শনিবার, ১৪ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,২৮শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

অনিয়মে চলছে মাদরাসা: অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

ফয়সাল কবির, (লক্ষ্মীপুর) : নানান অনিয়মে চলছে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার রতনপুর মহিলা দাখিল মাদরাসা। বিভিন্ন পদে চাকুরি দেওয়ার নামে টাকা আত্নসাতের অভিযোগ মাদরাসা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এছাড়া নিয়োগ না দিয়ে ১৩বছর ভারপ্রাপ্ত সুপার দিয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটি।

এদিকে ম্যানেজিং কমিটির যথাযথ তদারকি না থাকায় উন্নতি হচ্ছে না মাদরাসাটির। পিছিয়ে পড়েছে পড়ালেখা, এ নিয়ে ক্ষুব্ধ অভিভাবক ও স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মাদরাসাটির সুপার পদে দীর্ঘ ১৩বছর কোন নিয়োগ না দিয়ে ভারপ্রাপ্ত সুপার তাজুল ইসলাম নানান অনিয়ম করে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের কথা চিন্তা না করে নিজের উন্নয়নে ব্যস্ত তিনি। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটিতে ঠিক মতো ক্লাস হয় না, শিক্ষার মান খুবই কম। শিক্ষকরা কোন নিয়মই মানছেন না। ভারপ্রাপ্ত সুপারের বিরুদ্ধে রয়েছে প্রতিষ্ঠানের টাকা আত্নসাতেরও অভিযোগ।

এদিকে নৈশপ্রহরী, আয়া, নিরাপত্তাকর্মীসহ কয়েকটি পদে নিয়োগের নামে টাকা আত্নসাতের অভিযোগ ভারপ্রাপ্ত সুপার তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে। প্রত্যেকের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা করে নিয়ে তাদের চাকুরিও দিচ্ছে না, টাকাও ফেরত দিচ্ছে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগিদের। নৈশপ্রহরী পদে ৪ বছর আগে ২ লাখ টাকা দেন করেছে যুবক আবদুল মান্নান। ভারপ্রাপ্ত সুপার করেছেন তার চাকুরী হবে। কিন্তু কয়েকবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রদান করেও কোন নিয়োগ হয়নি। এমনকি পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির টাকাও তাদের কাছ থেকে নেওয়া হতো। এমন আরেকজন ভুক্তভোগি রাজমেস্ত্রী মো. ফারভেজ হোসেন ভূঁইয়া। তিনি আয়া পদে তার স্ত্রী সাথী আক্তারের জন্য ২লাখ টাকা প্রদান করেন। কিন্তু আজও তাদের চাকুরী হয় নি। ধার দেনা করে টাকা দিয়ে এখন সে টাকাও পাচ্ছেন না। এখন তারা চাকুরি চান, না হয় টাকা ফেরত চান।

অন্যদিকে অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক আশেক এলাহী মুনিরের বিরুদ্ধে। তার জোগসাজোসে প্রতিষ্ঠানে এসব অনিয়ম হয়। ভারপ্রাপ্ত সুপারকে নানান কু-পরামর্শ দিয়েই অনিয়ম করে বেড়াচ্ছেন তিনি। ঠিক মতো মাদরাসায় সময় না দিয়ে নিজের প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান মান্দারি ফালাহিয়া দাখিল মাদরাসায় সময় দেন তিনি। এছাড়া শিক্ষার্থীদের ভুলবাল বুঝিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তার প্রতিষ্ঠানে। অন্যদিকে মান্দারি বাজারে করছেন জামা কাপড়ের ব্যবসা।


এসব বিষয়ে আশেক এলাহী মুনির বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা। কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

ভারপ্রাপ্ত সুপার ও শিক্ষকদের এসব অনিয়মের কারণে দিন দিন শিক্ষার্থীদের লেখা পড়া মান কমে যাচ্ছে রতনপুর মহিলা দাখিল মাদরাসার।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, আমাদের মাদরাসাটি মহিলা মাদরাসা। কিন্তু সে অনুযায়ী আমরা তেমন সহযোগিতা পাই না। আমাদের জন্য নেই ওয়াশরুম, নেই কমনরুম। ভালো কোন ভবন নেই। বৃষ্টি আসলে ক্লাসে পানি পড়ে। ক্লাসে পর্যাপ্ত বসার ব্যবস্থা নেই। এছাড়া নেই নিরাপত্তা বেষ্টুনি। ফলে সহজেই বখাটেরা মাদরাসায় প্রবেশ করে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত সুপার তাজুল ইসলাম বলেন, নিয়োগের টাকা আমি নেইনি। এটি প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে নেওয়া হয়েছে। আমরা কয়েকবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি, কিন্তু আমাদের কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় নিয়োগ দিতে পারিনি। আশা করি এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।


এছাড়া ১৩ বছর ভারপ্রাপ্ত সুপার পদে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক কিছু জটিলতা ছিলো। সেগুলো সমাধান হয়েছে। অচিরেই সুপার পদে নিয়োগ হবে। অন্যদিকে মাদরাসাটির শিক্ষক আশেক এলাহী মুনিরের অনিয়মের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন অভিভাবক যদি আমার এখান থেকে বাচ্চা অন্য জায়গায় নিয়ে যায় সেটা তাদের বিষয়, এটা আমাদের দেখার বিষয় না। তারপরও তাকে কয়েকবার সতর্ক করা হয়েছে।

সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবু তালেব বলেন, টাকা নিয়ে এমন কোন নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ নেই। নিয়োগ দিবেন ডিজির প্রতিনিধি। এবিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া সুপার কেন নিয়োগ হচ্ছে না বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *