বুধবার, ৩০শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১৫ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

বোচাগঞ্জে শিশু পাচার ও মাদক সিন্ডিকেটের গোপন নেটওয়ার্ক ফাঁস

দিনাজপুর প্রতিনিধি: দিনাজপুরের বোচাগঞ্জে শিশু পাচার, মাদক বহন–সেবন ও দেহ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত একটি বিশাল সিন্ডিকেটের গোপন নেটওয়ার্কের তথ্য ফাঁস হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই সিন্ডিকেটটি শুধু দিনাজপুরেই নয়, দেশের বিভিন্ন জেলায় বিস্তৃত এবং দীর্ঘদিন ধরে তারা পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল।

কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন সংবাদমাধ্যম ও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মসহ ইউটিউব চ্যানেলে প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও যথেষ্ট প্রমাণ না থাকায় আইনি ব্যবস্থা নিতে দেরি হয়। তবে একাধিক মামলার আসামি হিসেবে পরিচিত আশা আক্তার অবশেষে আইনের হাতে ধরা পড়েন।

দিনাজপুর আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে বোচাগঞ্জ থানার পুলিশ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ২৪ আগস্ট টাঙ্গাইল জেলার গড়াই এলাকা থেকে আশা আক্তারসহ আরও দুইজনকে গ্রেফতার করে। পরদিন ২৫ আগস্ট তাদের বোচাগঞ্জ থানার মাধ্যমে আদালতে প্রেরণ করা হয়। বর্তমানে তারা দিনাজপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।

গ্রেফতার হওয়া তিন আসামি হলেন— ১. আশা আক্তার (পিতা লাইছুর রহমান), ২. লিপি আক্তার (পিতা আনিসুর রহমান),
৩. লাইসুর রহমান (পিতা মফির উদ্দিন)।

অভিযোগ রয়েছে, আশা আক্তার স্বামীর ঘর থেকে ১৬ লাখ ৯ হাজার ২০০ টাকা নিয়ে আত্মগোপনে যান। তিন কন্যা সন্তানকে স্বামীর কাছে ফেলে যান। তার বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ছিল এবং বোচাগঞ্জ থানায় দুইটি মামলার তদন্তধীন রয়েছে। দিনাজপুর নির্বাহী কোর্ট এমআর ১/২৫ ছয় জনের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করে ম্যাজিস্ট্রেট।

অভিযোগে আরও উল্লেখ আছে— আব্দুল আলিম, আব্দুল মালেক ওরফে চৌধুরী (পিতা মশির উদ্দিন), হাজারো অভিযোগের অভিযুক্ত নারী সদস্য মীরা কাশ্মিরি (স্বামী আঃ আলিম), ইন্দনদাতা আশরাফুল (পিতা মৃত আব্দুস সামাদ।

সকলের ঠিকানা গুচ্ছগ্রাম আবাসন, ১ নং ইউপি নাফানগর, বোচাগঞ্জ, দিনাজপুর। এবং অজ্ঞাত আরও অনেকে এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত।

সিন্ডিকেটটির নেটওয়ার্ক বিভিন্ন এলাকায় বিস্তৃত বলে অভিযোগে জানা গেছে। এর মধ্যে রয়েছে—

বোচাগঞ্জের পুরাতন গুচ্ছগ্রাম আবাসন, নাফানগর ইউনিয়ন পরিষদ, বড় সুলতানপুর। দিনাজপুর পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড,
রংপুর সাতমাথা সংলগ্ন এলাকা, কুড়িগ্রাম উপজেলা রোড সংলগ্ন এলাকা, গাইবান্ধা গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা, বগুড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকা, সিরাজগঞ্জ উপজেলা রোড সংলগ্ন এলাকা, নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা থানা ও কাশেমপুর ইউনিয়ন, কুতুবপুর ইউনিয়ন। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর পোস্ট অফিসপাড়া, ডায়নাম মার্কেট, খলিল সিন্দুর পাক দরবার, শক্তি ফাউন্ডেশন ও উপজেলা রোড সংলগ্ন এলাকা। মির্জাপুর গড়াই হাটুভাঙ্গা ও টাঙ্গাইল মডেল থানা সংলগ্ন পুরাতন বাসস্ট্যান্ড। কালিহাতী থানা সংলগ্ন এলাকা। পলাশপুর এলাকা (এক কন্যা শিশু পাচার)। ঢাকা শ্যামলী সংলগ্ন এলাকা (২ শিশুকন্যা পাচার)।সখিপুর থানা সংলগ্ন এলাকা (৩ শিশুকন্যা পাচার)। ফতুল্লা থানা, কুতুবপুর ইউনিয়ন (৪ শিশু ছেলে পাচার)।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সিন্ডিকেটটি শিশু পাচার ছাড়াও মাদক বহন ও সেবনে জড়িত। একই সঙ্গে আবাসিক হোটেল, ছাত্রাবাস, ছাত্রনিবাস ও বিভিন্ন বাড়িতে দেহ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। পুরাতন আবাসন এলাকার এক নারী কর্মীর মাধ্যমেও একাধিক অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

ভুক্তভোগী আঃ মজিদ খান জানিয়েছেন, এই সিন্ডিকেটের কারণে তার উপর বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছে।

এছাড়া, আসামিরা জেল হাজতে থাকা অবস্থায়ও সহযোগীদের মাধ্যমে তাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। ফলে সাংবাদিক পরিবার এবং ভুক্তভোগী পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

ভুক্তভোগী পরিবার, বাদী পক্ষ ও সচেতন মহল জানিয়েছেন, বোচাগঞ্জ থানা ও দিনাজপুর আদালতে এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তারা পুলিশের কাছে নিরপেক্ষ তদন্ত, আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার এবং কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছেন।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ