সোমবার, ২৮শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১৩ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

অনেক নিরপরাধ মানুষ বছরের পর বছর কারাগারে: হেফাজত ইসলামের আমির

যায়যায়কাল প্রতিবেদক: বিচারকার্য সম্পাদনে দীর্ঘসূত্রতার কারণে অনেক নিরপরাধ মানুষও বছরের পর বছর কারাগারে বন্দী থাকেন। এটি অমানবিক ও শরিয়তবিরোধী। এর প্রভাব শুধু ওই ব্যক্তির ওপর পড়ে না, তার পরিবারের ওপরও পড়ে।

শনিবার রাতে ‘মাযলুম কারাবন্দীদের মুক্তিতে উম্মাহর করণীয়’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর লিখিত বক্তব্যে এসব কথা উঠে আসে।

রাজধানীর তোপখানা রোডের বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) মিলনায়তনে এ সেমিনারের আয়োজন করে বৈষম্যহীন কারামুক্তি আন্দোলন।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার কথা ছিল হেফাজতের আমির ও বৈষম্যহীন কারামুক্তি আন্দোলনের প্রধান উপদেষ্টা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর। তবে তিনি বার্ধক্যের কারণে উপস্থিত থাকতে পারেননি বলে আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

আমিরের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান হেফাজতের নায়েবে আমির মুহিউদ্দীন রব্বানী।

এতে বলা হয়, আদালত কোনো বন্দীকে জামিন দিলে সেটি অবিলম্বে কার্যকর করা উচিত। কিন্তু প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে জেলগেটে জামিনপ্রাপ্ত বন্দীকে আটকে রাখা শুধু আদালত অবমাননাই নয়, ইসলামের দৃষ্টিতে স্পষ্ট জুলুম।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, কারাগারের ভেতরে অনেক বন্দী রাজনৈতিক বা ধর্মীয় কারণে বৈষম্যের শিকার হন, এটি ইসলামী ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের পরিপন্থী। এ অবস্থার পরিবর্তন জরুরি। চলমান সংবিধান সংস্কারে এই বিষয়গুলো সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করা অপরিহার্য।

এর আগে বক্তব্য দেন হেফাজতের নায়েবে আমির মাওলানা মুহিউদ্দীন রব্বানী।

তখন তিনি বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পরও ওলামায়ে কেরাম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। তাদের মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের মুক্তি না দিলে আলেম-ওলামারা প্রধান উপদেষ্টার বিরুদ্ধে মাঠে নামতে বাধ্য হবেন।

সেমিনারে প্রধান আলোচক ছিলেন বৈষম্যহীন কারামুক্তি আন্দোলনের উপদেষ্টা ও হেফাজত নেতা মুফতি হারুন ইজহার।

তিনি তার বক্তব্যে বলেন, বিএনপি নেতা লুৎফুজ্জামান বাবর যে মামলার আসামি, একই মামলায় ওলামায়ে কেরামও আসামি আছেন। কিন্তু বিএনপি নেতা কারাগার থেকে বের হতে পারলেও ওলামায়ে কেরামের অনেকেই বের হতে পারেননি। একইভাবে জামায়াতের নেতারাও বের হয়েছেন। কিন্তু কাউকে খুন না করেও ওলামায়ে কেরাম কারাগারে আছেন। অনতিবিলম্বে তাদের মুক্তি দিতে হবে।

মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানী বলেন, আশেকে রাসুল যারা কারাগারে আছেন, তাদের মুক্তি দিতে হবে। নইলে এমন আন্দোলন গড়ে তোলা হবে, কারাগারের গেট খুলে, ইট খুলে সবাইকে মুক্ত করা হবে। এ জন্য তৌহিদি জনতাকেও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির আবু জাফর কাসেমী বলেন, এখনো হাজার হাজার ওলামায়ে কেরাম কারাগারে বন্দী রয়েছেন। তাদের অতিসত্বর মুক্তি দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বৈষম্যহীন কারামুক্তি আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সেমিনারের মধ্যভাগে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। সেখানে গত বছরের আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানের পর বৈষম্যহীন কারামুক্তি আন্দোলনের সৃষ্টি এবং এখন পর্যন্ত যেসব কার্যক্রম পরিচালনা করেছে, তার বিবরণ তুলে ধরা হয়।

এর আগে সেমিনারে বক্তব্য দেন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তাদের সংগঠন ‘রাওয়া’র সভাপতি কর্নেল (অব.) আবদুল হক।

তিনি বলেন, বিপ্লবের পর যেনতেন একটা সরকার গঠনের ফলে যারা জুলুমের শিকার, তারা সুবিচার পাননি। যাদের বিনা অপরাধে আটক করে রাখা হয়েছে, তাদের মুক্তি দিতে হবে।

খেলাফত মজলিশের নায়েবে আমির আহমদ আলী কাসেমী বলেন, জঙ্গি মামলায় অনেক ওলামায়ে কেরামকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ১০ বছর, ১৫ বছর অনেকে কারাগারে আছেন। আবার নতুন করে অনেককে পাঠানো হয়েছে। তাদের মুক্তি দিতে হবে।

সেমিনারে সূচনা বক্তব্য দেন বৈষম্যহীন কারামুক্তি আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক মুহাম্মদ ইসহাক খান।

সংগঠনটির সভাপতি মীর ইদরীস নদভীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মুফতি শফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির আবদুল কাইয়ুম সোবহানী, সহপ্রচার সম্পাদক মুফতি শরিফউল্লাহ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান হামিদী, লেখক খালেদ সাইফুল্লাহ আড়াইহাজারী, লেখক ও প্রকাশক আবু তাসমিয়া আহমদ রফিক, ব্লগার শফিউর রহমান ফারাবী, ইন্তিফাদা বাংলাদেশ নামের প্ল্যাটফর্মের প্রেসিডিয়াম সদস্য মেহেদী হাসান।

আরও বক্তব্য দেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আশরাফ উজ জামান, আইনজীবী মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন, আমার দেশ পত্রিকার সাংবাদিক আবু সুফিয়ান, প্রকৌশলী মাসরুর চৌধুরী, জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সোহেল রানা, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশের (পুসাব) নির্বাহী সদস্য সাকিন শাবাব প্রমুখ।

 

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ