বুধবার, ১৮ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,২রা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

রেজিস্ট্রার ছাড়া চলছে কুবির প্রশাসন

আবু শামা, কুবি প্রতিনিধি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) সাবেক রেজিস্ট্রার ড.মোহাম্মদ আবু তাহের পদত্যাগের পাঁচ মাস পার হলেও এখনো নিয়োগ হয়নি রেজিস্ট্রার। ফলে স্থবিরতা বিরাজ করছে প্রশাসনিক কার্যক্রমে। তবে স্থবিরতার বিষয়টি মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে মনে করেন উপাচার্য। গুঞ্জন রয়েছে উপাচার্য মহোদয়ের নিজের আর্শীবাদপুষ্ট লোককে রেজিস্ট্রার পদে বসাতে গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের অনেকে।

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রেজিস্ট্রার মো. মুজিবুর রহমান মজুমদারের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, দুর্নীতি অভিযোগ থাকায় পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু তাহেরকে রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) পদে নিয়োগ দেয় তৎকালীন প্রশাসন। চার বছর দায়িত্ব পালন শেষে উপাচার্যের সাথে কাজ করতে গিয়ে সমন্বয়হীনতার কারণে অস্তস্থিবোধের কথা জানিয়ে ২৩ মার্চ পদত্যাগ করে ড. তাহের। সে সময় উপাচার্য ড. মঈন দ্রুত রেজিস্ট্রার নিয়োগ দেওয়ার কথা বললেও ৫ মাসেও রেজিস্ট্রার বিহীন রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। তিনজন ডেপুটি রেজিস্ট্রার দিয়ে কোনরকমে কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ফলে প্রশাসনিক ও একাডেমিক কাজে হিমশিম খেতে হচ্ছে এমন অভিযোগ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। তবে বিষয়টি নিয়ে কর্মকর্তাদের একটি পক্ষ মনে করে জুনিয়র এক ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে সুযোগ দিতে চায় উপাচার্য। অধিকাংশ শিক্ষক বলছেন রেজিস্ট্রার যেহেতু শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে বেশী কানেক্টেড সেক্ষেত্রে শিক্ষক থেকে রেজিস্ট্রার দেয়া উচিত।

এর আগে ২০০৭ সালের স্থায়ী রেজিস্ট্রারের হিসেবে নিয়োগ পায় মুজিবুর রহমান মজুমদার। ২০১৮ সালে তাকে অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় পদসহ লাইব্রেরিতে বদলি করা হয়। বিষয়টি তার প্রতি অবিচার হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৬ এর ১৩ নং ধারায় বলা হয়েছে রেজিস্ট্রার বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক কর্মকর্তা হবেন এবং সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সচিবের দায়িত্ব পালন করিবেন (১৩-ক)। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে পূর্ণকালীন নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশনা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও ইউজিসির নির্দেশনার কোনটিই মানছে না কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

শিক্ষক নেতারা বলেছেন, শিক্ষকদের বিভিন্ন আবেদন করতে হয় রেজিস্ট্রার বরাবর। কিন্তু তিনজন ডেপুটি রেজিস্ট্রার থাকায় কার কাছে কোন আবেদন করবে সেটি নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়। অনেকসময় তারা একজন আরেকজনের দায়িত্ব বলে চালিয়ে দেয়। সেক্ষেত্রে কাজের মধ্যে বাধা সৃষ্টি হয়। একটি লম্বা প্রক্রিয়ায় আটকে পড়ে যেকোন আবেদন। রেজিস্ট্রার হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র। সেখানে রেজিস্ট্রার নিয়োগে কালক্ষেপণ দুঃখজনক। তারা অভিযোগ করেন, উপাচার্য নিজের পছন্দের লোককে রেজিস্ট্রার পদে বসাতে চায়। কিন্তু এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে অযোগ্য কাউকে বসালে সেটির বিরূপ প্রভাব পড়বে।

দফতরটির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, রেজিস্ট্রার না থাকায় কাজে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, রেজিস্ট্রারের মত গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর অনেকদিন ধরে শূন্য থাকায় কাজের ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। কোন একটি ফাইল বা চিঠি তুলতে হলে রেজিস্ট্রার দফতর হয়ে যেতে হয়। ইউজিসি থেকে রেজিস্ট্রার পদটি পূর্ণাঙ্গের কথা বলা আছে। অথচ সেখানে ৫-৬ মাস ধরে দপ্তরটি বন্ধ।

সাবেক রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আবু তাহের বলেন, রেজিস্ট্রার হল প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু। বিশ্ববিদ্যালয় আইনেও উল্লেখ আছে সকল চিঠিপত্র আদানপ্রদান হবে রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে। ইউজিসি, মন্ত্রণালয়ের সাথে মুখপাত্র হিসেবে কাজ করে রেজিস্ট্রার। শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা যেকোন আবেদন তার কাছে করবেন। এখন রেজিস্ট্রার না থাকার কারণে তারা বিভ্রান্তিতে পড়ছে কার কাছে আবেদন করবে এবং ফিডব্যাকটাও পাচ্ছে না। কিন্তু রেজিস্ট্রার না থাকলে প্রশাসন স্থবির হয়ে যায়। একদিনও রেজিস্ট্রার বিহীন বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পারে না।

ইউজিসির সদস্য প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগম বলেন, আমাদের আহ্বয়ন ছিল গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পূর্ণাঙ্গ নিয়োগ দেওয়া। আগে আমরা একটি প্রজ্ঞাপন দিয়েছি সেটির আবার রিমাইন্ডার দিব। আর একটি কনট্রাক্টচুয়াল নীতিমালা তৈরি করছি। কমিশনে পাশ হলে এক মাসের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে স্থায়ী রেজিস্ট্রার নিয়োগ দিতে হবে। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে স্থায়ী নিয়োগ দিতে বলেছি।

এ বিষয়ে কুবি উপাচার্য ড. মঈন বলেন, কোথাও কোনো স্থবিরতা নাই, কেউ যদি বলে থাকে তাহলে সেটা মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। বরং রেজিস্ট্রার থাকার সময় আমরা দেখছি যে দলাদলি, অমুক তমুক, এটি এখন নাই। এখন ফেয়ার জাজমেন্ট হচ্ছে। শিক্ষকেরা এসে আমাকে বলে আগে ইচ্ছামত ফাইল আটকে রাখতো। তার দলের লোকদের সুবিধা দিত, জিনিসটা এখন নাই। এখন আগের চেয়ে আরও দ্রুত কাজ হচ্ছে। ডেপুটি তিন জনেই ভাল কাজ করছে। এখন আমার কাজ আরও তাড়াতাড়ি হয়।’

ইউজিসির নীতিমালার বিষয়ে তিনি বলেন, ইউজিসি থেকে আমাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, আমরা বলছি শীঘ্রই নিয়োগের বিষয়টি জানিয়ে দিব। রেজিস্ট্রার সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সচিব এটি বিষয় না। যে কেউ মিটিং ডাকতে পারে, ডেপুটি রেজিস্ট্রারও ডাকতে পারে। দেখতে হবে কাজটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হচ্ছে কিনা। আমাদের সব কাজ চলছে।

যায়যায়কাল/২১আগস্ট২০২২/কেএম

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ