মঙ্গলবার, ১৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১লা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

বিএনপির উদ্দেশ্যই দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি : তথ্যমন্ত্রী

যায়যায়কাল প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বিএনপির উদ্দেশ্যই হচ্ছে দেশে একটি বিশৃঙ্খলা তৈরি করা। সেই উদ্দেশ্য নিয়েই তারা আন্দোলন আন্দোলন খেলার চেষ্টা করছে, যদিওবা জমাতে পারছে না।’

সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে টেলিভিশন গণমাধ্যমের শিল্পী, পরিচালক, প্রযোজক, কুশলীবৃন্দের সাথে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রচার) খাদিজা বেগম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান বলেন, ‘বিএনপি নেতারা এর আগে খালেদা জিয়া অসুস্থ, বিদেশ না নিলে মারাই যাবে- এটি বলে জনগণকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করেছিল, পারেনি। এখন ইউক্রেন যুদ্ধ ও করোনার প্রেক্ষিতে পৃথিবীময় সংকট চলছে। বাংলাদেশ পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়। এই প্রেক্ষাপটে তারা এখন জনগণকে বিভ্রান্ত করার ও দেশে একটি বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। এ ধরণের এবং এর চেয়ে বেশি বিশৃঙ্খলা আমরা মোকাবিলা করেছি। ২০১৩-১৪-১৫ সালে উনারা যা করেছিল সেগুলো মোকাবিলা করেছি। সুতরাং তাদের এই বিশৃঙ্খলা, হুমকি, আন্দোলন আন্দোলন খেলা এগুলো মোকাবিলা করা আমাদের কাছে কোনো ব্যাপার নয়।’

বিএনপির ‘নির্বাচনের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার না আসলে রাজপথে ফয়সালা হবে’ এ মন্তব্যের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল হয়েছে ১০ বছরের বেশি সময় আগে। ১০ বছর ধরে তারা একই কথা বলে আসছে। মির্জা ফখরুল সাহেবদের এ ছাড়া আর কোনো বক্তব্য নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকার, খালেদা জিয়ার হাঁটুর ব্যথা, কোমরের ব্যথা, তারেক রহমানের শাস্তি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর নির্বাচন কমিশন -এর মধ্যেই এদের রাজনীতি ঘুরপাক খাচ্ছে।’

চাকুরির মেয়াদ পূর্তির প্রায় এক বছর আগেই তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মকবুল হোসেনকে অবসর প্রদানের আদেশের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘এটি গতকাল আমি মন্ত্রণালয়ে এসে শুনেছি। অন্তর্নিহিত কি কারণ সেটি আমি জানি না। সেটি বলতে পারবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কোনো সচিব অবসর গ্রহণ করলে তাকে আবার চুক্তি দিতে পারে, দেয়। আবার মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে সচিবকে অবসর দেয়। এগুলো আগেও ঘটেছে। প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে, আমি মন্ত্রণালয় এসে শুনেছি।’

তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাজে কোনো ব্যাঘাত ঘটছিল কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী হাছান বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের কাজ স্বাভাবিকভাবেই চলছিল, চলছে, কারণ আমি প্রতিদিন মন্ত্রণালয়ে আসি। সকল কাজ আমি সম্পূর্ণভাবে তদারক করি। আমি কোনো একটা সিদ্ধান্ত দেওয়ার পর সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করি।’

জাতীয় পর্যায়ে টেলিভিশন পুরস্কার প্রবর্তনের কথা ভাবছে মন্ত্রণালয়

এর আগে টেলিভিশন গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করেন তথ্যমন্ত্রী। অভিনয়শিল্পী, নাট্য পরিচালক ও প্রযোজকদের মধ্যে শম্পা রেজা, অরুণা বিশ্বাস, শামস সুমন, সাজ্জাদ হোসেন দোদুল, এস এম কামরুজ্জামান সাগর, নাজনীন হাসান চুমকী, সুমন শামস, প্রসুন বিশ্বাস, আমর শাইখ প্রমুখ বৈঠকে টিভি নাটকের বিকাশে তাদের মতামত তুলে ধরায় মন্ত্রী তাদের ধন্যবাদ জানান।

বিস্তারিত আলোচনার প্রেক্ষিতে ড. হাছান বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে দায়িত্ব দেয়ার পর আমি আমার সর্বোচ্চ নিষ্ঠা দিয়ে, ক্ষমতা দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছি, যাতে অভিনয় শিল্পীদের এবং দেশের টেলিভিশন শিল্পের উন্নয়ন ঘটে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মতো জাতীয় পর্যায়ে টেলিভিশন পুরস্কার প্রবর্তন করা যায় কি না সেটি নিয়েও মন্ত্রণালয়ে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে বলে জানান সম্প্রচারমন্ত্রী। তিনি বলেন, যেহেতু এটি একটি জাতীয় বিষয়, এককভাবে আমাদের মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, এটি আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

হাছান মাহমুদ বলেন, আগে ক্যাবল নেটওয়ার্কে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর কোনো সিরিয়াল ছিলো না, সেখানে একটা শৃঙ্খলা আনতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশ টেলিভিশন ভারতবর্ষে দেখানোর চেষ্টা শুরু হয়, আজ থেকে ৩০ বছর আগে। কিন্তু সেটি তিন দশকেও সফলতার মুখ দেখেনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে দায়িত্ব দেয়ার পর ২০১৯ সালেই সেপ্টেম্বর মাস থেকে পুরো ভারতবর্ষে ডিটিএইচ ডিসের মাধ্যমে বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রদর্শন হচ্ছে, যেটি একটি মাইলফলক।

দেশের অভিনয় শিল্পীদের কথা বিবেচনায় রেখেই আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, যেটি আমরা খুব সহসা কার্যকর করতে যাচ্ছি উল্লেখ করে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, অনেক বিজ্ঞাপনচিত্র বিদেশি শিল্পীদের নিয়ে বানানো হয় অথচ আমাদের দেশে অনেক প্রতিভাবান অভিনয় শিল্পী আছে, বিজ্ঞাপন নির্মাতাও আছে। দেশের বিজ্ঞাপন নির্মাতারা অতীতে অনেক ভালো বিজ্ঞাপন নির্মাণ করেছেন যেগুলো শুধুমাত্র পণ্যের বিজ্ঞাপন বলা যাবে না, যেগুলো মানুষের তৃতীয় নয়ন খুলে দেয়, মানুষকে ভাবায়। ১০ বা ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই সে ধরণের বিষয় উপস্থাপন করা অনেক মুন্সিয়ানার কাজ, সেটি আমাদের দেশের বিজ্ঞাপন নির্মাতারা, আমাদের অভিনয় শিল্পীরা অতীতে করে দেখিয়েছে।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ইদানিংকালে আমরা একটি ট্রেন্ড দেখতে পাচ্ছি, যতোটা সম্ভব বিদেশি শিল্পীদের দিয়ে বিজ্ঞাপন বানানো এবং বিদেশি বিজ্ঞাপন ডাবিং করে এখানে সেটিকে প্রদর্শন করা। আমরা সেটির লাগাম টেনে ধরতে চাই। সেজন্য ইতিমধ্যেই আমরা এই মর্মে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিলাম, যে বিদেশি শিল্পী দিয়ে বিজ্ঞাপন বানালে শিল্পী পিছু ট্যাক্স-ভ্যাটের বাইরে প্রতি শিল্পীর জন্য ২ লাখ টাকা করে সরকারকে বাড়তি কর দিতে হবে। পাশাপাশি যারা প্রদর্শন করবে তাদেরকেও ফিস দিতে হবে, ডাবিংকৃত বিজ্ঞাপনচিত্রের জন্যও সেটি প্রযোজ্য হবে। দেশের শিল্পী এবং শিল্প দুটিই উপকৃত হয়, সেজন্য আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি।

ডাবিংকৃত বিদেশি সিরিয়ালের বিষয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, কিছু টেলিভিশন চ্যানেল ৩০-৫০ বছর আগের বিদেশি সিরিয়াল কিনে এনে ডাবিং করে চালায়। প্রথমে দু’একটি চ্যানেল শুরু করেছিল পরে প্রায় অনেকগুলো চ্যানেল সেটি শুরু করেছে। আমরা লাগাম টেনে ধরেছি, সংগে একটির বেশি সিরিয়াল কোন টেলিভিশন চ্যানেল প্রচার করতে পারবে না। একেবারে বন্ধ করছি না, কারণ পৃথিবী এখন মুক্ত বাজার অর্থনীতি, আকাশ মুক্ত। কিন্তু আমাদের শিল্পীদের ও আমাদের সংস্কৃতির কথা মাথায় রেখে একটির বেশি সিরিয়াল কোন টেলিভিশন একসঙ্গে চালাতে পারবে না।

এ সময় মন্ত্রী আরো জানান, ‘বিটিভি’র মতো চট্টগ্রাম টেলিভিশন কেন্দ্রও টেরেস্ট্রিয়াল, সারাদেশে দেখা যায়, স্যাটেলাইট ও অ্যাপসের মাধ্যমে সারা বিশ্বে দেখা যায়। এই কেন্দ্রে মঞ্চ নাটক, স্বরচিত কবিতা পাঠ ও নির্বাচিত কবিতা আবৃত্তির জন্য প্রতি সপ্তাহে একটি স্লট নির্ধারিত আছে, যা আগে কখনো ছিল না, আমি উদ্যোগ নিয়ে চালু করেছি।’

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ