মঙ্গলবার, ২৪শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,৮ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সাতশত টাকার পুঁজিতে রাবির সাত শিক্ষার্থীর ‘সাধের বাজার’ 

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, রাবি:দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে বাজারে গিয়ে বিপাকে পড়েননি এমন মানুষ কমই আছেন। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি দুর করতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাত শিক্ষার্থী মিলে তৈরি করেছেন ” সাধের বাজার”। মোবাইল ফোনে অর্ডার করলেই রান্নার প্রয়োজনীয় বাজার রুমে পৌঁছে দিচ্ছেন তাঁরা।

এই সাত উদ্যোক্তারা হলেন- আবদুল্লাহ আল মামুন, রাব্বি হাসান রাজন, রিফাত আলী, আরিফ হোসেন, আবু সুফিয়ান, শাহীন আলম ও সুদিপ্ত কুমার সরকার। তাঁরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

জানা যায়, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করেই তাদের এই উদ্যোগ। মাত্র ৭০০ টাকার মূলধন নিয়ে ‘সাধের বাজার’ এর যাত্রা শুরু হয়। অল্পদিনে সাধের বাজার সাড়াও পেয়েছে অনেক। ফেসবুক পেজের মাধ্যমে অনায়াসে অর্ডার করতে পারবেন যে কেউ। প্রত্যেকে হল অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে ভোক্তার হাতে অর্ডারকৃত পণ্য পৌঁছে দেওয়াসহ ক্যাম্পাসে সম্পূর্ণ ফ্রি ডেলিভারিও দিয়ে থাকেন তাঁরা।

শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে তাঁরা তিন ধরনের প্যাকেজ চালু করেছেন। মুরগির মাংসের প্যাকেজ, মাছের প্যাকেজ, স্পেশাল খিচুড়ির প্যাকেজ। প্রতিটি প্যাকেজে রয়েছে রান্নার যাবতীয় উপকরণ। এছাড়াও সর্বনিম্ন ২০০ গ্রাম মুরগির মাংস, ২৫০ গ্রাম গরুর মাংস, ৩ টুকরো মাছসহ যেকোনো পরিমাণ কাচা সবজি পাওয়া যায় তাদের কাছে। তাঁরা দিনে দুইবার বাজার করে। সেই সাথে  সবকিছু ফ্রেশ ডেলিভারি দেন। বর্তমানে রমজান উপলক্ষে দুপুর ১টার আগে অর্ডার নেন এবং বিকেল চারটার পরে ডেলিভারি দেন এই উদ্যোক্তারা।

উদ্যোগ সম্পর্কে শাহীন আলম বলেন, ‘রাজশাহীতে টিউশন পাওয়া খুব কষ্টকর। বলতে গেলে, পাওয়াই যায় না। তাই বিকল্প কিছু করার চিন্তা করছিলাম। অনেকদিন আগে থেকেই আমাদের মধ্যে এসব নিয়ে কথা হচ্ছিল। শুরুর অনেক আগে থেকে আমরা বাজার যাচাই, গবেষণা, জরিপ করেছি। সবক্ষেত্রে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। মাত্র ৭০০ টাকার মূলধন নিয়ে আমাদের ‘সাধের বাজার’ এর যাত্রা শুরু হয়। মাত্র ১০ দিনে আমরা দুই হাজার মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি’।

কিভাবে তাঁরা উদ্যোক্তাটা গ্রহণ করলেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে সুদিপ্ত কুমার সরকার বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত ডাইনিং-ক্যান্টিনের একই মেন্যুর খাবার খেতে খেতে অতিষ্ঠ। মাঝেমধ্যে ইচ্ছা করত, রান্না করে খাই। কিন্তু বাজার গেলে বাধে যত বিপত্তি। এক বেলার রান্নার জন্য ২০০ গ্রাম মুরগি, ৩-৪ টুকরো মাছ, ১০ টাকার তেল, ৫ টাকার আদা-রসুন, ৫ টাকার পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে দোকানির চোখ রাঙানো দেখতে হয়। তাছাড়া একবেলা রান্নার জন্য আস্ত মুরগি কেনাও সম্ভব হয় না। এই সমস্যা শুধু আমার না অধিকাংশ শিক্ষার্থীর। শিক্ষার্থী ও নিজের সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজতে লাগলাম। তখন মাথায় আসে যদি একবেলা রান্নার প্রয়োজনীয় প্যাকেজ করা যায় তাহলে কেমন হয়। সেই থেকে যাত্রা শুরু সাধের বাজারের। এভাবে নিজেদের কিছু রোজগারের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম হয়েছি’।  

‘সাধের বাজার’ নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে রাব্বী হাসান রাজন বলেন, ‘সাধের বাজার এখন শুধু সবজি, মাছ এবং মাংস পৌঁছে দিচ্ছে। ধীরে ধীরে এর প্রসার বাড়তে থাকবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে গ্রীষ্মকালীন ফল যেমন রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর আম ও দিনাজপুরের লিচু সরবরাহ করবে’।

‘সাধের বাজারের’ ক্রেতা ক্রপসাইন্স এন্ড টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী তাহিয়া সিদ্দিকা ঈশফা বলেন, ‘তাদের থেকে আমি ভালো সেবা পাচ্ছি। এখন নিয়মিত ওডার করে থাকি। মাছ-মাংস, শাকসবজি সবকিছুই টাটকা দিচ্ছে। বিশেষ করে সব থেকে বেশি ভালো লাগছে যে, আমার যেটুকু প্রয়োজন হচ্ছে সেইটুকু নিতে পারছি। বাড়তি নিতে হচ্ছে না। ফলে অনেক টাকাও বেঁচে যাচ্ছে’। 

এবিষয়ে মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘তাদের উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই। মাত্র দ্বিতীয় বর্ষেই তাঁরা সুন্দর একটি উদ্যোগ নিয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি দূর হচ্ছে। পাশাপাশি তাঁদের কিছুটা অর্থ উপার্জন হচ্ছে। এতে করে তাঁরা পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যেতে পারবে। এই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ভবিষ্যতে  আরও ভালো করবে বলেও আশা পোষণ করেন তিনি’।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *