্ভবত এটি ফেলে গেছে। টুকরাটি কোন অলংকারের অংশ সেটি যাচাই করা হচ্ছে।’
চোরেরা কোনো হিংস্রতা বা আতঙ্ক ছড়ানো ছাড়াই ‘পেশাদারিত্বর সঙ্গে’ এই কাজ করেছে বলেও জানান তিনি।
চোরেরা ল্যুভরের যে গ্যালারিকে টার্গেট করেছে, সেই অ্যাপোলো গ্যালারিতে ফরাসি রাজমুকুটের অবশিষ্টাংশগুলোকে রাখা হয়।
ফরাসি বিপ্লবের পর বেশিরভাগ অলংকার হারিয়ে গেছে বা বিক্রি হয়ে গেছে, তবে কিছু মূল্যবান জিনিস আজও সংরক্ষিত আছে।
যেমন: নেপোলিয়ন বোনাপার্ট, তার ভাতিজা তৃতীয় নেপোলিয়ন এবং তাদের স্ত্রীদের অলংকার।
ল্যুভরের ওয়েবসাইট অনুসারে, অ্যাপোলো গ্যালারিতে সবচেয়ে মূল্যবান তিনটি হীরা—রেজাঁ, সাঁসি, অরতেন্সিয়া রাখা ছিল। তবে এগুলোর কোনোটি খোয়া গেছে কি না এখনো জানা যায়নি।
ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই অলংকারগুলোর বাণিজ্যিক মূল্য ছাড়াও ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে।
অতি সুরক্ষিত ল্যুভরে চুরির ঘটনা এবারই প্রথম নয়। ১৯১১ সালে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির বিখ্যাত ‘মোনালিসা’ চিত্রকর্মটি এই জাদুঘর থেকে চুরি হয়ে যায়।
এ ঘটনায় সেসময় কবি গিয়োম আপোয়িনেয়ার ও চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসোকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল পুলিশ। তবে চোর ছিলেন একজন ইতালীয়, যিনি জাতীয়তাবাদে আকৃষ্ট হয়ে ছবিটিকে ইতালিতে ফিরিয়ে নিতে চেয়েছিলেন।
তিন বছর পর ছবিটি ফ্লোরেন্স থেকে উদ্ধার হয়ে আবার ল্যুভরে ফিরে আসে।
১৯৮৩ সালেও জাদুঘরটি থেকে ১৬ শতকের কিছু বর্ম চুরি হয়েছিল, যা ২০১১ সালে পুনরায় পাওয়া যায়।
১৯৯৮ সালে ১৯ শতকের চিত্রশিল্পী ক্যামিল কোরোর চিত্রকর্ম ‘লো শেম্যাঁ দ্য সেভ্র’ চুরি হয়েছিল, যা আজও পাওয়া যায়নি।