বুধবার, ৩০শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১৫ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রাজশাহীতে বিশেষ শিশুদের ভর্তির জন্য অতিরঞ্জিত প্রচার-প্রচারণা

পাভেল ইসলাম মিমুল, উত্তরবঙ্গ: স্পেশাল চাইল্ড বা বিশেষ শিশুদের বিভিন্ন সেবা প্রশিক্ষণ দিয়ে মানসিক ও শারীরিক বিকাশে উন্নত স্বাভাবিকভাবে জীবন-যাপনের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য রাজশাহীতে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। সরকারিভাবে একটি প্রতিষ্ঠান সহ প্রায় ৭/৮ টি প্রতিষ্ঠান আছে নগরীতে।

ড্রিম স্পেশাল চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট স্কুল নামের একটি স্কুল সম্প্রতি সময়ে রাজশাহী নগরীর উপশহর ১নং সেক্টরে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। এই স্কুলের প্রচারপত্রে বেশকিছু সেবা প্রদানের কথা লিখা আছে যা বাস্তবে স্কুলে দেওয়া হয় না।

স্কুলের পরিচালক হিসেবে দায়িত্বে আছেন মো: আশিকুর রহমান নামের একজন হাইস্কুলের শিক্ষক। মূলত স্কুলটির সার্বিক পরিচালনা করেন তার বোন শ্রাবণী। ১১/১২ জন স্পেশাল শিশু নিয়ে কার্যক্রম শুরু করলেও স্কুলটির কোনো অনুমোদন বা নিবন্ধন দেখাতে পারেনি। তবে সিটি কর্পোরেশন থেকে নিবন্ধন করবেন কিন্তু সিটি কর্পোরেশনে নিবন্ধন বন্ধ থাকায় সেটাও করা হয়নি। এমনকি ট্রেড লাইসেন্সও করা নাই।

নিবন্ধনের বিষয় নিয়ে সিটি কর্পোরেনে যোগাযোগ করা হলে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ জানান, তাদের নিবন্ধন বই শেষ হয়ে গেছে। শিগগির বই আসবে।

তারা আরও জানান, আমরা স্কুল হিসেবে নিবন্ধন দিই আলাদাভাবে স্পেশাল চাইল্ডদের স্কুলের জন্য কোনো নিবন্ধন নাই।

একটি চারতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় ভারা নিয়ে কয়েকজন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে স্পেশাল শিশুদের সেবা প্রদান করছে। এই সকল শিক্ষকদের স্পেশাল শিশুদের সেবা দেওয়ার জন্য যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন সেটাও নেই। শ্রাবণীর শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক লেভেলের সে দীর্ঘদিন বিভিন্ন স্পেশাল শিশুদের নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে সেই অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে তিনি স্কুলটি তদারকি করেন।

এই স্কুলে ভর্তির জন্য অভিবাবকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তাদের প্রচারপত্রে বেশ কিছু সেবা প্রদানের বিষয় উল্লেখ করেন তারমধ্য অকুপেশনাল থেরাপি, স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি, প্যারেন্টস কাউন্সিলিং, গ্রুপ থেরাপি, বিহেভিয়ার থেরাপি সহ বিভিন্ন সেবার কথা উল্লেখ করেন। অথচ এই সকল থেরাপির জন্য এই সকল বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেছে এমন শিক্ষক এই স্কুলে নেই।

এই সকল সেবা প্রদানের বিষয় নিয়ে রাজশাহী সমাজসেবা কার্যলয়ের প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মীর শামীম আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “এসকল সেবা প্রদানের জন্য বিএসএড স্পেশাল এডুকেশন ডিগ্রিধারী শিক্ষক থাকতে হবে। এই ডিগ্রির লোক পাওয়া মুশকিল। এই স্কুলে কিভাবে এসব সেবা দিচ্ছে এটা আমার জানা নাই। তবে সামগ্রিক ভাবে বলা যায় এটা অতিরঞ্জিত প্রচারণা ছাড়া কিছুই না।”

তিনি আরও বলেন, “থেরাপি দেওয়ার জন্য কয়েক লক্ষ টাকার মেশিনারি সামগ্রী লাগে, জায়গা লাগে। তাছাড়া সমাজসেবা অধিদপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক আবেদন করতে হয়। নিজ প্রতিষ্ঠানের নামে জমি থাকতে হবে।”

থেরাপি ও কাউন্সিলিং বিষয় নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রাকিবুজ্জামান চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “কাউন্সিলিং করার জন্য অবশ্যই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা মনোবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেছে এমন কারো কাছে যেতে হবে, তাছাড়া চিকিৎসা বা সেবা সঠিক হবে না।”

রাজশাহী সিআরপি সেন্টারের ম্যানেজার সুমা বেগম এই স্কুল ও সেবা নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চাননি। তবে তিনি বলেন, “থেরাপি দেওয়ার জন্য ঢাকা থেকে একজন থেরাপিস্ট মাসে একবার করে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে আসে। এই সেবা দেওয়ার স্পেশালিস্ট পাওয়া যায় না।”

এই স্কুলের একজন অভিবাবক বলেন, “আমার বাচ্চার স্কুলিং চলছে এই সব সেবার প্রয়োজন হয় না। তবে হ্যান্ডবিলে যেসব সেবার কথা লিখেছে এটা অতিরঞ্জিত, এগুলো না লিখলেও পারতো।”

স্কুলটির বিষয় নিয়ে রাজশাহী জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) টুকটুক তালুকদার বলেন, “প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে আমার জানা নেই, আমাদের অফিসের সমাজসেবা অফিসারকে বিষয়টি দেখতে বলবো।”

ড্রিম স্পেশাল চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট স্কুলের পরিচালকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইলে কোন কিছু বলবেন না বলে জানান।

পরবর্তীতে তার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করার জন্য মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আপনার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম আমি চলে এসেছি। পারলে আমি যে স্কুলে চাকরি করি সেখানে এসে আমার সাথে যোগাযোগ করবেন।” কথার একপর্যায়ে তিনি তাকে না জানিয়ে তার স্কুলে যাওয়া নিয়ে দোষারোপ করেন।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ