শুক্রবার, ১৩ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,২৭শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

বিনা অপরাধে ৪৫ বছর ইসরায়েলের কারাগারে, অতঃপর মুক্তি

যায়যায়কাল ডেস্ক: নায়েল বারগুতি এখন বার্ধক্যে উপনীত। ৬৭ বছর বয়সী এ মানুষটি শেষমেশ মুক্তি পেয়েছেন। তবে এর আগে তার জীবনের প্রায় দুই–তৃতীয়াংশ সময়ই কেটে গেছে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী থেকে।

ফিলিস্তিনি নাগরিক নায়েল হলেন বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় কারাগারে কাটানো রাজনীতিক। ফিলিস্তিনি বন্দীদের ‘ডিন’ (প্রধান) হিসেবেও পরিচিত তিনি। বয়স আর দুঃসহ কারাজীবনে অনেকটা নাজুক হয়ে পড়া নায়েলকে বৃহস্পতিবার মুক্তি দেয় ইসরায়েল।

টানা ১৫ মাস বিরামহীন হামলা চালিয়ে গাজা উপত্যকাকে নরকে পরিণত করে সম্প্রতি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে উপনীত হয় ইসরায়েল। যুদ্ধবিরতির অন্যতম শর্ত, ফিলিস্তিনি বন্দী ও ইসরায়েলি জিম্মি বিনিময়ের অংশ হিসেবে বারগুতিকে মুক্তি দেওয়া হলো।

বারগুতি ৪৫ বছর ইসরায়েলি কারাগারে থেকেছেন। এর মধ্যে একটানা কেটেছে ৩৪ বছর। আর এর মধ্য দিয়ে বিশ্বে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় কারাগারে থাকা রাজনীতিবিদ হিসেবে ২০০৯ সালে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে তার নাম উঠেছে।

বারগুতি ‘আবু আল-নুর’ নামে ফিলিস্তিনি বন্দীদের মধ্যে পরিচিত। ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ব্যক্তিও তিনিই।

২০১১ সালে হামাস ‘গিলাদ শালিত’ বন্দিবিনিময়ের অংশ হিসেবে নায়েলকে মুক্ত করে এনেছিল। তখন অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লার কাছে নিজ শহর কোবারে ফেরেন তিনি। তবে সেই ছাড়া পাওয়া খুব বেশি দিনের জন্য হয়নি।

যাহোক, ২০১৪ সালে ইসরায়েল বারগুতিকে আবারও গ্রেপ্তার করে। চুক্তির শর্ত ভাঙার অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। পুনর্বহাল করা হয় ইতিপূর্বে তাকে দেওয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

বারগুতির পরিবার বলেছে, এবার মুক্তি পেয়ে ফিলিস্তিনের বাইরে নির্বাসিত জীবন কাটাতে সম্মত হয়েছেন তিনি। এ শর্তে ইসরায়েল তাকে আবার গ্রেপ্তার হওয়া থেকে মুক্ত থাকার কিছুটা স্বাধীনতা দিয়েছে।

রামাল্লার উত্তরে ফিলিস্তিনি গ্রাম কোবারে ১৯৫৭ সালের ২৩ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন বারগুতি। ফিলিস্তিনে ব্রিটিশ ও ইসরায়েলি দখলদারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শামিল হওয়া ঐতিহ্যবাহী একটি পরিবারে জন্ম তার।

বারগুতির বাবাও ব্রিটিশ বাহিনীর হাতে আটক হয়েছিলেন। আর চাচা ১৯৩৬ সালে ‘গ্রেট আরব রিভল্ট’–এর সময় নিহত হন।

বয়স যখন মাত্র ১০ বছর, সে সময়ই অর্থাৎ ১৯৬৭ সালে গাজা উপত্যকা, পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরের বাকি অংশের পাশাপাশি নিজ গ্রামে ইসরায়েলি আগ্রাসনের সাক্ষী হয়েছিলেন বারগুতি। আধুনিককালের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দখলদারির ঘটনা এটি।

নায়েল বারগুতির বোন হানান বারগুতি বলেন, ইসরায়েলের দখলদারির বিরুদ্ধে তার ভাইয়ের প্রতিরোধ লড়াই শুরু হয় ওই অতটুকু বয়সেই। একেবারে ছোট থাকতে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে ইসরায়েলি বাহিনীর দিকে পাথর ছুড়ে মারতেন বারগুতি। দেয়ালে–দেয়ালে লিখতেন দখলদারির বিরুদ্ধে স্লোগান।

১৯৭০–এর দশকের মাঝামাঝি বারগুতি তার ভাই ওমর ও চাচাতো ভাই ফখরির সঙ্গে মিলে ইসরায়েলি বাহিনীকে নিশানা বানাতে থাকেন। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৭৭ সালের ডিসেম্বরে বারগুতি প্রথম গ্রেপ্তার হন ও কয়েক মাস ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী থাকেন।

মুক্তি পাওয়ার কয়েক মাস পর বারগুতি যখন তার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, সেই সময় আবার ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন এবং টানা ৩৪ বছর জেলে থাকেন।

পরে এক ইসরায়েলি কর্মকর্তাকে হত্যার অভিযোগে ভাই ও চাচাতো ভাইয়ের পাশাপাশি বারগুতিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ