
যায়যায়কাল ডেস্ক: ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সামরিক অভিযানের মধ্যে অবিচল সাহস নিয়ে সেবার জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়া ফিলিস্তিনি শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. হুসাম আবু সাফিয়াকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার প্রস্তাব করেছে ডাচ চিকিৎসকদের একটি সংগঠন।
এবারের নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণার আগে আগে ডা. সাফিয়াকে মনোনয়ন দেওয়ার খবরটি সামনে এনেছে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম।
ভারতীয় দৈনিক সিয়াসাত লিখেছে, উত্তর গাজার কামাল আদওয়ান হাসপাতালের পরিচালক সাফিয়া ও তার সহকর্মীদের ২০২৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। সাফিয়ার স্বাস্থ্যকেন্দ্রই ছিল উত্তর গাজার সবশেষ চালু থাকা হাসপাতাল।
আইনজীবীর ভাষ্য অনুযায়ী, ডা. সাফিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হচ্ছে, ইতোমধ্যে ওজন কমেছে ৩০ কেজি। এসডে তেইমান কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নিপীড়নের পর ওফার কারাগারের বাজে পরিবেশে তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। সেখানে তিনি স্ক্যাবিসে আক্রান্ত হন। বারবার নির্যাতনের শিকার ডা. সাফিয়াকে রাখা হয়েছে একাকী নির্জন কক্ষে।
তার উচ্চ রক্তচাপ এবং বোমার স্প্লিন্টারের আঘাতজনিত ত্বকের জটিলতাও বাড়ছে বলে আইনজীবী জানিয়েছেন।
সিয়াসাত লিখেছে, ইসরায়েলের অনবরত গোলাবর্ষণ এবং ইহুদি সেনাদের হুমকির মধ্যেও রোগীদের সেবাদান থেকে পিছপা হননি ডা. হুসাম আবু সাফিয়া। বিচার ছাড়াই তাকে আটকে রাখাকে নিষ্ঠুর ও অমানবি বলে বর্ণনা করছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
ফিলিস্তিনি তরুণদের সংবাদমাধ্যম কুদস নিউজ নেটওয়ার্ক লিখেছে, শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য ডা. সাফিয়ার নাম প্রস্তাব করেছে ডাচ চিকিৎসকদের সংগঠন ‘ডক্টরস ফর গাজা ইন দ্য নেদারল্যান্ডস’। ডাচ মানবাধিকার সংগঠন রাইটস ফোরাম এ মনোনয়নের খবর প্রকাশ্যে এনেছে।
আবু সাফিয়ার ১৫ বছরের ছেলে ইব্রাহিম ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় নিহত হয়। ওই হামলা চালানো হয়েছিল তাকে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে; কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি।
কুদস নিউজ লিখেছে, ইসরায়েলি সেনাদের হাতে অপহৃত হওয়ার আগ পর্যন্ত অবরুদ্ধ হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলেন সাফিয়া। আটক হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি আশপাশে মানব ঢাল রাখতেন।
নোবেল কমিটির কাছে লেখা খোলা চিঠিতে ‘ডক্টরস ফর গাজা’ আবু সাফিয়াকে বর্ণনা করেছে ‘একজন অসাধারণ সাহসী মানুষ, অবিচল মানবতা ও রোগীদের প্রতি গভীর নিষ্ঠার প্রতীক’ হিসেবে। সংগঠনটি বলেছে, তার মনোনয়ন ‘গোলাগুলির মধ্যে থাকা ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্মিলিত আত্মত্যাগকে সম্মান জানায়।’
গাজায় গণহত্যা শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল ১,৬৭০-এর বেশি চিকিৎসাকর্মীকে হত্যা করেছে। এছাড়া অন্তত ৩৬২ জন চিকিৎসক, নার্স এবং প্যারামেডিককে অপহরণ করেছে।
‘রাইটস ফোরাম’ বলেছে, আবু সাফিয়ার বীরত্বকে স্বীকৃতি দেওয়া মানে ‘অসম্ভব পরিস্থিতিতে’ যারা জীবন বাঁচিয়ে যাচ্ছেন, তাদের প্রতি সংহতির বার্তা পাঠানো।
তার মনোনয়নকে সমর্থন জানিয়ে প্রচারে ইতোমধ্যে প্রায় ৩৪ হাজার স্বাক্ষর সংগ্রহ হয়েছে।