শনিবার, ১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,১৫ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে ৬টি চোরাই পয়েন্ট নিয়ন্ত্রণ ‘হাটিকুমরুল থেকে নলকা ডাকাতের আস্তানা’

কাইয়ুম মাহমুদ, সিরাজগঞ্জ: উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জ। যমুনা বহুমুখী সেতু পার হলে যমুনা বহুমুখী সেতু-হাটিকুমরুল রোডে প্রায় প্রতিদিন রাতেই ঘটছে ডাকাতি ঘটনা। দরজায় কড়া নারছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঢাকা থেকে গ্রামে ঈদ করতে এই মহাসড়ক দিয়ে প্রায় ২২ জেলার মানুষ যাতায়াত করবে। কিন্তু দু:খের বিষয় হচ্ছে যমুনা বহুমুখী সেতু পশ্চিম-সিরাজগঞ্জ রোড পর্যন্ত প্রতিনিয়ত ডাকাতির ঘটনা ঘটছে।

আর ডাকাতরা প্রথমে সিরাজগঞ্জ রোড থেকে নলকা ব্রীজ পশ্চিম পর্যন্ত প্রায় ১২টি চোরাই পয়েন্ট’র ঘরেই অবস্থান করে। রাত্রী যত গভীর হয় চোরাই গাড়ি দিয়ে যাতায়াত করে মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গা ডাকাতি করতে ওঁত পেতে থাকে। দিনরাত ২৪ ঘন্টাই চোরাই পয়েন্টগুলো চোরাই মাল ক্রয়-বিক্রয় করা হয়েছে। মহাসড়কে চোরাই মাল নামানো ও উঠানো ও ক্রয় বিক্রয়ের সময় টহলরত পুলিশের গাড়ি দেখলে পুলিশ কিছু না বলে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশকে প্রতি মাসে হাদিয়া দেয় বলে মহাসড়কে চলাচলরত পথচারীরা সমালোচনা করতে থাকে।

সাম্প্রতি ৯ মার্চ রাতে ঢাকা থেকে বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের সম্মেলনে অংশগ্রহণ শেষে মাইক্রোযোগে রাজশাহীতে ফিরছিলেন জামায়াতের নেতারা। তাদের মাইক্রোটি সিরাজগঞ্জ যমুনা সেতুর পশ্চিম সংযোগ সড়কের, কোনাবাড়ী ধান গবেষণা ইন্সট্রিটিউট পশ্চিমে ঝাঔল এলাকায় পৌঁছালে ডাকাত দল তাদের মাইক্রো লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়ে। এ সময় শব্দ শুনে মাইক্রোর চালক চাকা ফেটে গেছে ভেবে গাড়িটি রাস্তার পাশে দাঁড় করান। এ সময় মুহুর্তের মধ্যে কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই হঠাৎ ৭ থেকে ৮ জনের ডাকাতের দলটি ধারালো অস্ত্র, রামদা, হাসুয়া, ডেগার ও লোহার রড নিয়ে এসে হামলা চালায় এবং সবাইকে জিম্মি করে এবং সকলের নগদ অর্থ ও মোবাইল লুট করে নিয়ে যায়।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, উত্তরবঙ্গের মহাসড়ক সিরাজগঞ্জ রোড থেকে নলকা ব্রীজ পর্যন্ত বিভিন্ন ট্রাক থেকে চোরাই মাল ক্রয় করার জন্য ১২ টি পয়েন্ট রয়েছে। এই চোরাই পয়েন্ট থেকে লোহার রোড, কয়লা, পাথর, চাল, গম, তিব্বত সয়াবিন তেলে ভূসি, বিভিন্ন গাড়ির ডিজেল, পেট্টোল, অকটেন, লালি সহ বিভিন্ন পণ্যাদি যানবাহন ট্রাকের ড্রাইভারগণ স্বল্প মূল্যে বিক্রি করে থাকে। বিশেষ রোড নামানোর জন্য পয়েন্টগুলোর ব্যবসায়ীর মধ্যে তুমুল প্রতিযোগিতা হয়। রডগুলো স্বল্প মূল্যে ৬০ টাকা কেজিতে ক্রয় করে পাঙ্গাসীর বিভিন্ন দোকানে ৮৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করে চোরাই কারবারিরা। এদিকে রোডের প্রকৃত মালিকগণ তাদের নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য থেকে প্রতারিত হচ্ছে।

কোন সময় সময় ৩ লাখ টাকা বিনিময়ে ট্রাকের ড্রাইভাররা পুরো ট্রাকের রড বিক্রি করে চলে ট্রাক রেখে চলে যায়। পরবর্তীতে ট্রাকের মালিক ও পণ্যের মালিক সিরাজগঞ্জ সলঙ্গা থাকায় এসে মামলা করে চলে যান। ইতিমধ্যে একাধিক মামলা করার ঘটনাও ঘটেছে। ৫ আগষ্টের ২০২৪ইং তারিখে পর চোরাই কারবারির পাশাপাশি চোরাই ব্যবসার অন্তরালে ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। বর্তমানে ডাকাতরা এই চোরাই পয়েন্টে রাত্রে অবস্থান করে। রাত্রী যত গভীর হয়, চোরাই পয়েন্ট থেকে ডাকাতি করার পরিকল্পনা করতে থাকে। সুযোগ হলেও ডাকাতি করে ডাকাতের পণ্য সামগ্রী চোরাই পয়েন্টে নামানো হয়। আর ডাকাতি করা মোবাইল, টাকা, গয়নাগুলো প্রথমে চোরাই পয়েন্টে নিয়ে আসে। তারপর এখান থেকে ডাকাতি করা টাকা, মোবাইল, গয়নাগুলো ভাগবাটোয়ার হয়।

(১২ মার্চ ২০২৫ইং) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নলকা ব্রীজের পশ্চিমে সামিদুল এর পয়েন্ট থেকে রোড নামানো হচ্ছে, নলকা ব্রীজের রাস্তা দিয়ে পাচলিয়া বাজারের দিকে আসলে মহাসড়কের দক্ষিন রাস্তায় সামিদুল ও স্বপনের ২ টি চোরাই পয়েন্ট রয়েছে। আর এই ২টি পয়েন্টের উত্তর রাস্তায় আরেকটি সামিদুল এর পয়েন্ট রয়েছে। একটি পশ্চিমের পশ্চিমে রহিম নামে এক ব্যক্তির পয়েন্ট রয়েছে। এছারাও হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানায় সামনে নবনির্মিত ট্রাকস্ট্যান্ডের পূর্ব পাশে সবুর ও টনিকের একটি পয়েন্ট রয়েছে। টনিক ও সবুর নিজেকে বিএনপি নেতা ইকবাল মাহমুদ টুকুর ভাই পরিচয়ে তারা এসব পয়েন্ট দাপটের সাথে চালাচ্ছে।

তাদের পয়েন্ট থাকা কর্মচারীরা বলেন, আমাদের ৫টি পয়েন্ট বিএনপি নেতা সামিদুল ভাইয়ের। তিনি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের বিএনপি নেতা। পাঁচলিয়া বাজারে সাখাওয়াত নামে এক ব্যক্তি বলেন, আলোকদিয়া গ্রামের জাহের আলীর ছেলে সামিদুল বিএনপির পরিচয় দিয়ে পাঁচলিয়া বাজার থেকে নলকা ব্রীজ পর্যন্ত চোরাই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে।

সলঙ্গা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি মতিউর রহমান মতি বলেন, কোন চোর, ডাকাত বিএনপির কর্মী বা নেতা হতে পারে না,আলোকদিয়ার সামিদুল কোন বিএনপির কোন পদে নেই। সেই বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন চোরাই মালামাল ক্রয়-বিক্রয় করছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। সলঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, চোরাই মাল ক্রয়-বিক্রয় করার জন্য কিছুদিন আগেই একটি মামলা হয়েছে। ঈদের আগে চোরাই পয়েন্টগুলো নিষ্ক্রিয় করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আর এসব চোরাই পয়েন্টগুলো নিস্ক্রিয় না হলে মহাসড়কে ডাকাতিও অনেকাংশ কমবে না।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *