মঙ্গলবার, ২৪শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,৮ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রায়গঞ্জে উন্মুক্ত লাইব্রেরিতে ব্যাপক সাড়া

সাইদুল ইসলাম আবির,রায়গঞ্জ : প্রতিদিন নানা কাজে বিভিন্ন এলাকা থেকে উপজেলা পরিষদে আসেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। কাজের ফাঁকে সময় কাটাতে প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশে স্থাপন করা হয়েছে উন্মুক্ত লাইব্রেরি।যার নামকরণ করা হয়েছে নৈঃশব্দ্য মহাকাল।

মানুষকে বই পড়তে উদ্বুদ্ধ করতে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান’র উদ্যোগে এ লাইব্রেরি নির্মাণ করা হয়েছে। ২৯ এপ্রিল থেকে লাইব্রেরিটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।  প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশে স্থাপিত এই লাইব্রেরি এরই মধ্যে বইপ্রেমীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ছোট-বড় সব বয়সী পাঠক আসছে এই লাইব্রেরিতে। তারা নিজেদের পছন্দের বই পড়ছে। পাঠাগার থাকলেও উপজেলা পরিষদের ভেতরে উন্মুক্ত গ্রন্থাগার এটিই প্রথম। উন্মুক্ত লাইব্রেরি নৈঃশব্দ্য মহাকালে রয়েছে চার তাকওয়ালা বুকশেলফ, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন লেখকের গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ইতিহাস, সংস্কৃতি, শিশুতোষ এবং ধর্মীয়সহ প্রায় চার শতাধিক বই। অসাধারণ নির্মাণশৈলীর উন্মুক্ত এ গ্রন্থাগার দেখে মুগ্ধ হচ্ছে দর্শনার্থীরা।  পাশেই স্থাপন রয়েছে সিসি ক্যামেরা। রাতের বেলাতেও রয়েছে আলোর ব্যবস্থা। পাঠকদের জন্য ২৪ ঘণ্টা উন্মুক্ত রাখা হয়েছে এ লাইব্রেরিটি। স্থানীয় বইপ্রেমীরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ’র এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

উপজেলার ভূঁইয়াগাতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মাহবুবা খাতুন বলেন, অনেক মানুষ আছেন যারা অবসর সময়ে বই পড়তে ভালোবাসেন। কিন্তু নিয়মিত বই কিনে পড়ার সামর্থ নেই। আবার সামর্থ থাকলেও পাঠাগারে যাওয়া, পাঠাগারের সদস্য হওয়া, নিয়মিত চাঁদা দেওয়ার ঝামেলায় আর হয়ে ওঠে না। তাই ঝামেলা এড়িয়ে খুব সহজে ও বিনা মূল্যে তাদের বই পড়ার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের এ উদ্যোগটি সত্যিই প্রশাংসার দাবিদার। উপজেলা পরিষদে উন্মুক্ত লাইব্রেরি থাকায় জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

উপজেলার বাসিন্দা ড. গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘জ্ঞানার্জনের জন্য বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। বই পড়তে মানুষকে আগ্রহী করে গড়ে তুলতে প্রয়োজন পাঠাগার বা লাইব্রেরি। উন্মুক্ত এই লাইব্রেরি স্থাপনের ফলে স্থানীয়দের অবাধ জ্ঞানচর্চার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে যা প্রসংসার দাবিদার। তিনি আরও বলেন, বইপড়া ছাড়া মানব জীবনের ব্যর্থতা, শূন্যতা ও হতাশা থেকে পরিত্রাণের অন্য কোনো উপায় নেই। আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি সৃজনশীল বই (গল্পের বই) পড়ে অথবা খেলাধুলা করে সময় কাটাতো অধিকাংশ শিক্ষার্থী। এখন সে জায়গা দখল করেছে ফেসবুক, স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেট, ইউটিউব ইত্যাদি। এতে শিক্ষার্থীদের মননশীল চর্চা একেবারেই কমে গেছে। ফেসবুক, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, ইউটিউবসহ অন্য সব সামাজিক মাধ্যমগুলোর অবাধ অপব্যবহার এ প্রজন্মকে অসহনশীল, অশালীন, অমার্জিত এমনকি অসামাজিক ও হিংস্র করে তুলছে। নতুন প্রজন্মকে এ পথ থেকে ফেরানোর একটাই উপায় হলো হাতে বই তুলে দেওয়া।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, ‘মননশীলতার চর্চা করতে হলে বই পড়ার বিকল্প নেই। মানুষের মাঝে বই পড়ার প্রতি আগ্রহ জাগাতেই আমার এই প্রয়াস। এ ছাড়াও এলাকার উন্নয়ন ও যুব সমাজকে নেশার ছোবল থেকে উন্নত জাতি হিসেবে তৈরি করার জন্য ও পাশাপাশি পাঠ্যাভ্যাস যাতে যুব সমাজের মধ্যে গড়ে তোলা যায় এই চিন্তা থেকেই মূলত উন্মুক্ত লাইব্রেরিটি স্থাপন করা। লাইব্রেরিতে দেশি-বিদেশি লেখকদের চার শতাধিক বই রয়েছে। পাঠকদের জন্য ২৪ ঘণ্টা উন্মুক্ত রাখা হয়েছে এ লাইব্রেরিটি।’ বইপ্রেমী পিপাসার্ত পাঠকের তৃষ্ণা মিটিয়ে মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে নৈঃশব্দ্য মহাকাল।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *