বৃহস্পতিবার, ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আখাউড়ায় প্রদীপ প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে হানাদার মুক্ত দিবসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু

মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান সাগর, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) উপজেলা প্রতিনিধি: ৬ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালে এই দিনে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর কবল থেকে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে আখাউড়া মুক্ত হয়।

এ উপলক্ষে সোমবার (৫ ডিসেম্বর)সন্ধ্যায় পৌর শহরের সড়ক বাজার অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক পৌর মুক্তমঞ্চে প্রদীপ প্রজ্বলন করা হয়,প্রদীপ প্রজ্জলনের সময় এক মিনিট বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হয়।
স্থানীয় লোকজন উৎসব মুখর পরিবেশে এ দৃশ্য দেখেন। মুহূর্তের মধ্যে মুক্তমঞ্চের চারদিকে লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে। তাছাড়া এদিকে দিনটিকে স্মরণ করে রাখতে উপজেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড দুইদিন ব্যাপী নানা কর্মসূচি হাতে নেন।

সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সৈয়দ জামশেদ শাহ এর সভাপতিত্বে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অংগ্যজাই মারমা, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আখাউড়া পৌরসভার মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল, অতিথিদের মধ্যে আরোও উপস্থিত ছিলেন মো. বাহার মিয়া মালদার, আখাউড়া উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল মমিন বাবুল, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান স্বাধীন, সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক খাদেম দ্বীমান,যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক যুবরাজ শাহ্ রাসেল, আবুল বাশার, আরিফুল ইসলাম, ও সাবেক আমরা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমিটির আহ্বায়ক আনিছ, অর্থ সম্পাদক আরিফুর রহমান, সহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

তাছাড়া মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় স্মৃতিসৌধে পুস্পমাল্য অর্পণ, আনন্দ র‌্যালি, পোস্ট অফিসের স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।

১৯৭১ সালে ৭ মার্চ বাঙালি জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের পর থেকে আখাউড়া উপজেলার সর্বস্তরের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। মুক্তিযোদ্ধা পরিচালনার জন্য দেশ প্রেমিক, বুদ্ধিজীবী, ছাত্র, যুবক, শ্রমিকনেতা কর্মীসহ সর্বস্তরের জনগণের উপস্থিতিতে আখাউড়ায় গঠন করা হয় সর্ব দলীয় সংগ্রাম পরিষদ। ওই পরিষদের নেতৃত্বে ছিলেন কাজী ওয়াহেদুর রহমান লিলু মিয়া।

এস ফোর্সের অধিনায়ক লে. কর্নেল সফিউল্লার তত্বাবধানে এ যুদ্ধ চলতে থাকে। ৩০ নভেম্বর ও ১লা ডিসেম্বর আখাউড়া উত্তরে সীমান্তবর্তী আজমপুর, রাজাপুর, সিঙ্গারবিল, মিরাশানি এলাকায় আধুনিক অস্ত্রে সস্ত্রে পাক বাহিনীর সঙ্গে মুক্তি বাহিনীর যুদ্ধ হয়। টানা ৩ দিন চলে এ যুদ্ধ।

এ যুদ্ধ অন্তত ৩৫ পাক সেনা নিহত হয়। বন্দী করা হয় ৫ জনকে। মুক্তি বাহিনীর নায়েক সুবেদার আশরাফ আলী খান এ সময় শহীদ হন। আহত হয় অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মারমুখি আক্রমণে পাক বাহিনী দাঁড়াতে পাড়েনি। তারা তখন পিছু হটতে লাগলেন। ৩ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিবাহিনীরা আজমপুর অবস্থান নিলে সেখানেও অভিরাম যুদ্ধ হয়। ওই যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর ১১ জন সৈন্য নিহত হয়।

মুক্তিবাহিনীর ২ সিপাহী ও ১ নায়েক সুবেদার শহীদ হন। ৪ ও ৫ ডিসেম্বর যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর প্রায় ১৭০ জন সৈন্য নিহত হয়। তখন গোটা আখাউড়া এলাকা মুক্তিবাহিনীর দখলে চলে আসে। অভিরাম যুদ্ধের পর ৬ ই ডিসেম্বর আখাউড়া পুরোপুরি হানাদার মুক্ত হয়।

তাছাড়া আখাউড়া থানা খণ্ড যুদ্ধের উল্লেখযোগ্য স্থানগুলো হলো খরমপুর, দেবগ্রাম, তারাগন, নারায়ণপুর,নয়াদিল, দরুইন, টানমান্দাইল, গঙ্গাসাগর, কর্নেল বাজার, মনিয়ন্দসহ বিভিন্ন স্থান রয়েছে। আখাউড়ার মাটিতে রয়েছে অসংখ্য গণ কবর। বীর শেষ্ঠ মোস্তফা কামাল আখাউড়ার মাটিতেই শহীদ হন। তাছাড়া বীর উত্তম শহীদ সাফিলের জম্ম আখাউড়ার মাটিতেই।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on tumblr
Tumblr
Share on telegram
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ