বুধবার, ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১৯শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

আল–জাজিরার বিশ্লেষণ

শেখ হাসিনাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে না ভারত

যায়যায়কাল ডেস্ক: ২৪ বছর বয়সী সীমা আখতার ফুটবল খেলার অনুশীলন করছিলেন। হঠাৎই এক বন্ধু এসে তাকে থামিয়ে দিয়ে একটি খবর জানালেন। বললেন, বাংলাদেশের পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীর কাছে রায়টিকে ন্যায়বিচারের এক মুহূর্ত বলে মনে হচ্ছিল।

গত বছর বিক্ষোভকারীদের ওপর শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বাহিনী দমন–পীড়ন চালায়। সে সময় সীমা আখতারের কয়েকজন বন্ধুও নিহত হন।

শেখ হাসিনা শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করেন এবং বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যান।

ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৭৮ বছর বয়সী এ নেত্রীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে বিচারকাজ চলেছে। কয়েক মাস ধরে বিচারপ্রক্রিয়া চলার পর আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। গত বছর বিক্ষোভ দমনে প্রাণঘাতী অভিযান চালানোর জন্য নির্দেশ দেওয়ার দায়ে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।

ঢাকা থেকে সীমা আখতার বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী হাসিনা ভেবেছিলেন, তাকে কখনো পরাজিত করা যাবে না। তিনি চিরদিন শাসনক্ষমতায় থাকতে পারবেন। তার মৃত্যুদণ্ড আমাদের শহীদদের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথে একটি পদক্ষেপ।’

সীমা মনে করেন, শুধু সাজা ঘোষণাই যথেষ্ট নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখতে চাই, তাকে এই ঢাকাতেই ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে।’

কিন্তু কাজটা এত সহজ নয়।

২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনা ঢাকা ছেড়ে চলে যান। বর্তমানে তিনি ভারতের আশ্রয়ে আছেন।

শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার জন্য বারবার বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারত সরকারের কাছে অনুরোধ সত্ত্বেও তাকে ফেরত দেওয়া হয়নি। বিষয়টি ১৫ মাস ধরে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনার অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে।

এখন হাসিনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ঘটনায় এই উত্তেজনা নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

যদিও ভারত হাসিনা–পরবর্তী বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী। কয়েকজন ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেছেন, তারা এমন কোনো দৃশ্য কল্পনাও করতে পারছেন না যে নয়াদিল্লি সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি করতে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে।

ঢাকায় ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী প্রশ্ন করেন, ‘নয়াদিল্লি কীভাবে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে?’

হাসিনা বাংলাদেশের দীর্ঘতম সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী শেখ মুজিবুর রহমানের বড় মেয়ে তিনি।

শেখ হাসিনা প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন ১৯৯৬ সালে। ২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর তিনি কয়েক বছর ক্ষমতার বাইরে ছিলেন। ২০০৯ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনি আবার ক্ষমতায় ফেরেন। এরপর টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিলেন শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি যে নির্বাচনগুলোতে জয়ী হয়েছেন, সেগুলো প্রায়ই বিরোধী দল বর্জন করেছে কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ পায়নি।

এ সময় হাজার হাজার মানুষকে জোরপূর্বক গুম করা হয়েছে। অনেককে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ওই সময় নির্যাতনের ঘটনা সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছিল এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের অনেককে কোনো বিচার ছাড়াই কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

হাসিনা সরকার তাদের অর্থনৈতিক সাফল্যকে সামনে এনে তার শাসনকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার একসময় বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আখ্যা দিয়েছিলেন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের মোট দেশীয় উৎপাদন (জিডিপি) দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে ভারতের তুলনায় এগিয়ে গেছে।

মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতি–নাতনিদের জন্য সরকারি চাকরিতে কোটার বিধানে সংস্কার চেয়ে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তাবাহিনীর নৃশংস দমন অভিযানের পর ওই বিক্ষোভ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে রূপ নেয়। তখন দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকায় বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের দীর্ঘদিনের মিত্রতা। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট তিনি নয়াদিল্লিতে পালিয়ে যান। নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তখন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন। এরপর মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা চলার মধ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে। শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভারতের সঙ্গে উত্তদেজনা দেখা দেয়।

গত মঙ্গলবার ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে কণ্ঠস্বর আরও জোরালো করেছে। মন্ত্রণালয় ভারতের সঙ্গে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তির কথা উল্লেখ করেছে।

তারা বলেছে, প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো নয়াদিল্লির জন্য ‘আবশ্যিক দায়িত্ব’। তারা আরও বলেছে, ভারত যদি হাসিনাকে ক্রমাগত আশ্রয় দিয়ে যায়, তাহলে তা হবে ‘অত্যন্ত অবন্ধুসুলভ পদক্ষেপ এবং ন্যায়বিচারের প্রতি অসম্মান’।

তবে ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা আল–জাজিরাকে বলেছেন, প্রত্যর্পণ চুক্তিতে একটি ব্যতিক্রমের কথা বলা আছে। ‘রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের’ ক্ষেত্রে এ ব্যতিক্রমী ধারা ব্যবহার করা যাবে।

নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক সঞ্জয় ভরধোয়াজ বলেন, ‘ভারত এই ঘটনাকে (হাসিনার মামলা) বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক শক্তিগুলোর রাজনৈতিক প্রতিশোধ হিসেবে দেখছে।’

ভরধোয়াজ আল–জাজিরাকে আরও বলেন, নয়াদিল্লি মনে করে, বর্তমানে বাংলাদেশে ‘ভারতবিরোধী শক্তি’ ক্ষমতায় আছে। ইউনূস প্রায়ই ভারতের সমালোচনা করেন। হাসিনাকে পদত্যাগে বাধ্য করা বিক্ষোভ আন্দোলনের নেতা ও অংশগ্রহণকারীরাও প্রায়ই সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন দেওয়ার জন্য নয়াদিল্লিকে দায়ী করেন।

ভরধোয়াজ মনে করেন, এসব দিক বিবেচনায় নিলে হাসিনাকে হস্তান্তর করার মানে হবে ‘ভারতবিরোধী শক্তিকে’ বৈধতা দেওয়া।

হাসিনার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, হাসিনার রায়ের বিষয়ে ভারত অবগত হয়েছে এবং তারা সব সময় সব অংশীজনের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে যুক্ত থাকবে।

‘ভারতের সমীকরণ পাল্টানো প্রয়োজন’

হাসিনার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, হাসিনার রায়ের বিষয়ে ভারত অবগত হয়েছে এবং তারা সব সময় সব অংশীজনের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে যুক্ত থাকবে।

ভারত আরও বলেছে, তারা বিশেষ করে শান্তি, গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তি এবং স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থ নিশ্চিত করার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তবু বর্তমানে নয়াদিল্লি ও ঢাকার মধ্যকার সম্পর্কটা শীতল। হাসিনার শাসনকালে যে সমৃদ্ধশীল অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, তা এখন অনাস্থার সম্পর্কে রূপ নিয়েছে।

ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেছেন, শিগগিরই এ অবস্থার পরিবর্তন হবে বলে তিনি মনে করেন না।

পিনাক চক্রবর্তী আল–জাজিরাকে বলেন, ‘এই সরকারের (বাংলাদেশ) অধীনে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের টানাপোড়েন থেকে যাবে। কারণ, তারা বারবার বলতে থাকবে, ভারত আমাদের কাছে হাসিনাকে ফেরত দিচ্ছে না।’

পিনাক চক্রবর্তী মনে করেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন সূচনা হতে পারে। যদিও নির্বাচনে হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। বড় বিরোধী দল বিএনপিসহ অন্যান্য বড় রাজনৈতিক শক্তি ভারতের সমালোচক। তবু নির্বাচিত প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করাটা ভারতের জন্য স্বস্তির হবে।

ভারতের জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বলেন, হাসিনার বিষয়ে ভারত জটিলতার মধ্যে পড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে তার প্রতি জনগণের ক্ষোভকে তারা উপেক্ষা করতে পারে না।

শ্রীরাধা আরও বলেন, স্বাভাবিকভাবেই নয়াদিল্লি চাইবে, ভবিষ্যতে কোনো না কোনোভাবে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় ফিরুক। তিনি (হাসিনা) ভারতের জন্য সব সময়ই সর্বোত্তম পছন্দ। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ভারতকে মানতে হবে, বাংলাদেশে হাসিনাকে আর কখনো সুযোগ দেওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এর পরিবর্তে ভারতের উচিত, ঢাকার অন্য রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা।

শ্রীরাধা দত্ত বলেন, বর্তমানে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু আমাদের অবশ্যই এই নির্দিষ্ট এজেন্ডা (হাসিনার প্রত্যর্পণ) ছেড়ে এগিয়ে যেতে হবে।’

শ্রীরাধা দত্ত মনে করেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যদি আর মিত্রতা না–ও থাকে, তবু তাদের একে অপরের প্রতি শিষ্টাচার বজায় রাখা প্রয়োজন।’

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে ৪ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ সীমানা রয়েছে। চীনের পর ভারতই বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। সত্যিকার অর্থে, উত্তেজনার মধ্যেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে ভারত বলে আসছে, তার সম্পর্ক বাংলাদেশের সঙ্গে। কোনো নির্দিষ্ট দল বা নেতার সঙ্গে নয়। তবু ভারতের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কটা আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিল।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করেছিল ভারত।

ভারতের সঙ্গে হাসিনার ব্যক্তিগত সম্পর্কটাও পুরোনো। ১৯৭৫ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে তাঁর বাবা শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হয়। ওই সময় হাসিনা এবং তাঁর ছোট বোন রেহানা জার্মানিতে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।

ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তখন তাদের আশ্রয় দেন। হাসিনা নয়াদিল্লিতে তাঁর স্বামী এম এ ওয়াজেদ, সন্তান এবং রেহানার সঙ্গে একাধিক বাড়িতে ছিলেন এবং অল ইন্ডিয়া রেডিওর বাংলা বিভাগে খণ্ডকালীন কাজও করেছেন।

ছয় বছর নির্বাসনে থাকার পর হাসিনা তাঁর বাবার দলকে নেতৃত্ব দিতে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তিনি ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৯ সালে তাঁর দ্বিতীয় এবং দীর্ঘ সময়ের শাসনক্ষমতা শুরু হয়।

শেখ হাসিনার শাসনকালে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক সমৃদ্ধ হয়েছিল। যদিও তাকে এর জন্য দেশের ভেতরে সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছিল। বিশেষ করে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ‘অন্যায্য বলে বিবেচিত’ চুক্তি করার কারণে তিনি সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন।

ক্ষমতাচ্যুত হয়ে যখন হাসিনার পালানোর প্রয়োজন হলো, তখন তিনি কোথায় আশ্রয় চাইতে পারেন, তা নিয়ে তেমন একটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল না বললেই চলে। নয়াদিল্লিতে পৌঁছানোর পর ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল তাকে সাদরে গ্রহণ করেন।

ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক চক্রবর্তী বলেন, ‘এবার আমরা হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানাইনি। একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তাকে স্বাভাবিকভাবে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন। কারণ তিনি তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ভারত তাকে থাকতে দিয়েছিল। কারণ, সেটা ছাড়া আর বিকল্প কী ছিল?’

পিনাক আরও বলেন, ‘তিনি (হাসিনা) কি বাংলাদেশে ফিরে যেতে পারবেন, বিশেষ করে এখন যখন তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে? তিনি ভারতের প্রতি বন্ধুত্বসুলভ ছিলেন এবং এ ব্যাপারে ভারতের নৈতিক অবস্থান নেওয়া প্রয়োজন।’

ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক দক্ষিণ এশীয় বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ভারতে হাসিনার উপস্থিতিটা ‘দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মধ্যে কাঁটা হয়ে থাকবে।’ তবে এর মধ্য দিয়ে ভারত তার মিত্রদের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার প্রতিশ্রুতি পালন করতে সক্ষম হয়েছে।

তবে কুগেলম্যান মনে করেন, এমন পদক্ষেপ নয়াদিল্লির জন্য দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক সুবিধাও নিয়ে আসতে পারে।

কুগেলম্যানের মতে, হাসিনার রাজনৈতিক প্রভাব এবং তার দল আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করা যায় না। হাসিনা একটি পুরোনো পরিবারকেন্দ্রিক দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাসে দেখা যায়, এমন দলগুলো সাময়িকভাবে কঠিন সময়ের মধ্যে পড়ে, কিন্তু তারা পুরোপুরি বিলীন হয়ে যায় না।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ