
বিশেষ প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার সলঙ্গা প্রাণিসম্পদ উপকেন্দ্রের অবকাঠামো এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার বেহাল দশা। দীর্ঘদিন ধরে এই প্রাণিসম্পদ উপ কেন্দ্র (কৃত্রিম প্রজনন পয়েন্ট) এর চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকার হাজার হাজার হাঁস-মুরগী, ছাগল-ভেড়া ও গবাদিপশু খামারীরা। এসব দেখার যেন কেই নেই।
নানা সমস্যায় জর্জরিত একমাত্র প্রাণি সম্পদ উপকেন্দ্র ও কৃত্রিম প্রজনন পয়েন্ট এটি। নানামুখী অব্যবস্থাপনায় বন্ধের মুখে এই সেবা কেন্দ্রেটি। প্রায় ২৬ বছর আগে নির্মিত এ কেন্দ্রটির অবস্থা একেবারেই নাজুক। দূর থেকে দেখে মনে হয় এটি ভুতুড়ের কারখানা।
উন্নত জাতের গবাদি পশুর বিস্তারে ও খামারীদের সেবাদানে সলঙ্গায় স্থাপিত হয় প্রাণি সম্পদ উপকেন্দ্র ও কৃত্রিম প্রজনন পয়েন্ট। এ কেন্দ্র থেকে উন্নত জাতের গরুর সিমেন (বীর্য) সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে কৃষক ও খামারীদের মাঝে বিতরণ করা হয়।
সরেজমিনে প্রাণিসম্পদ উপকেন্দ্রটিতে গিয়ে দেখা গেছে. জরাজীর্ণ অবস্থায় সেখানে রয়েছে কেটে রাখা বিভিন্ন গাছের গুল ও বাসা বাড়ির আবাপত্রসহ বিভিন্ন জালানি, কতদিন ধরে কেন্দ্রটি খোলা হয় না তা অনেকেই বলতে পারে নাই। রায়গঞ্জ উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের একটি সাব-প্রাণীসম্পদ কল্যাণ কেন্দ্র সলঙ্গা থাকলেও তা কোনো কাজে আসছে না সাধারণ খামারিদের। এই কেন্দ্রটির অবকাঠামো, প্রয়োজনীয় উপকরণ, ঔষধ ও জনবল সংকটের কারণেই দিন দিন নিমজ্জিত হয়ে পড়ছে সরকারি এই প্রাণি সম্পদ উপকেন্দ্রটি।
বর্তমান সরকার দেশকে দারিদ্র্য মুক্ত করতে বিভিন্ন উপায়ে যেমন, ছাগল-ভেড়া পালন, হাঁস- মুরগীর খামার, গবাদী পশু পালনে মানুষদের আগ্রহী করছেন ও প্রশিক্ষন দিচ্ছে, ব্যাংক এবং এনজিওর মাধ্যমে ঋণ দিচ্ছে, ঠিক সেই সময়ে সরকারি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অসচেতনা ও অবহেলায় যেমন আগ্রহ হারাতে বসেছে পশু পালনকারীরা, তেমনি নষ্ট হচ্ছে প্রাণিসম্পদ উপ কেন্দ্রের (কৃত্রিম প্রজনন পয়েন্ট) ভবন ও সরঞ্জামাদি। কেন্দ্রটি না খোলায় এলাকার কিছু মানুষ ভবনটিকে নিজের সম্পদ মনে করে দখল করে ব্যবহার করছেন। প্রয়োজনীয় জনবল ও উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তরের দেখভালের অভাবে এই প্রাণিসম্পদ কল্যাণ কেন্দ্রটির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
এলাকাবাসী জানায়, এক সময় উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তাদের তত্বাবধানে এই কেন্দ্রে প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০ জন বিভিন্ন সেবা যেমন কৃত্তিম প্রজনন, ছাগলের ঠান্ডা কাশিসহ ভ্যাক্সিন দিতে আসতো। বর্তমানে প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আসার পর থেকে কেন্দ্রটিতে তদারকি না করায় যথাযত চিকিৎসা না পেয়ে পশু-পাখি নিয়ে ছুটে চলছে গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তারদের কাছে। আর তাদের শরণাপন্ন হয়েই এলাকার চাষি ও খামারিদের অনেকই প্রতারিত হচ্ছেন।
খামারি ফারুক হোসেন বলেন, আগে এই কেন্দ্র থেকে গবাদিপশুদের চিকিৎসা সহ বিভিন্ন পরামর্শ নিতাম কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে এটি বন্ধ থাকায় সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে খামারিরা।
স্থানী সচেতন মহল জানান, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহেলা, জনবল ও প্রাণীসম্পদ দপ্তরের দেখভালের অভাবে এটির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। নষ্ট হচ্ছে প্রাণিসম্পদ উপ কেন্দ্রের ভবন ও সরঞ্জামাদি। কেন্দ্রটি না খোলায় এলাকার মানুষেরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এ বিষয়ে সলঙ্গা প্রাণি সম্পদ উপকেন্দ্রের এ আই টেকনিশিয়ান মো: আফজাল হোসেন নিয়মিত অফিসে আসেন না স্বীকার করে প্রতিবেদককে বলেন, অফিসের সামনে অনেকে বড় বড় গাছের গুল। অফিসের আসবাপত্র পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। অফিসে যাওয়াই যায় না।
তিনি আরো বলেন, আমি গ্রামে গ্রামে থাকি যদিও আমার বাসা সলঙ্গা বাজারের ভিতর। অফিসে ফোন নাম্বার লেখা আছে কোন খামারী এসে ফোন দিলে যেখানেই থাকি সাথে সাথে চলে আসি। তবে একটু বৃষ্টি হলে অফিস কক্ষে পানি উঠে একাকার হয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এ কেন্দ্রে কর্মরত উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো: জাহাঙ্গীর আলম মুন্নু’র কথা জানতে চাইলে এ আই টেকনিশিয়ান মো: আফজাল হোসেন বলেন, এক সময় তিনি নিয়মিত আসলেও এখন অনিয়মিতভাবে অফিসে আসেন।
এ কেন্দ্রে কর্মরত উপ সহকারী প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা মো: জাহাঙ্গীর আলম মুন্নু বলেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে জনবল সংকট থাকায় গত ৩ বছর ধরে আমি প্রাণিসম্পদ উপকেন্দ্রে যায় না। তবে পাঙ্গাসী ইউনিয়ন ও সোনাখাড়া ইউনিয়নের প্রাণিসম্পদ উপকেন্দ্রের ও একই অবস্থা বলে জানালেন তিনি। রায়গঞ্জ উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস সূত্রে জানাগেছে উপজেলায় ১৪ জন এ আই টেকনিশিয়ান রয়েছে। এই এআই টেকনিশিয়ানগণ কোথায় কাজ করেন তা বলতে পারে না কেউ।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো: ওয়ালী-উল-ইসলাম বলেন, উপকেন্দ্র গুলোতে বর্তমানে যারা কাজ করেন তারা মুলত স্বেচ্ছায় কাজ করেন । উপকেন্দ্রগুলোতে রাজস্ব খাতে লোক না নাই। তবে যারা স্বেচ্ছায় কাজ করছে তাদের যে যেভাবে ডাকছে সেভাবেই কাজ করার চেষ্টা করছে।












